বর্তমান ভয়ংকর অধঃপতন হতে দেশকে রক্ষা করতে নোতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে

লেখক
প্রভাত খাঁ

রাজতন্ত্র বা সামন্ততান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় যেহেতু রাজা বা সামন্তরাজ দণ্ডমুণ্ডের কর্ত্তা তাই তাঁদের হাতে সৈন্য ও লেঠেলরা থাকতো, তাদের দিয়ে নিজেদের মনের মত করে অর্থাৎ স্বেচ্ছাচারকে মূলভিত্তি করে তাঁরা শাসন কার্য পরিচালনা করতেন৷ কখনো কখনো দেখা যেত কোন কোন রাষ্ট্রে দয়ালু মহান রাষ্ট্র প্রধানদের৷ সময় গড়িয়ে চলেছে তাই আজ দেখা যাচ্ছে সমাজে রাজতন্ত্রের পরিবর্তে আবির্ভূত হয়েছে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা৷ অর্থাৎ কথায় বলা হচ্ছে জনগণের দ্বারা ও জনগণের জন্যে৷ বাস্তবে কিন্তু দেখা যাচ্ছে বহু দলীয় গণতন্ত্রিক  শাসন ব্যবস্থায় রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, শোষণ, অত্যাচার, স্বেচ্ছাচারিতা প্রচণ্ডভাবে প্রভাব বিস্তার করে গণতন্ত্রকে দলীয় শাসকবর্গ শোষণের হাতিয়ার করে ফেলেছে৷ দলকে পরিচালনা করতে দলের সমর্থকদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে অর্থ ও পেশী শক্তির যে আবশ্যিক   সেগুলোকে সংগ্রহ করতে প্রায় সব দলই ন্যায়–সত্যের প্রশস্ত পথ পরিত্যাগ করে বাঁকা পথ ধরেই চলতে থাকে৷

এর মধ্যে শাসক দলের হাতে শাসন ব্যবস্থা থাকায় পুলিশ, প্রশাসন ও আইন কানুন হাতে থাকায় তাদের সমর্থকগণ যতো কিছু অন্যায়, শোষণ ও অত্যাচার করছে  সবকিছু বুক ফুলিয়ে করে পার পেয়ে যাচ্ছে৷ গণতন্ত্রে পড়ে পড়ে মার খাচ্ছে অসহায় দুর্বল শ্রেণীর হতভাগ্যরা৷ এটা আমরা দেখে আসছি সেই কংগ্রেসী আমল থেকে৷ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন–শৃঙ্খলা দ্রব্যমূল্য, নিত্য–প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশ ছোঁয়া হয়েছে, চরম বেকার সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়াতে সারা দেশে নৈতিক মান বলতে প্রায় কিছুই নেই৷ পশুরাও ঘৃণা করে আজকের অধঃপতিত মানুষের সমাজকে! খুন জখম করে দলীয় খুনীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরছে৷ বিচার বিভাগ–এর উপর রাজ্যের তথা সারা ভারতের হতভাগ্য জনগণ নির্ভর করে কাল কাটাচ্ছে কিন্তু পুলিশ প্রশাসন এতটাই নির্লজ্জভাবে দলীয় শাসকদের কাছে নিজেদের বিকিয়ে দিয়েছে যে বিচার বিভাগও যেন অচল হয়ে পড়েছে৷ মহামান্য আদালতের সঙ্গে সরাসরি শাসন বিভাগের যেন ঘোরতর কলহ উপস্থিত  হয়েছে যার দরুণ বিচারকগণ  মানসিক দিক হতে অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন৷ ঠিক সময়ে তদন্ত রিপোর্ট আদালতে জমা না পড়ায় ও রিপোর্টে নানা অসংলগ্ণ বিষয় থাকায় অর্থাৎ কারচুপির জন্যে বিচারকগণের সুবিচার করার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে৷ বিচারে দীর্ঘসূত্রতাও হতভাগ্য গরিব মানুষের কাছে বিচার প্রার্থী হওয়াটাও এক আর্থিক ও মানসিক যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ সেই কারণে এ দেশের মানুষের গণতন্ত্রের প্রতি আকর্ষণ ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে৷ তাই আজ দেশের চিন্তাশীল ব্যষ্টিদের অবশ্যই ভাবতে হবে এই কঠিন সমস্যার হাত থেকে দেশ ও সমাজ বাঁচবে কেমন করে নৈতিকতার দিক থেকে বিচার করলে বলতেই হয় গণতন্ত্রে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অন্তরে সেবার আদর্শ থাকাটাই মুখ্য হওয়াটা বিধেয় কিন্তু সেই প্রবাদ বাক্য– যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ৷ শাসনে গিয়েই স্বপ্ণ দেখে কি করে নিজেদের ব্যষ্টিগত ও দলগত সুযোগ সুবিধা বাগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়৷ তাই সকল প্রকার কেলেঙ্কারিতে এদেশের গণতন্ত্র প্রথম সারিতে৷ তাছাড়া দেশের যতো দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ রাজশক্তি কব্জা করে অর্থ কৌলিন্যের জোরে বিভিন্ন দলে নাম লিখিয়ে দেশ নেতা হয়ে গণতন্ত্রকে কলঙ্কিত করে চলেছে৷ তাই দার্শনিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা গণতন্ত্র রক্ষায়, মানবতা, নৈতিকতা সুরক্ষাকল্পে পুলিশ বিভাগকে বিচার বিভাগের হাতে দেওয়ার পক্ষপাতি৷ অদ্যাবধি শাসকগণ পুলিশ বিভাগকে হস্তগত করে যতো কিছু ন্যায়–নীতি দলীয় স্বার্থকে রক্ষার জন্যে মিথ্যাভাবে মামলা সাজিয়ে বিরোধীপক্ষকে ধ্বংস করার পথে কাজে লাগায়৷

এর নিদর্শন বর্তমানে আমরা প্রতি নিয়ত দেখতে পাই৷ আজকের মেকি গণতন্ত্রে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা জনগণের নেই শুধু আছে নির্বাচনে একটা ভোট দেওয়ার অধিকার, সেটাও ষড়যন্ত্র করে অনেক সময় কেড়ে নেওয়া হয়৷ ছাপ্পা ভোটে কারচুপি করে শাসকগণ ভোটের পবিত্রতাকে তো অনেক বছর আগেই কেড়ে নিয়েছে৷ তাই আজকের গণতন্ত্র যে স্বৈরাচারীদের লুটেপুটে খাওয়ার রাজপথ সেটা প্রায় সকলেই বোঝে৷ গণতন্ত্রে অবশ্যই নেতা ও নেত্রীদের বাক সংযম থাকাটা আবশ্যিক কিন্তু বর্তমানে উঠতি রাজনৈতিক নেতা ও নেত্রীগণ সেটাও আত্ম অহংকার ও কুৎসিত মানসিকতায় ইচ্ছাকৃতভাবে ভুলেই গেছে৷ তাই আজ এ দেশের শাসন ব্যবস্থা যে কোন পথে চলছে সেটাই বোঝা দায়! তবে গণতন্ত্রের স্বার্থে শিক্ষিত চিন্তাশীল নীতিবাদীদের অবশ্যই ভাবনা চিন্তা করতেই হবে বর্তমান ভয়ংকর অধঃপতন হতে দেশকে কিভাবে রক্ষা করা যায়৷