বকফুল, ডুমুর, ঘি–করলা

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

বকফুল

পরিচয় ও প্রজাতি ঃ বকফুল (গাছের) অনেক প্রজাতি রয়েছে৷ তবে মুখ্যতঃ দু’টি প্রজাতি নজরে পড়ে৷ একটিকে বলতে পারি কিছুটা হ্রস্ব, অপরটি হচ্ছে দীর্ঘ৷ হ্রস্ব প্রজাতির বকফুল (মোটামুটি) উঁচু হয় আর দীর্ঘ প্রজাতিটি আট মানুষের চেয়েও বেশী উঁচু হয়৷ হ্রস্ব–দীর্ঘ নির্বিশেষে বকফুল গাছ ক্ষাড়ে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে৷ ফুলের আকার ও আকৃতির বিচারে বকফুল শাদা, গোলাপী, লাল ও পঞ্চমুখী জাতের হয়ে থাকে৷

লিবার, কিডনী, অগ্ণ্যাশয়ের রোগে ঃ বক ফুল সহজপাচ্য৷ লিবার, অগ্ণ্যাশয় ও কিডনীর পক্ষে বেশ ভাল৷ ডালের বেশন, অল্প ছোলা বাটা, মুগডাল বাটার সঙ্গে বক ফুলের বড়া মুখরোচক ও শক্তিক্ষর্ধক৷ এর ফুলের পাপড়ি ঝোলে–ঝালে–চচ্চড়িতে দেওয়া হয়–ফলে  তা সহজেই শরীরের অঙ্গীভূত হয়ে যায়৷

অন্যান্য ব্যবহার ঃ ফুল ঝরে যাবার পরে গাছে লম্বা ডাঁটা বের হয়৷ দূর থেকে দেখতে এগুলো কতকটা শোজনে ডাঁটার মত৷ বকফুলের ডাঁটা মানুষ খায় না, তবে ডাঁটার মধ্যেকার বীজ থেকে তেল তৈরী হয়৷ ঠিক ভাবে পরিশোধন করলে ওই তেল ভোজ্য তেল রূপে ব্যবহার করা যেতে পারে৷ বকফুলের কচি ডগা, পাতা ও ডাঁটা খেলে গোরুর দুধ ক্ষাড়ে৷ গোরুর মৃতবৎসা রোগ থাকলে বক ফুলের পাপড়ি ও বকফুলের ডাঁটা ভাল ওষুধের কাজ করে৷ গর্ভিণী গাইকেও বকফুলের ডাঁটা খাওয়ালে তার সুপ্রসব হয়, শিশু শক্তিশালী হয় ও বক্না বাছুর উত্তরকালে বেশী দুধ দেয়৷৫৩

ডুমুর

ডুমুর একটি পুষ্পশাক৷ অন্য পুষ্প বাইরের দিকে প্রস্ফুটিত থাকে.....এরা (ডুমুরের ফুল) থাকে অন্তর্মুখী৷ লিবারের পক্ষে, অগ্ণ্যাশয়ের পক্ষে খুবই ভাল৷ যে দীর্ঘকাল ধরে উদরাময়ে ভোগে বা যার উদরাময়ের প্রবণতা রয়েছে, তার পক্ষে ডুমুরের হলুদ ঝোল বিশেষ কল্যাণকর৷ কাঁচকলার মত ডুমুরে লোহার ভাগ বেশী৷ তাই কষ বেশী৷ কাঁচকলা বা ডুমুরের কষ অগ্ণ্যাশয়ের পক্ষে আদৌ ক্ষতিকর নয়৷ ডুমুর অর্শ ও বহুমূত্র রোগে বিশেষ উপকারী৷ ঙ্ম ডুমুরের ছোট প্রজাতিটিই সাধারণতঃ তরকারীতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে৷ বড় ডুমুর পাকলে তা ফল হিসেবে লিবারের পক্ষে ভাল৷ বড় পাকা ডুমুর শুকিয়ে মেওয়া ফল হিসেবেও ব্যবহার করা হয়৷ তারও গুণ একই রকমের ক্ষ৷

ঘি–করলা

পরিচয় ও প্রজাতি ঃ আমাদের পরিচিত শাক–সব্জীর মধ্যে ঘি–করলা অন্যতম৷ নির্দোষ সব্জী বলতে অনেকে যেমন পটোলকে বোঝেন আর সে কথাটা যেমন সত্যি, ঠিক তেমনি আর একটি নির্দোষ সব্জী হচ্ছে ঘি–করলা৷ ঘি–করলার খাদ্যমূল্য পটোলের চেয়ে অল্প একটু বেশী৷ স্বাদও অল্প একটু বেশী৷ ঘি–করলার দু’টি প্রজাতি রয়েছে–বৃহৎ ও ক্ষুদ্র৷ ঘি–করলার লতা দীর্ঘ হয়৷ ঘি–করলা রাঢ়ে মুখ্যতঃ ঘি–করলা নামে পরিচিত৷ বাগড়ীতে (সমতটে) কাকরোল বলা হয়ে থাকে৷ কোলকাতার বাজারে ঘি–করলা ও কাকরোল দু’টি নামই প্রচলিত৷

লিবার, অর্শ, কোষ্ঠকাঠিন্য, কিডনীর রোগে ঃ লিবারের অসুখে, কিডনীর অসুখে, অর্শে ও কোষ্ঠকাঠিন্যে ঘি–করলা (সব্জী হিসেবে খেলে) ভাল কাজ করে৷

মধুমেহ রোগে ঃ ঘি–করলা সব্জীর রস (কাঁচা রস) মধুমেহ রোগে উপকারী৷

অন্যান্য ব্যবহার ঃ ঈশের মূলের মত (ঈশ্বরী মূল) ঘি–করলার লতার গন্ধ সাপের অপছন্দ৷ তাই সাপ এর ত্রিসীমানায় ঘেঁসে না [আগেই বলা হয়েছে ঘি–করলা সেদ্ধ বুদ্ধিবৃত্তির পক্ষে সহায়ক]৷