প্রকৃত মানুষ হতে হলে দীক্ষা গুরু অত্যাবশ্যক যিনি আধ্যত্মিকতা লাভে শিক্ষা দান করেন৷ কথায় আছে সপ্ত পিতা ও পঞ্চমাতা৷ যার মাধ্যমে মানুষ আত্মিক উন্নতির পথ পায় ও সার্থক মানুষ হওয়ার সুযোগ পায়৷ নিজেকে জানাই হলো আসল আত্মজ্ঞান৷ তাই পরমাত্মা বাবা এসেছিলেন বিশ্ব জগৎ-এর গ্রহ গ্রহান্তরে ঘুরতে ঘুরতে এই পৃথিবীতে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী ও গাছপালা যাতে শান্তিতে ও আনন্দের মধ্যে বাস করতে পারে তারই পথের সন্ধান দিতে৷ তাই তাঁর আগমন স্বেচ্ছায়৷ এই কারণে তিনি তাঁর আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৫৫ সালে জানুয়ারী মাসের প্রথম দিকে৷ সেই সালের জানুয়ারী মাসের প্রথমদিকে সেই জামালপুরে যেখানে তিনি কর্মসূত্রে বাস করতেন৷ সেখানেই তিনি দিলেন নতুন জীবন দর্শন আনন্দমার্গ৷ এই দর্শনের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব যাকে বলা ‘প্রাউট’৷ এরই বাস্তবায়নের জন্য আনন্দমার্গ সংঘটনের নানা শাখা প্রশাখা৷ তাই একে সার্থক করতে হলে মানুষকে প্রথমই হতে হবে সৎনীতিবাদী আদর্শবান সবের্বপরি আধ্যাত্মিকজ্ঞানে উদ্বুদ্ধ যাতে যম ও নিয়মের বিধি নিষেধের ও আচার আচরণে মানুষ হয়ে উঠে উদার,জনকল্যাণে উদ্ধুদ্ধ একজন আদর্শমান মানুষ৷ আজ এই জগতে প্রকৃত মানুষের বড় অভাব৷ তাই মোদ্দাকথা মানুষ গড়ার কাজে তিনি এসেছিলেন৷ যতদিন এই মাটির পৃথিবীতে ছিলেন তাঁর কোন বিশ্রাম ছিল না৷ কারণ আমি তাঁর সঙ্গে রাত্রিবাস অনেক দিন করে দেখেছি তিনি জেগেই থাকতেন! তাঁর সংঘটনের কথাই বলতেন৷ যেটি মানুষকে তিনি তাঁর আচরণের মধ্য দিয়ে দেখিয়ে গেছেন সেটি হলো আদর্শ প্রতিষ্ঠায় চরম নিষ্টা ও একাগ্রতা৷ তিনি বলতেন---তোমরা কেউ স্বেচ্ছায় আসেনি৷ আমি তোমাদের নিয়ে এসেছি জগৎ কল্যাণে কাজে লাগাতে আর সেই মতো তোমাদের তৈরী করতে৷ তাঁর কথাই হলো--- আমি রহস্যাবৃত আছি আমি রহস্যাবৃত ছিলাম ও রহস্যাবৃত থাকবো৷ তাঁর প্রতি অবিচার ও জেলের মধ্যে তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে শুধু আইন মানতে তিনি ৫ বছরেরও বেশী শুধুমাত্র এক কাপ ঘোল খেয়ে অনশনে থেকে দেখিয়ে গেলেন যে তিনি অসাধারণও রহস্যময় তো বটেই৷ তিনি যে অনন্য ও অসাধারণ সেটা মাত্র ৩৫ বছরের মধ্যে ৫ বছরের অধিক কারাগারে থেকে তাঁর ভক্তবৃন্দের দ্বারা ১৮২টি দেশে আনন্দমার্গের সংঘটন গড়ে তোলেন৷ এটা অত্যাশ্চর্য ব্যাপার৷
