Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

বিস্ফোটকের অপর অর্থ হ’ল বিশেষ ধরণের ফোঁড়া৷ বিস্ফোটক> বিসফোড> বিসফোড়া> বিসফোঁড়া৷ ৰানানটি হয় ‘বিস্ফোড়া’ অথবা ‘বিসফোড়া’৷ অনেকেই ভুল করে ‘বিষফোঁড়া’ লিখে থাকেন৷ ভাবেন, মানে ৰুঝি গরল (Poison)৷ না, শব্দটি আসলে তা একেবারেই নয়৷ সঙ্গে এর কোন সম্পর্কই নেই৷ হ্যাঁ, এতদর্থে ‘ফ’ মানে ফোঁড়াও হয়৷

হাঁই তোলার সময় মুখকে বড় করে তুলতে হয় অর্থাৎ মুখব্যাদান করতে হয়৷ এই সময় মুখ দিয়ে যে বায়ু বহির্গত হয়, তাকে ‘কৃকর’ বায়ু ৰলা হয়৷ যেহেতু মুখকে ফুলিয়ে কৃকর বায়ু বহির্গত হয়, তাই ‘ফ’-এর একটি অর্থ হ’ল জৃহ্মণ ক্রিয়া বা হাঁই তোলা৷ ব্যাপকার্থে জৃক্ষন ক্রিয়া ৰলতে ‘তনুমোটন’কেও ৰোঝায়৷ ‘তনুমোটন’--এর কথ্য বাংলা ‘আড়মোড়া ভাঙ্গা’---উত্তর ভারতে আঙড়েই লেনা’৷ ‘জৃহ্মণ’ থেকে উত্তর ভারতে ‘জেহ্মনা’ শব্দটি এসেছে৷ জৃহ্মণের ইংরেজী হচ্ছে yawning.

 

জীবদেহে পঞ্চ বহির্বায়ু ও পঞ্চ অন্তর্বায়ু আছে৷ পঞ্চ বহির্বায়ু হচ্ছে পাণ, অপান, সমান, উদান ও ব্যান---(১) প্রাণবায়ুর অধিষ্ঠান নাভি থেকে কণ্ঠ পর্যন্ত, (২) অপান বায়ুর অধিষ্ঠান নাভির নিম্নে, (৩) সমান বায়ুর অধিষ্ঠান নাভিতে, (৪) উদান বায়ুর অধিষ্ঠান কণ্ঠে (আমরা ‘উদাত্তকণ্ঠে’ শব্দটি ব্যবহার করেও থাকি যদিও এই ‘উদাত্ত’ শব্দটি ‘উদান’ থেকেই এসেছে) ও (৫) ব্যান বায়ুর অধিষ্ঠান সর্বশরীরে ব্যাপ্ত থাকে৷

জীবদেশের বিনাশ কালে সকল বায়ু প্রাণ বায়ুর সঙ্গে মিলিত হয়ে দেহ থেকে বহির্গত হয়৷ পঞ্চ অন্তর্বায়ু হচ্ছে (১) নাগ, (২) কূর্ম, (৩) কৃকর, (৪) দেবদত্ত ও (৫) ধনঞ্জয়৷ নাগ বায়ু শরীরের প্রতিটি সন্ধিস্থানে থেকে শরীরের উৎক্ষেপ বা উল্লম্ফন ক্রিয়া ঘটায় (২) কূর্ম বায়ু নাড়ীকেন্দ্রে অধিষ্ঠিত থেকে শরীরের সংকোচন ঘটায়, (৩) কৃকর বায়ু তনুমোটন সহ জৃহ্মণ ক্রিয়া ঘটায়, (৪) দেবদত্ত বায়ু শরীরের ক্ষুধা-তৃষ্ণা আনয়ন করে ও (৫) ধনঞ্জয় বায়ু আনে নিদ্রা-তন্দ্রা৷ জীবদেহের বিনাশের সময় নাগ-কূর্ম-কৃকর-দেবদত্তএই বায়ু চতুষ্টয় প্রাণবায়ুর সঙ্গে দেহ থেকে বহির্গত হয়৷ কেবল দেহ যতক্ষণ না পঞ্চভূতে মিশে যাচ্ছে ততক্ষণ ধনঞ্জয় বায়ু নিদ্রা-তন্দ্রা রূপে দেহকে আচ্ছন্ন করে রাখে কারণ মৃত্যু মানে চিরনিদ্রা আর সেটাই ধনঞ্জয় বায়ুর কাজ৷ প্রাণ বায়ু গেছে অথচ ধনঞ্জয় বায়ু আছে এই অবস্থায় ধনঞ্জয় বায়ুর উপস্থিতি-নিবন্ধন জীবদেহ পচতে থাকে৷ যতকাল না জীবদেহ পঞ্চ মহাভূতে সম্পূর্ণভাবে মিলিত হচ্ছে ততকাল ধনঞ্জয় বায়ু থেকে যায়৷ তাই প্রাচীনকাল থেকে মানুষেরা শবদেহের দাহক্রিয়াকেই সমর্থন করে গেছেন৷ তা সে যাই হোক, এই যে কৃকর বায়ু ‘ফ’ বলতে এই বায়ুকে বোঝায় কারণ এতে মুখ ফুলিয়ে মুখ দিয়ে বায়ু বের করে দেওয়া হয়৷                        (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)