চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে অগণতান্ত্রিক পথে আইনসভার উচ্চকক্ষে কৃষিবিল পাশ করানো হলো৷ নিম্নকক্ষে সংখ্যাধিক্যের জোরে বিরোধী মতকে উপেক্ষা করে কৃষিবিল পাশ হলেও আইনসভার উচ্চকক্ষে সে সম্ভাবনা খুব একটা ছিল না৷ বিরোধীরা তো বিলের বিরুদ্ধে অনড় ছিলই, শাসক জোটের শরিকদলও বিলের বিরুদ্ধে ছিল৷ একমন্ত্রী বিলের প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন৷ এই অবস্থায় রাজ্যসভায় ভোটাভুটি হলে শাসকদলের পরাজয়ের সম্ভাবনা ছিল৷ তাই ভোটাভুটিতে না গিয়ে পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে রাজ্যসভায় কৃষিবিল পাশ করানো হলো৷ এমনটাই অভিযোগ বিরোধীদের৷
বিশিষ্ট প্রাউটিষ্ট ও সমাজ আন্দোলনের নেতা শ্রী প্রভাত খাঁ বলেন এই আইনে কৃষি ও কর্ষকদের বিশেষ কিছু লাভ হবে না, তারা উপেক্ষিতই থেকে যাবে৷ বিশেষ করে ১৯৫৫ সালের পণ্য আইন সংশোধন করে যেভাবে চাল-ডাল-গম-আলু তেল-মজুত করার অধিকার দেওয়া হলো তার ফলে বাজারে কৃত্তিম অভাব সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় এই সব জিনিষের মূল্য অসম্ভব বাড়িয়ে দেওয়া হবে, কিন্তু কর্ষকদের কোন লাভ হবে না, মুনাফা লুটবে মজুতদাররা৷
প্রাউটিষ্ট ইয়ূনিবার্সালের কেন্দ্রীয় কমিটির সংঘটন সচিব আচার্য প্রসূনানন্দ অবধূত বলেন---আইন করে বা আইন সংশোধন করে সাধারণ মানুষের কোন লাভ হয়নি৷ ৭৪ বছরে অনেকবার আইন সংশোধন হয়েছে, অনেক আইন হয়েছে কিন্তু সাধারণ মানুষ যা ছিল তাই আছে৷
আচার্য প্রসূনানন্দ বলেন আইন যদি করতেই হয় প্রাউটের দৃষ্টিতে করতে হবে যাতে কর্ষক শ্রমিকসহ সকল শ্রেণীর মানুষের সার্বিক কল্যাণ হবে৷ তিনি বলেন ভারতীয় সংবিধানে পুঁজিপতি শোষন প্রতিহত করার কোন ব্যবস্থা নেই৷ পুঁজিপতি শোষণ রুখতে অবিলম্বে আইন করা প্রয়োজন, তাতে শ্রমিক,কর্ষক সবার কল্যাণ হবে৷ তাছাড়া প্রতিটি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির আইনি ব্যবস্থা থাকা দরকার৷ এখানে আইন তৈরী হয় রাজনৈতিক কারণে ও পুঁজিপতি মজুতদারদের স্বার্থের দিকে তাকিয়ে৷
প্রাউট প্রবক্তার ভাষায়---‘‘ভারতীয় অর্থনীতি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, কতিপয় ব্যবসায়ী কর্তৃক পরিচালিত ‘চেম্বার্স অব্ কমার্স’ নামে কয়েকটি সংস্থার দ্বারা৷ স্বাভাবিকভাবেই এরা সাধারণ মানুষের কল্যাণ নয়, ব্যবসায়ীক স্বার্থের কথাই ভাববে৷ রাজনৈতিক দলগুলোও পরোক্ষভাবে ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে৷ এখানে সাধারণ মানুষতো নিরুপায় ৷ পুঁজিপতি শোষণ প্রতিহত করার কোন ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর নেই৷
তিনি বলেন শ্রমিক কর্ষকদের প্রকৃত কল্যাণ করতে হলে বিকেন্দ্রিত পথে ব্লকভিত্তিক অর্থনীতি করি করিকল্পনা শুরু করতে হবে কৃষিও শিল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে৷ প্রয়োজনে আইন করে ব্লকভিত্তিক পরিকল্পনার ব্যবস্থা সংবিধানে রাখতে হবে৷ তবেই একটা সুসংহত অর্থনৈতিক পরিকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হবে৷ পুঁজিপতি নিয়ন্ত্রিত অর্থনৈতিক পরিকাঠামোয় যত আইনই হোক, তা কখনই সার্বিক কল্যাণের জন্যে নয়, সবটাই রাজনৈতিক কারণে৷ বিলে যে চুক্তিচাষের কথা বলা হয়েছে তাতে নীলকর সাহেবদের যুগ ফিরে আসবে বলে মনে হচ্ছে৷
আচার্য প্রসূনানন্দ জোর দিয়ে বলেন একমাত্র প্রাউটের নির্দেশিত পথে ব্লকভিত্তিক কৃষিশিল্পের সমন্বয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা কর্ষকদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে৷