পূর্ব প্রকাশিতের পর,
গত ২০১৭ সালে দার্জিলিং-এর পরিস্থিতি আতঙ্কে জর্জরিত ছিল৷ সিকিম ও অন্যান্য অঞ্চলে বাঙালীদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছিল৷ অচল করে দেয়া হয়েছিল সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন৷ চোখের বদলে চোখ--- এই নীতিতে বহিরাগত বিমলগুরুংরা বাঙালীদের হুমকি দিয়েছিল৷ প্রতিরোধকারীদের প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছিল৷ এছাড়া পাশ্ববর্তী কয়েকটি রাজ্য তাদের সমর্থন করে উস্কে দিয়েছিল৷ মনে করানো দরকার সেদিন ইন্ডিয়ান আর্মির গোর্খা সেনারাও প্রকাশ্যে জয় গোর্খা, জয় গোর্খাল্যাণ্ড--- স্লোগান দিয়ে বন্দুক হাতে বাঙালীদের হুমকি দিয়েছিল৷ সব মিলিয়ে এখনও গোর্খাল্যাণ্ড-কে ইস্যু করে অন্যান্য রাজনৈতিক দল সহ বিজেপিও বাঙলা ভাগে ইন্ধন যুগিয়ে যাচ্ছে৷ প্রসঙ্গত অবশ্যই জানা দরকার যে, আসলে এই গোর্খা কারা? তারা স্থানীয় নাকি বহিরাগত? সত্য ইতিহাস সাক্ষী--- আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে বাঙলার বাইরে থেকে গোর্খারা জীবিকার সন্ধানে দার্জিলিং পর্বতাঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করেছিল৷ নেপাল থেকে আগত এই গোর্খারা একটি খুবই ক্ষুদ্র গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়৷ ১৮৭২ সালের জনগণনা রিপোর্ট অনুযায়ী, তখন এই গোর্খারা এত নগণ্য ছিল যে এদের রেকর্ডভুক্তই করা হয়নি৷ রিপোর্টে শুধুমাত্র এতোটুকুই উল্লেখ ছিল যে তারা বহিরাগত মাত্র৷ আর এদিকে আদি বাঙালী ‘কোচ’ জাতিভুক্ত লেপচা-ভুটিয়ারা হল দার্জিলিং-এর মূল অধিবাসী তারা ওই অঞ্চলের মাটির সন্তান৷ এরা ওই অঞ্চলের উঁচু পর্বত এলাকায় বাস করত আর সমতলে বাস করত বাঙালীরা৷ তাছাড়া, এখন নেপালি পরিচয়ে যারা দার্জিলিং অঞ্চলে বসবাস করছে, তাদের একটা বড় অংশ আদৌ গোর্খা নয়৷ এরা আসলে একটা ক্ষুদ্র সম্প্রদায়৷ আর এই ক্ষুদ্র সম্প্রদায়েরাই আজ তাদের ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য ‘গোর্খাল্যাণ্ড’ দাবীতে হিংসাশ্রয়ী হয়ে উঠেছে৷ এক বিপজ্জনক রাজনৈতিক খেলায় মেতে উঠছে৷ প্রসঙ্গত, এও মনে রাখা দরকার , গোর্খারা দাবি করে আসছে, ‘গোর্খাল্যাণ্ড’ দাবী নাকি সাংবিধানিক৷ না, বরং সংবিধান অনুসারে এটা সংবিধান বিরোধী৷ কারণ ভারতের সাংবিধানিক ব্যবস্থা অনুযায়ী নির্দিষ্ট উপজাতিভুক্ত এলাকাগুলো বিশেষ সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করে৷ অর্থাৎ যেখানে উপজাতিদের অ-উপজাতিদের দ্বারা পরিচালিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানকার উপজাতিরা এই সাংবিধানিক অধিকারভুক্ত৷ এমন কয়েকটি উপজাতির উদাহরণ হল --- গারো, খাসিয়া, কাছারি ইত্যাদি যারা অসম ও মিজোরামের কিছু জেলায় বসবাস করে,ভারতীয় সংবিধানের এই ব্যবস্থা শুধুমাত্র উপজাতিদের জন্যে, অন্য কোনো ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর জন্যে নয়৷ আর এই সুবিধা কেবলমাত্র পূর্র্বেত্তর ভারতের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, অন্য কোনো অঞ্চলের জন্যে নয়৷ এমনকি ভারতের অন্যান্য অংশে বসবাসকারী উপজাতিদের জন্য নয়৷ মোট কথা, গোর্খারা কোনভাবেই উপজাতিভুক্ত নয়৷ আর ত্রিপুরার এডিসি ঘটনের মতোই দার্জিলিং-এ গোর্খা হিল কাউন্সিল মানে জিটিএ--- এ দুটোই সম্পূর্ণ সংবিধান বিরোধী৷ যদি পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং ও ত্রিপুরার বাঙলা ভাগের এই চক্রান্তকে বিনষ্ট করতে হয় তাহলে এই জি.