বলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী ও সমাজসেবী শাবানা আজমি গত ২১শে মে লুধিয়ানায় পিটিআইয়ের প্রতিনিধিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন যে, তিন-তালাক অমানবিক। এমনকি কোরাণে এর উল্লেখ নেই। এতে মেয়েদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে। তিনি দাবী করেন সরকারের উচিত তিন-তালাক নিয়ম তুলে দেওয়া। এ বিষয়ে কোন দ্বিমত থাকতে পারে না।
ভারতে এক সময়ে সতীদাহ প্রথা চালু ছিল। ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায় তীব্র আন্দোলন করে তৎকালীন ইংরেজ সরকারের গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্ককে দিয়ে এ প্রথা রদ করে হতভাগ্য হিন্দু বিধবা রমণীদের প্রাণ রক্ষা করেন। হিন্দু সমাজ থেকে এই জঘন্য প্রথা উঠে যায়।
বর্তমানে ভারত একটি স্বাধীন দেশ এই দেশে আজও তিন-তালাকের মতো প্রথা বর্তমান থাকে কী করে? এ নিয়ে অনেক শোরগোল চলছে। এটাকে প্রশ্রয় দেওয়া অন্যায়।
শুধু তাই নয়,গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বহুবিবাহ প্রথা বন্ধ হওয়া দরকার। কারণ এর দ্বারা যে কতখানি মহিলাদের সম্মানহানি হয় সেটা মাতৃজাতিই অন্তরে অন্তরে উপলদ্ধি করতে পারেন। এটা কোন ধর্মীয় প্রথা বলে ঘোষণা করা হলেও আধুনিক যুগের শিক্ষিত নর-নারী অন্ধের মতো মেনে নিতে পারে না।
সুদীর্ঘকাল থেকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা নারিজাতির উপরে অন্যায় অত্যাচার জোর করে চাপিয়ে দিয়ে আসছে এর অবসান হওয়াটা মানব সমাজের পক্ষে কল্যাণকর। তাছাড়াও সব কিছু বিচার করতে হবে ন্যায়, নীতি ও যুক্তি দিয়ে। মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। ন্যায়-নীতি ও যথার্থ কল্যাণবোধ একমাত্র মানুষেরই আছে। মহান মুনী ও ঋষিগণ হাজার হাজার বছর আগে বিশ্বের মানব জাতিকে বলে গেছেন---''শৃণ্বন্তু বিশ্বে অমৃতস্যপুত্রাঃ নাল্পে সুখমস্তি ভূমৈব সুখম্ "।--- হে অমৃতের পুত্রগণ শ্রবণ করো। তাঁরা অবশ্যই এতে কন্যাগণকেও সম্বোধন করে গেছেন। কারণ প্রাচীন ভারতের মৈত্রেয়ী ও গার্গীর মতো বিদূষী মহিলারা তর্কযুদ্ধে অবতীর্ণ হতেন ও পুরুষদের বহুবারই পরাজিত করেছেন। যুক্তিতর্কে তাই মাতৃজাতিকে অসম্মান করার অধিকার কারোরই নেই। ধর্মমতের নামে স্বার্থান্বেষী ধর্মমত ব্যবসায়ীদের আধ্যিপত্যকে মেনে নেওয়াটাই হল মানবিকতার অসম্মান। মুনী ঋষিরা আরোও বলেছেন---মানুষ নরনারী নির্বিশেষে পারে সেই বিরাট পুরুষকে জানতে। তাঁকে পাওয়াতেই সুখ অন্য কিছুতে সুখ নেই।
মুনী ঋষিরা আরো বলেছেন---
জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্র্গদপি গরীয়সী
সকল ক্ষেত্রে নারীকে অধিকার দিতে হবে। ভারত একটি বিরাট দেশ। এদেশের প্রত্যেকে নাগরিকের একই ধরণের দায়দায়িত্ব ও অধিকার থাকা উচিত। তা না হলে নাগরিকদের অধিকার ও কর্তব্যে যদি ফারাক থাকে তাহলে সেই নাগরিকতার অর্থ মিথ্যাই হয়ে যায়। ভারতবর্ষকে যারা নিজেদের দলীয় ব্যষ্টিগত স্বার্থে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে ভাগ করেছে তারা জঘন্য অপরাধ করে গেছে। সেটা বর্তমানে যারা এদেশে বাস করছে তারা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মমতান্ধতার কারণে ভারতের এর অবিচ্ছেদ্য অংশ কাশ্মীরে পাকিস্তানী ভন্ডামীর অন্ত নেই। সে যেকোনো ধর্মমতেই হোক ন্যায়নীতি যুক্তি ও মানবতার বিরোধিতাকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। তালাক প্রথা বাংলাদেশ, পাকিস্তান সহ বহু মুসলীম রাষ্ট্রেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাই ভারতেরও অবিলম্বে তা করা উচিত। তা না হলে ভারতে অদূর ভবিষ্যতে মারাত্মক ক্ষতি হবে যা পূরণ করা সম্ভব নয়। নেতাদের রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার সেটাই মারাত্মক ব্যার্থতা। বলতে দ্বিধা নেই মিথ্যা ধর্মমতের দোহাই দিয়ে বহুবিবাহ মেনে চলাটা গণতন্ত্রে চরম অন্যায়। বহুবিবাহ ব্যবস্থার চলটাকে আইনের দৃষ্টিতে ও মানবতার খাতিরে নিয়ন্ত্রণ অত্যাবশ্যক বলেই মনে হয়।
- Log in to post comments