কুলাল+ ঠক্ করে ‘কৌলালক’ শব্দটি পাচ্ছি৷ শব্দটির অর্থ হল চীনে মাটির বাসনপত্র ও চীনে মাটির অন্যান্য পণ্য যেমন ফুলদানি, পিকদানি, সুর্র্মদানি প্রভৃতি৷
সে আজ অনেকদিন হয়ে গেল৷ বাংলা সাহিত্যে কেদার বাঁড়ুজ্যে মশায় তখন সুপ্রতিষ্ঠিত৷ শুধু উঠতি সাহিত্যিকেরাই নয়, প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিকেরাও কেউ কেউ তাকে ‘দাদামশায়’ কেউবা ‘দাদু’ বলে ডাকতেন৷ তাঁর প্রতিভা বেশী ফুটে উঠেছিল হাস্যরসের গল্পে৷ তবে সাহিত্যের অন্যান্য শাখাকেও তিনি ছোননি এমন কথা বলা চলে না ৷ এহেন কেদার বাঁড়ুজ্যে মশায় একবার নাকি চীনে গেছলেন৷ তিনি যখন চীনে যান তখন তার মুড়িভাজার খোলা কোচি, পিটুলি গোলা, হলুদবাটা, শিল-নোড়া, ডেঁয়ো ঢাকনা, নারকোল মালা, রঙীন ক্ষুরি রঙবেরঙের চ্যাঁচারিতে তৈরী বাঁশের কুলো তো ছিলই, আর ছিল একটি সুদৃশ্য বিসুকটের টিন-ভর্ত্তি কি যেন একটা জিনিস৷ বাংলার নামীনামী-উঠতি বাড়তি-পড়তি সাহিত্যিকেরা দলে দলে জাহাজ ঘাটায় এসেছিলেন তাঁকে দিায়- অভিনন্দন জানাতে৷ বাঁড়ুজ্যে মশায় সবাইকার সঙ্গে হাসি মুখে কথা বললেন, শ্রিম্ভালাপ করলেন৷ হঠাৎ একটি উঠতি বয়সের ছোকরা সাহিত্যিক বিসুকটের টিনটা দেখিয়ে বললেন---দাদু বিসুকটতো চীনে অনেক পাওয়া যায়...সস্তা মচমচে ও মুখরোচকও৷ অমন মুখরোচক বিষুকট এদেশে পাওয়াই যায় না৷ আমি তো নিশ্চয় বলব চীনের বিসুকটের মতো মুখরোচক জিনিস পৃথিবীতে নেই৷
বাঁড়ুজ্যে মশায় বললেন--- চীনের বিষ্কুটের চেয়েও মুখরোচক জিনিস আছে আর তাতে তোমাদের ঠোঁট-জিব বেশ তড়বড় করে নড়ৰে৷
কোন একজন সাহিত্যিক ললেন--- হ্যাঁ, বিস্কুটের চেয়েও মুখরোচক হচ্ছে এদেশের ডালমুট৷
বাঁড়ুজ্যে মশায় বললেন--- হল না, হল না, একটু ত্রুটি রয় গেল৷
সাহিত্যিকেরা ললেন--- ডালমুটের চেয়েও মুখরোচক হল নুনে-ঝালে আঃ-উঃ করানো চানাচুর৷
বাঁড়ুজ্যে মশায় ললেন হল না, হল না৷
সাহিতিকেরা বাঁড়ুজ্যে মশাইকে ললেন তবে আপনিই বলুন সবচেয়ে মুখরোচক জিনিস কী৷
বাঁড়ুজ্যে মশাই ললেন---সবচেয়ে মুখরোচক হচ্ছে পরনিন্দা, পরচর্চা আর প্রকাশ্যে যার খাই-পরি আড়ালে তার শ্রাদ্ধ করি...‘‘যার শিল যার নোড়া / তারই ভাঙ্গি দাঁতের গোড়া... যার খাই যার পরি তারই নিন্দাবাদ’’ ---হেমচন্দ্র৷ এই পরনিন্দা , পরচর্চা অথবা প্রকাশ্যে যার খাই -পরি আড়ালে তার নিন্দা করি--- এই তিনটি জিনিস মিশিয়ে যে ভোজ্যটি তৈরী হয় সেটিই সবচেয়ে ৰেশী মুখরোচক৷
তখন উঠতি বয়সের তরুণ সাহিত্যিক ললেন--- তবে ওই বিস্কুটের টিনে কী নিয়ে যাচ্ছেন?
কেদার বাঁড়ুজ্যে ললেন---টিনটা খুলেই দেখো না!
তরুণ সাহিত্যিক টিনটি খুললেন৷ দেখলেন-নির্ভেজাল ৰাংলার মাটি--- যে মাটি আমরা আশে পাশে পথে ঘাটে আকছার হামেশাই দেখে থাকি৷ সবাই সমস্বরে জিজ্ঞেস করলেন--- এ যে মাটি! মাটি নিয়ে কি কেউ যাত্রা করে! মাটি নিয়ে কি কেউ ভিন্ দেশে যায়!
বাঁড়ুজ্যে মশায় ললেন---চীনে গিয়ে তো আমাকে শৌচালয়ে যেতে হবে৷ আমাকে তো হাতে মাটি করতে হবে৷
সাহিত্যিকরা বললেন---হাতে মাটি করবার জন্যে মাটি তো সে দেশেই রয়েছে৷
বাঁড়ুজ্যে মশায় ললেন--- ওখানেই তো ভুল করলে৷ এটা যে তোমাদের ঠিকেয় ভুল৷ তোমরা দেশটার নামই ভুলে গেলে৷ ওদেশে হাতে-মাটি করবার মাটি কী করে পর্া! দেশটা যে চীন দেশ৷ ওখানকার সই যে চীনে মাটি৷
সাহিত্যিকেরা তাঁদের ঠিকেয় ভুল মেনে নিলেন৷