একটু আগেই ৰললুম, ‘থ’ শব্দ ঔষধার্থে ব্যবহৃত হয়৷ এই ঔষধ যে কেবল শারীরিক রোগের ঔষধ তাই নয়, মানসিক রোগের ঔষধও৷ মানসিক রোগের যতরকম ঔষধ আছে তার একটা হচ্ছে মানুষের মনে রসচেতনা জাগিয়ে তার মনকে হালকা করে দিয়ে ব্যথাভার সরিয়ে দেওয়া---চিন্তক্লিষ্টতা অপনয়ন করা৷ এজন্যে প্রাচীনকালে এক ধরণের মানুষ থাকতেন যাঁরা মানুষের মনকে নানান ভাবে হাসিতে খুশীতে ভরিয়ে রাখতেন৷ মন ভাবে-ভাবনায় আনন্দোচ্ছল হয়ে উপচে পড়ত৷ এই ধরণের মানুষেরা শিক্ষিত বা পণ্ডিত থেকে থাকুন বা না থাকুন এঁরা মানব মনস্তত্বে অবশ্যই পণ্ডিত হতেন৷ এঁদের বলা হত বিদুষক৷ বিদুষকের ভাববাচক বিশেষ্য abstract) ‘বৈদুষ্য’ শব্দটির সঙ্গে নিশ্চয়ই তোমরা ভালভাবেই পরিচিত৷
‘বাক্বৈখরী শব্দঝরী শাস্ত্রব্যাখ্যানকৌশল৷
বৈদুষ্যং বিদুষাং তদ্বৎ ভুক্তয়ে ন তু মুক্তয়ে৷’
তাই ‘থ’ শব্দের একটি মানে হ’ল বিদুষক৷ বিদুষককে বর্তমান বাংলায় ‘ভাঁড়’ ৰলা হয়৷ তবে বিদুষক অর্থে ‘ভাঁড়’ শব্দটি বেশী পুরোনো নয়৷ ভণ্ড ও ‘ভাণ্ড’ দু’টি শব্দেরই তাদ্ভবিক রূপ ‘ভাঁড়’৷ ভণ্ড মানে কপটাচারী (hypocrite) যার ভাববাচক বিশেষ্য রূপ ‘‘ভণ্ডামি’’ (ভাঁড়ামি-hypocricy) আর ‘ভাণ্ড’ শব্দের ভাবারুঢ়ার্থ হচ্ছে আধার, যোগারুঢ়ার্থে কোন বস্তু রাখবার পাত্র অথবা সুখের পসরা৷ ‘ভাণ্ড’ শব্দের এই দ্বিতীয় অর্থ থেকেই বিদুষকের জন্যে ৰাংলায় ‘ভাঁড়’ শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে৷ অনেকে মনে করেন ৰাঙলার সুপ্রসিদ্ধ বিদুষক গোপাল ভাঁড়ের আসল নাম গোপাল চন্দ্র ভাণ্ডারী ছিল ৰলেই সেই ‘ভাণ্ডারী’ থেকেই ‘ভাঁড়’ শব্দ এসেছে৷ না, জিনিসটা তা নয়৷ ‘ভাণ্ডার’ শব্দের কথ্য ৰাংলা ‘ভাঁড়ার’, আর ‘ভাণ্ডারী’ থেকে ‘ভাঁড়ারী’’৷ তাই ‘ভাঁড়ারী’ থেকে ‘ভাঁড়’ আসতে পারে না৷
প্রাচীনকালে যজ্ঞি-বাড়ীতে ভাণ্ডারের দায়িত্ব নিতেন এক ধরণের শুদ্ধাচারী কায়স্থেরা অথবা নাপিতেরা৷ তাঁদের ‘ভাণ্ডারী’ ৰলা হত৷ সেই থেকেই কায়স্থ ও নাপিতে ভাণ্ডারী পদবীটা আজও চলে আসছে৷ গোপাল ভাঁড়ের পদবী ছিল ‘ভাণ্ডারী’৷ সেটা তিনি ‘ভাঁড়’ হিসেবে নন, পদবী হিসেৰে৷
(শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)