টি.এ ও এ.ডি.সি নামক সংবিধান বিরোধী বিলগুলো অবিলম্বে বাতিল করতে হবে৷ কেননা, সংবিধান অনুসারে গোর্খারা কোনোমতেই ‘গোর্খা হিল কাউন্সিল’ আইনের অধিকারভুক্ত হতে পারে না৷ এটা শুধুমাত্র স্বার্থপর রাজনৈতিক নেতা গোর্খা প্রধানদের মধ্যে সমঝোতা বা চুক্তি মাত্র৷ যা সম্পূর্ণভাবে অসাংবিধানিক , অর্থাৎ, এই যে জি.টি.এ বিল ও গোর্খাল্যাণ্ডের দাবি এগুলো কোনোভাবেই সাংবিধানিক নয় বরং তা সম্পূর্ণভাবে অসাংবিধানিক৷ যদি সুপ্রিমকোর্টএ নিয়ে উপযুক্ত বিচার হয় তবেই এর সত্যাসত্য বেরিয়ে আসবে৷
মোদ্দা কথা আজকের এই যে গোর্খাল্যাণ্ড, তিপ্রাল্যাণ্ড ইত্যাদি সমস্যার জন্যে সবকটি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার দায়ী ৷ বিশেষভাবে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সীল আরও শক্ত মজবুত করা হলেও ভারত-নেপাল সীমান্ত এখন উন্মুক্ত তথা সীল করা হয়নি৷ কিন্তু কেন? ভারত স্বাধীনের পর থেকে বহিরাগত নেপালিরা হাজার সংখ্যার থেকে বর্তমানে লাখ সংখ্যায় অনুপ্রবেশ করে ভারতের পরিচয়ে এখানে বসবাস করছে, খাচ্ছে, কর্মসংস্থান দখল করছে কিন্তু কেন? কাদের, কীসের স্বার্থে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী সরকার বাঙলাকে আবারও নানা অজুহাতে ভাগ করতে চাইছে? কেন হিন্দুস্তানের ধঁূয়া তুলে বাঙালীদের মধ্যে হিন্দু-মুসলিমের সুরসুরি দিয়ে বাঙলাকে তথা ভারতকে শক্তিহীন-ঐক্যহীন করতে চাইছে? তাহলে এতেই কি সুস্পষ্ট যে প্রকৃত ভারতীয় চিহ্ণিত করার নামে, হিন্দুদের অধিকারের নামে নানা আইনের অজুহাতে বাঙালী জাতিকে এক রাষ্ট্রহীন নাগরিকে পরিণত করার ঘোর চক্রান্ত চলছে? নাহলে, কেন বহিরাগত নেপালি গোর্খাদের বিদেশী অনুপ্রবেশকারী চিহ্ণিত করে তাদের নিজস্ব দেশ নেপালে প্রত্যাবর্তন করানো হচ্ছে না? কেন সংবিধান বিরোধী জি.টি.এ বিল বাতিল করা হচ্ছে না? তাই অবিলম্বে ‘‘ভারত-নেপাল শান্তি ও মৈত্রী চুক্তি ১৯৫০ পুনর্বিবেচনা করতে হবে ও দার্জিলিং-জলপাইগুড়ি আলিপুরদুয়ার জেলার বিদেশী নেপালীদের কঠোরভোবে চিহ্ণিতকরণের মাধ্যমে বোটার তালিকা থেকে নাম কেটে দিতে হবে৷ তাছাড়া অবিলম্বে জি.টি.এ সহ সকল সংবিধান বিরোধী চুক্তি বা আইনগুলো বাতিল করা হোক ও নেপাল সীমান্ত সিল করা হোক৷ কারণ ভারতের অন্যান্য অঞ্চল ভাগ করে দখল করার যে ষড়যন্ত্র চলছে বিশেষভাবে একতরফা বাঙলা ও বাঙালীকে আবারও ভাগ করার জন্যে যে বহির রাষ্ট্রীয় বা রাষ্ট্রীয় চক্রান্ত চলছে তাকে দলমত নির্বিশেষে সমস্ত দেশবাসীদের এক হয়ে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা ছাড়া অন্য কোন পথ নেই৷ এখন সমস্ত দেশবাসীদের কন্ঠে উচ্চারিত হওয়া অত্যাবশ্যক যে, আলাদা আলাদা রাজনৈতিক রাজ্য নয় আমরা চাই সংযুক্তিকরণ৷ আমরা চাই SSSEZ মানে Self Sufficient Socio-Economic Zone’ অর্র্থৎ স্বয়ং সম্পূর্ণ সামাজিক-অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘটন৷ আর এটাই ভারতের সকল জটিল সমস্যার একমাত্র মকরধবজ তথা সমাধান, যার কোনো বিকল্প নেই, জয় বাঙলা জয় ভারত৷
- Log in to post comments