ভারতে বাঙালী কি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে

লেখক
পত্রিকা প্রিতিনিধি

‘‘আমরা পৃথিবীর- পৃথিবী আমাদের দেশ---আরো ভালভাবে বলতে গেলে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডই আমাদের দেশ৷ এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের এক কোণে পৃথিবী নামে যে ছোট গ্রহটা আছে, সেই পৃথিবীর এক কোণে ৰাঙালী নামে যে জনগোষ্ঠী আছে সেই জনগোষ্ঠীও অতীতের অন্ধকার থেকে এগোতে এগোতে তার অন্ধকারের নিশা শেষ হয়ে গেছে, তার জীবনে নোতুন সূর্যোদয় এসেছে৷ এবার তাকে এগিয়ে চলতে হবে৷ ..... এই যে ৰাঙালী নামধেয় জনগোষ্ঠী, একটা নয়, দুটো নয়, তের কোটি৷ সুতরাং মরণের ভ্রুকুটিকে উপেক্ষা করে এগিয়ে চলার মত প্রাণশক্তি তার যথেষ্ট আছে৷ ....হঠাৎ জেগে ওঠা নোতুন একটা বাউণ্ডারী পাওয়া রাষ্ট্রকেন্দ্রিক এই জনগোষ্ঠীটা নয়৷ এর রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভাঙ্গাগড়া অনেকবার হয়েছে কিন্তু জনগোষ্ঠীটা অনেক দিনের৷ আর অনেক দিনের পুরোনো বলেই এর ঐতিহাসিক অগ্রগতি হয়েছে ধাপে ধাপে৷ সে অনেক কিছু অনেকের থেকে নিয়েছে৷ অনেক কিছু অনেককে দিয়েছেও যে জন্য তার নিজস্ব পোষাক রয়েছে, মেয়েদের শাড়ী পরবার নিজস্ব পদ্ধতি রয়েছে, এর নিজস্ব পঞ্জিকা রয়েছে, ভাষা রয়েছে, লিপি ধরণের সামাজিকতা রয়েছে৷ এতগুলো বৈশিষ্ট্য যে মানেতে ‘নেশন’ শব্দ ধরা হয় সে মানেতে এই জনগোষ্ঠী নেশনের বাড়তি আরও কিছু --- নিজের দায়াধিকারও রয়েছে৷’’

মহান দার্শনিক সামাজিক অর্থনৈতিক তত্ত্ব প্রাউটের প্রবক্তা শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর ‘বাঙলা ও বাঙালী’ গ্রন্থে বাঙালী জাতি সম্পর্কে ওপরের কথাগুলি বলেছেন৷ এই ঐতিহাসিক তথ্যে এটা প্রমাণিত যে বাঙালী একটা পৃথক জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার সব গুণতো আছেই তার অধিক আরও কিছু আছে৷ বাঙালী তার এই বৈশিষ্ট্যের জন্য সামাজিক চেতনায়,শিক্ষায় দীক্ষায়, আচার আচরণে ভারতবর্ষের অন্যান্য জনগোষ্ঠী থেকে নিজেকে এক স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে গড়ে তুলেছে৷ পরাধীন ভারতে তাই শিল্পে, সাহিত্যে, বিজ্ঞানে ,অর্থনীতিতে, ধর্মনীতিতে, রাজনীতিতে বাঙালী ছিল শুধু ভারতবর্ষে নয় বিশ্বের এক অনন্য জনগোষ্ঠী৷ তার এই গুণের কারণে সে যেমন অনেকের কাছে কদরও পেয়েছে, আবার অনেকের ঈর্র্ষর কারণও হয়েছে৷ তাই সুভাষচন্দ্র যখন কংগ্রেস সভাপতির পদ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন জাতীয় কংগ্রেসের গান্ধীলবির নিকৃষ্ট ষড়যন্ত্রে সেদিন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ সুভাষচন্দ্রকে লিখেছিলেন---‘‘বাঙালী কবি আমি, বাংলা দেশের হয়ে তোমাকে দেশনায়কের পদে বরণ করি৷’’ ওই পত্রেই তিনি লিখেছিলেন ---‘‘হিংস্র দুঃসময়ের পিঠে চড়ে বাঙালীকে বিভিষিকার পথ অতিক্রম করতে হবে....আত্মীয় ও পরের হাতে বাঙালীকে অশেষ লাঞ্ছনা ভোগ করতে হবে৷ প্রচণ্ড মার খেয়েও বাঙালী মারের ওপর মাথা তুলে দাঁড়াবে৷’’

বাঙালীর দুর্ভাগ্য সুভাষচন্দ্র নেতাজী হয়েছেন, কিন্তু বিশ্বকবির ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের দেশনায়ক হতে পারেননি৷ তাই স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতে বাঙালী এত লাঞ্ছনা, অবজ্ঞা, অবহেলার শিকার৷ আজ ভারতে বাঙালীর সামনে সত্যি এক হিংস্র দুঃসময় এসে দাঁড়িয়েছে৷ বাঙালী কি পারবে মারের ওপর মাথা তুলে দাঁড়াতে এই দুঃসময় পার করে!