বিসুকটের টিনে কী ছিল

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

কুলাল+ ঠক্ করে ‘কৌলালক’ শব্দটি পাচ্ছি৷ শব্দটির  অর্থ হল চীনে মাটির  বাসনপত্র ও চীনে মাটির অন্যান্য পণ্য যেমন ফুলদানি, পিকদানি, সুর্র্মদানি প্রভৃতি৷

সে আজ অনেকদিন হয়ে গেল৷ বাংলা সাহিত্যে কেদার বাঁড়ুজ্যে মশায় তখন সুপ্রতিষ্ঠিত৷  শুধু উঠতি সাহিত্যিকেরাই নয়, প্রতিষ্ঠিত  সাহিত্যিকেরাও  কেউ কেউ তাকে ‘দাদামশায়’ কেউবা ‘দাদু’ বলে ডাকতেন৷ তাঁর প্রতিভা বেশী ফুটে উঠেছিল হাস্যরসের গল্পে৷  তবে সাহিত্যের অন্যান্য শাখাকেও  তিনি  ছোননি  এমন কথা বলা চলে না ৷  এহেন কেদার বাঁড়ুজ্যে  মশায় একবার নাকি  চীনে গেছলেন৷ তিনি যখন চীনে যান তখন তার মুড়িভাজার খোলা কোচি, পিটুলি গোলা, হলুদবাটা,  শিল-নোড়া, ডেঁয়ো ঢাকনা, নারকোল  মালা, রঙীন  ক্ষুরি রঙবেরঙের চ্যাঁচারিতে তৈরী বাঁশের কুলো তো ছিলই,  আর ছিল একটি সুদৃশ্য বিসুকটের টিন-ভর্ত্তি কি যেন একটা জিনিস৷ বাংলার নামীনামী-উঠতি বাড়তি-পড়তি সাহিত্যিকেরা দলে দলে জাহাজ ঘাটায়  এসেছিলেন তাঁকে  দিায়- অভিনন্দন  জানাতে৷ বাঁড়ুজ্যে মশায় সবাইকার সঙ্গে হাসি মুখে কথা বললেন, শ্রিম্ভালাপ করলেন৷ হঠাৎ একটি উঠতি বয়সের ছোকরা সাহিত্যিক বিসুকটের টিনটা দেখিয়ে বললেন---দাদু বিসুকটতো চীনে অনেক পাওয়া যায়...সস্তা মচমচে ও মুখরোচকও৷ অমন মুখরোচক বিষুকট এদেশে পাওয়াই যায় না৷ আমি তো  নিশ্চয় বলব চীনের বিসুকটের মতো মুখরোচক  জিনিস পৃথিবীতে নেই৷

বাঁড়ুজ্যে মশায় বললেন--- চীনের  বিষ্কুটের  চেয়েও  মুখরোচক জিনিস আছে আর তাতে তোমাদের ঠোঁট-জিব বেশ তড়বড় করে নড়ৰে৷

কোন একজন সাহিত্যিক ললেন--- হ্যাঁ, বিস্কুটের  চেয়েও  মুখরোচক হচ্ছে এদেশের ডালমুট৷

বাঁড়ুজ্যে মশায় বললেন--- হল না, হল না, একটু ত্রুটি রয় গেল৷

সাহিত্যিকেরা ললেন--- ডালমুটের চেয়েও  মুখরোচক হল নুনে-ঝালে  আঃ-উঃ করানো চানাচুর৷

বাঁড়ুজ্যে মশায় ললেন  হল না, হল না৷

সাহিতিকেরা বাঁড়ুজ্যে মশাইকে ললেন তবে আপনিই বলুন  সবচেয়ে মুখরোচক  জিনিস কী৷

বাঁড়ুজ্যে মশাই ললেন---সবচেয়ে মুখরোচক হচ্ছে পরনিন্দা, পরচর্চা আর প্রকাশ্যে যার খাই-পরি আড়ালে  তার শ্রাদ্ধ করি...‘‘যার শিল যার নোড়া / তারই ভাঙ্গি দাঁতের গোড়া... যার খাই যার পরি  তারই নিন্দাবাদ’’ ---হেমচন্দ্র৷  এই পরনিন্দা , পরচর্চা অথবা প্রকাশ্যে যার খাই -পরি আড়ালে তার নিন্দা করি--- এই তিনটি জিনিস মিশিয়ে যে ভোজ্যটি তৈরী হয় সেটিই সবচেয়ে ৰেশী মুখরোচক৷

তখন উঠতি বয়সের তরুণ সাহিত্যিক ললেন--- তবে ওই বিস্কুটের টিনে কী নিয়ে যাচ্ছেন?

কেদার বাঁড়ুজ্যে ললেন---টিনটা খুলেই দেখো না!

তরুণ সাহিত্যিক টিনটি  খুললেন৷ দেখলেন-নির্ভেজাল  ৰাংলার মাটি--- যে মাটি আমরা আশে পাশে পথে ঘাটে আকছার  হামেশাই দেখে থাকি৷ সবাই সমস্বরে জিজ্ঞেস  করলেন--- এ যে মাটি! মাটি নিয়ে  কি কেউ যাত্রা করে! মাটি নিয়ে কি কেউ ভিন্ দেশে যায়!

বাঁড়ুজ্যে মশায় ললেন---চীনে গিয়ে তো আমাকে শৌচালয়ে যেতে হবে৷ আমাকে তো হাতে মাটি করতে হবে৷

সাহিত্যিকরা বললেন---হাতে মাটি করবার জন্যে মাটি তো  সে দেশেই রয়েছে৷

বাঁড়ুজ্যে মশায়  ললেন--- ওখানেই  তো ভুল করলে৷ এটা যে তোমাদের  ঠিকেয় ভুল৷ তোমরা দেশটার নামই ভুলে গেলে৷ ওদেশে হাতে-মাটি করবার মাটি কী করে পর্া! দেশটা যে চীন দেশ৷ ওখানকার সই যে চীনে মাটি৷

সাহিত্যিকেরা তাঁদের ঠিকেয় ভুল মেনে নিলেন৷