বঙ্গভঙ্গ রুখতে  ও ভারতের ঐক্য ও সংহতি রক্ষায় জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এক হও

লেখক
প্রভাত খাঁ

অত্যন্ত মারাত্মক কথা! পশ্চিমবঙ্গকে ভাগ করে উত্তরবঙ্গকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল হিসাবে ঘোষনা করার কথা পশ্চিম বাঙলার বিজেপির   জলপাইগুড়ি জেলার সহ সভাপতি অলোক চক্রবর্ত্তীর মুখে৷ এই প্রস্তাব করোনায় আক্রান্ত পশ্চিমবাঙলার রাজ্য নির্র্বচনকালে নাকি’ উত্তরবঙ্গে প্রচারে আসার সময় বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বকে জানানো হয়৷ একটা খুবই বাস্তবধর্মী প্রশ্ণ উঠে আসে তা হলো উত্তরবঙ্গটা কি  জলপাইগুড়ির বিজেপি রাজ্য সভাপতি অলোক চক্রবর্তী মহাশয়ের একার সম্পত্তি? তাই তিনি ও তাঁর জেলার বিজেপি দলের গুটি কয়েক ব্যষ্টি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কাছে আবদার করবেন৷ তা আবার সহ সভাপতি! কুচবিহার, দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার  আর খোদ জলপাইগুড়ির বাঙ্গালী ভাই বোনরা এই ধরনের কথায় কতটা উত্তেজিত ও ক্ষুদ্ধ সেটাকি খবর রাখেন অলোক বাবুরা৷ নির্র্বচনের  সময় বাঙলায় বাহির থেকে আসা বিজেপি নেতারা ধরেই নিয়েছিলেন যে বিজেপি নির্বাচনে জিতেই গেছেন৷ কারণ তৃণমূল থেকে অনেক নেতা, মন্ত্রী ও কর্মী রাজ্য বিজেপিতে দলবদল করে ঢুকে  পড়েন ও নির্বাচনে টিকিট পান বিজেপি দলের৷ কিন্তু নির্বাচনে যে ফলাফলটা হলো সেটা কিন্তু পশ্চিমবাঙলার  বোটারগণ সুচিন্তিত মতামত দান করে বিজেপিকে গোহারান হারিয়ে দিলেন৷

তাতে শিক্ষা নেওয়া উচিত৷ কিন্তু বেহায়াপনার চুড়ান্ত করে  চলেছে বিজেপি দলের কেন্দ্র ও রাজ্য নেতৃত্ব ও তাদের কিছু  অন্ধস্তাবকগণ৷ বাঙলাকে ভাগ করার প্রস্তাবের সংবাদে সারা পশ্চিমবাঙলার জনগণ অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ বিজেপি নেতাদের আহাম্মুখীতে৷ স্বয়ং রাজ্য সরকারের প্রধান মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যবাসীগণ তীব্র প্রতিবাদে মুখর৷ অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাগণ ধিক্কার দিচ্ছেন এই ধরণের নোংরা রাজনীতির৷ এই ইন্ধন কারা দিচ্ছেন সেটা কিন্তু জনগণ বুঝে নিয়েছেন৷ বাংলাকে ধবংস করার ষড়যন্ত্রেই উঠে পড়ে যাঁরা লেগেছেন তাঁরা হলেন বাহিরের বিজেপি দলের অভিনেতাগণ, যাঁরা রাজনীতি করার চেয়ে অভিনয়ে পটুকাকরণ তাঁরা সোনার বাংলা গড়ার দিবাস্বপ্ণ নিয়ে এ রাজ্যে প্রায় তাঁবু গেড়ে বসেছিলেন৷

এমন কাণ্ডটা তাঁরা করে গেলেন বিরাট বিরাট মিটিং আর মিছিল করে তাতে করোনা ব্যাপক আকারে পশ্চিম বাঙলায় ছড়িয়ে গেল ৷ আইনের রক্ষকগণই আইনভঙ্গ করে গেলেন নিছক গায়ের জোরে! ‘‘বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাটি’’ তাঁর ইতিহাস ভারতবর্ষকে সুদুর অতীতে  জানান দিয়েছে বাঙালী বীর সন্তানগণ৷ আর বর্ত্তমান এই অতিক্ষুদ্র পশ্চিমবঙ্গ যা নাকি জীর্ণ ও শীর্ণ তাঁকে যাঁরা বিশ্বাসঘাতকতা করে রক্তাক্ত করার ষড়যন্ত্র করছে তাঁদের উপযুক্ত জবাব দেবার জন্য এই মাটির সেবকগণ সজাগ৷