তিনি যে কাজে হাত দিয়েছেন সেই কাজ সম্পন্ন করেই ছেড়েছেন৷ কারণ তিনি জানতেন এই পৃথিবীতে তিনি নির্দিষ্ট একটি সময় থাকবেন৷ কারণ সারা বিশ্বকে নিয়ে তাঁর কাজ৷ তাঁকে কে চিনবে! তিনি দয়া করে চেনা দিলে তবেই মানুষ তাঁকে চিনতে পারবে! তিনি বলতেন---আমি তোর ৰাৰা, তোর নাড়ি নক্ষত্র বলে দিতে পারি, বলেই টানা কিছুক্ষণ তাঁর সম্বন্ধে বলে যেতেন৷ তাঁর সঙ্গে তাঁর লোকাল ভাষায় কথা বলতেন! তিনি অবাক করা বিষয় ছিল৷ তিনি যখন যে দেশের মানুষের সঙ্গে কথা বলতেন তাঁর স্থানীয় ভাষায় কথা বলতেন৷ তিনি যাঁকে আশ্রয় করে কাজ করাতেন তাঁর মধ্যে তিনি নিজে আবির্ভূত হয়ে কাজ করিয়ে নিতেন আর তার শেষে হাসতে হাসতে বলতেন --- কি কাজ টা তুই পারলি তো! এই কথাটা বহুবার আমি শুনেছি৷ তাঁর মুখ থেকে কঠিন কাজে গিয়ে! তবে আমি তৎক্ষণাৎ বাবাকে বলতুম ‘আমি করেছি না মাথা’ তুমি দয়া করে আমার মাধ্যমে করে নিয়ে আমাকে ধন্য করলেন! শুণে মুচকি মুচকি হাসতেন৷ আজ তিনি পার্থিব শরীরে নেই, তাই মাঝে মাঝে কষ্ট একটু পাই কিন্তু চোখ বুঝলেই অনুভব করি তিনি সতত আমাদের সঙ্গে আছেন সদা জাগ্রত হয়ে৷ সতত আমাদের সচেতন করে চলেছে৷ আমার কষ্ট হলো কি করলে মিথ্যা বলছে, তার ভালোর জন্য বকলুম--- আমি বলেছি ৰাৰা তুমি সন্তান দের ভালো চাও বলে আর জগতে এর কল্যাণেই দেখতে পাচ্ছি না তারও বড় কষ্ট হয় সকলেরই কিন্তু চোখ বুঝলেই বোঝা বোঝা যায় তিনি মনের মধ্যে সদাজাগ্রত ও সর্বদাই সচেতন করছেন যেন আগের মতোই৷
আজ তিনি ভৌতিক শরীর ছেড়ে চলে গেছেন৷ কিন্তু প্রকৃতি তাঁর অধীনা৷ তিনি তাঁর অসমাপ্ত কাজের দায়ীত্ব তাঁকে দিয়ে গেছেন৷ তাই আজ আমাদের খুব সংযত হয়ে চলা উচিত তাঁর নির্দেশ মেনে৷ প্রকৃতি নিয়মের বিরুদ্ধে চলা সহ্য করে না৷ তাই পরমপিতার নিয়ম ও নির্দেশের বাইরে গিয়ে কিছু করতে গেলে প্রকৃতির রোষে পড়তেই হবে৷
আজ ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার পৃথিবীর মানুষ দারিদ্র্য, শোষণ ও নিপীড়ণে জর্জরিত৷ তাই মানুষকে শোষণ ও নিপীড়ণ থেকে মুক্তি দিতে আমাদের আশু কর্তব্য প্রাউটের নির্দিষ্ট পথে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের হাতে জীবন ধারণের সর্বনিম্ন প্রয়োজন----অন্ন,বস্ত্র,বাসস্থান,শিক্ষা ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা করা ও ক্রমপর্যায়ে জীবন যাপনের মান উন্নয়ন করে চলা৷
- Log in to post comments