দিল্লির বিজেপি সরকার হিংসার বশবর্ত্তী হয়ে সমস্যা সংকুল পশ্চিম বাংলাকে ধবংস করার খেলায় কি মাতছে না? গত ৭বছরের কুশাসনের চরম ব্যর্থতায় সারা ভারতবর্ষকে ধবংস হতেই বসেছে৷ তার উপরে বাঙলাকে শেষ করে দিতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে৷ এ কেমন গণতন্ত্রের রক্ষক ও সেবক বিজেপি দল! জনগণই উপযুক্ত জবাব দেবেন সঠিক সময়ে৷ বাঙালী জনগোষ্ঠী উপযুক্ত জবাব দেবে দেশবাসীর সম্মান রক্ষায়৷ মনে পড়ে ১৯০৫ সালে ইংরেজ লর্ড কার্জন বঙ্গ ভাগের ষড়যন্ত্র করে ছিলেন৷ তাকে রুখেছেন সেদিনের মনীষীগণ ও বাঙলার বিপ্লবী যুবসমাজ৷ এদের এতো দূর মিথ্যাচারিতা যা চিন্তা  করলে চরম লজ্জায় পড়তে হয়৷ বহু দলীয় গণতন্ত্রটা যে চরম মিথ্যা চারিতা সেটা গত ৭৪ বছরে হতভাগ্য দেশবাসী বুঝে নিয়েছেন৷ শাসক দলগুলো বিশেষ করে কেন্দ্রের শাসক রাজ্যে রাজ্যে একটি করে ছোটলাট নিয়োগ করেন৷ যদি  বিরোধী দলের রাজ্য শাসন সেথায় চলে তাহলে সেটাকে ছলবল কৌশলে ফেলে দিয়ে রাষ্ট্রপতি, শাসন করা ও নির্বাচনের প্রহশন ঘটিয়ে সেটাকে কব্জায় আনা৷ এই নোংরামীটা বর্ত্তমানে প্রবল হয়েছে৷ আর ঐ ছোটলাট সাহেবটির প্রধান কাজ হলো রিপোর্ট রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা একেবারে  ভেঙ্গে পড়েছে, যদি না পাঠান যে ছোটলাটের  নামে রাজ্য সরকার রাজ্যশাসন করেন৷ কিন্তু বিজেপির ডবল ইঞ্জিন যে রাজ্যে   চলে সেখানে সত্যসত্যই যদি রাজ্য শাসন একেবারে গোল্লায় যায় তবু সেখানে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টুঁ শব্দটা করেন না৷ এর উজ্জ্বল নজির  হলো উত্তর প্রদেশের রাজ্যের শাসন ব্যবস্থা৷ বিজেপি ভারত যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের যে ব্যবস্থা সেটাকে একেবারে গোল্লায় পাঠিয়ে একদলীয় শাসন কায়েমে মরিয়া৷ তাই করোনা আবহে কেন্দ্রের শাসকগণ লোকসভায় আলাপ আলোচনাটাকে একেবারে শিকেয় তুলে সংখ্যার জোরে একাধিক কালাকালুন বানিয়ে ভারতকে এত কুসংস্কার চিন্তাধারায় আচ্ছন্ন ধর্মমতের বেড়াজালে আবদ্ধ করে অন্য ধর্ম মতের বিশ্বাসীদের  এক ঘরে করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত৷ তাই অনেক মুসলিম ধর্মমত বিশ্বাসীদের উপর নির্যাতন চালাবার সংবাদ প্রায়ই সংবাদে আসছে৷ জোর করে রাম শব্দটি বলাতে বাধ্য করা হচ্ছে অনেক অহিন্দুদের৷ একেমন গণতন্ত্র? কোটি কোটি শ্রমিক বেকার, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি আকাশ ছোঁয়া৷ ডিজেল, পেট্রোল ও রান্নার গ্যাস এর দাম মাসের মধ্যে একনাগাড়ে বাড়িয়ে দিয়ে মানুষকে রক্তশূন্য করে ছাড়ছে৷ এই দেশটি চলছে মুষ্টিমেয় কয়েকজন ধনীর অঙ্গুলি হেলনে৷ জঘন্য ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক  সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করতে কোটি কোটি গরিব নাগরিককে পথের ভিখারীতে পরিণত করছে সরকার৷ চাষী ও শ্রমিকদের একেবারে শেষ করার কাজে লিপ্ত৷ বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থা যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারে বন্ধ হওয়াতে  সারা ভারতই যেন শ্মশানে পরিণত হয়েছে৷ ভারতে প্রায় ১৩৫ কোটি জনসংখ্যা৷ তাঁদের সামান্য কয়েক কোটি মানুষ করোনার টিকা পেয়েছেন৷ কয়েক লক্ষ মানুষ করোনায় অকালে মারা গেছেন৷ সারা দেশ করোনার আতঙ্কে অর্দ্ধমৃত হয়ে বেঁচে আছেন! এদিকে  দেশের  উন্নতির  এক মিথ্যা ফানুষ উড়িয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে৷ মানুষ মারা পড়েছেন, সরকার কোটি কোটি টাকার আকাশ অভিযান ও সামরিক ডুবো জাহাজ কেনায় ব্যস্ত৷ এদিকে প্রতিবেশী দেশগুলো যাদের খুঁজে পাওয়া যায় না তারা আর্থিক উন্নতিতে ভারতকে পশ্চাতে ফেলে এগিয়ে চলেছে৷ এঁরা দলীয় নেতাদের আকাশ চুম্বি মূর্ত্তি নির্মাণ করে, বিশাল মন্দির নির্মাণে কোটি কোটি টাকা  খরচ করে চলেছেন কিন্তু নাগরিকদের দিকে নজর দেবার ফুরসৎ  শাসকদের নেই৷ এই হলো ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক শাসনের করুন ছবি৷ কবে যে জনগণের মুখে হাসি ফুটবে কে জানে? আর কবে যে করোনার অভিশাপ মুক্ত হবে দেশ সেটাও সকলের অজানা? গণতন্ত্র দেশকে সংযুক্ত করবে ঐক্য সংহতি রক্ষার জন্য কিন্তু এঁরা দেশকে টুকরো টুকরো করে ধবংসের  দিকে ঠেলে দিচ্ছে যাতে দেশবাসী পরস্পর  বিরোধ করেই শেষ হয়৷ তাই এইসব নোংরামীকে চিরদিনের মতো বন্ধ করতে সৎনীতিবাদীদের দেশসেবায় এগিয়ে আসাটা অতি জরুরী৷

সচেতন পশ্চিম বাঙলা সারা ভারতকে জানান দিয়েছে --- মতদানের মাধ্যমে ভারতের সকল রাজ্যকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে --- দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনব্যবস্থাকে দূর করতেই হবে৷ দেশ ভাগ নয় আর৷