ধনীর সেবাদাস সরকার কালো সোনার ভাণ্ডার তুলে দিল ধনকুবেরের হাতে

লেখক
প্রভাত খাঁ

এই সম্পদে পরিপূর্ণ বসুন্ধরার মালিক প্রধানতঃ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ৫ বছরের জন্য যাঁরা জনগণের বোটে নির্বাচিত হয়ে দেশসেবা  করার জন্য আসেন তাঁরা৷ সেই সম্পদ লুঠ পাট করার জন্য আসেন না তাকে রক্ষা করার জন্যই আসেন৷ কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের কথা হলো এই বিরাট দেশের দলতান্ত্রিক শাসকগণ দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রে যেকটি এসেছে সেই কটির সবগুলি হয়ে দাঁড়িয়েছে অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও স্বৈরাচারী শাসক৷ বিশেষ করে পর পর দুই এর অধিক বার শাসনে থেকে! মহাকালের বিধানে তারা টেকেনি তবু নোংরা দলীয় ধান্দাবাজিটা তাঁদের যায়নি৷ ২০২৪ এর বোটের দিন ঘোষনার ঠিক ৩দিন আগে গত ১২মার্চ কয়লা মন্ত্রক মোদি ঘনিষ্ট আদানি গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ‘‘মারাহ মাহান কয়লা ব্লক৷ অরণ্যে ঘেরা এলাকার ৯  হাজার ৯৫০ লক্ষ টন মজুত কয়লার এই ব্লক জলের দরে তুলে দেওয়া হয়েছে আদানি গোষ্ঠীকে৷ আয়ের মাত্র ৬ শতাংশ সরকারকে দেওয়ার বিনিময়ে এই ব্লকের দখল নিল আদানি গোষ্ঠী৷ এই গোষ্ঠী বেশী আয়ের ভাগ নিয়ে বিপুল মজুত ভাণ্ডারের মালিকানা পেল আদানিরা৷

গভীর অরণ্যের ভারসাম্য নষ্ট হবে বলে আরো ১৫টি কয়লা খনি চালু করা যাবে না বলে আপত্তি জানায় ইন্সটিটিউট৷ কোন  আপত্তি তোয়াক্কা না করেই নিলামে আদানির হাতে এই কয়লা ব্লক তুলে দেওয়া হয়৷ এই ব্যাপারে আদানিদের অনুমতি দেওয়া নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ণ উঠছে৷ সংবাদ সংস্থা রিপোর্টার কালেকটিভ্‌ এই তৎপরতার কথা তুলে ধরেছে৷

তৎকালীন কয়লামন্ত্রী ২০২১সালে সংসদে এক লিখিত প্রশ্ণের উত্তরে জানিয়েছেন, দেশে বর্তমানে যে সব কয়লা খনি চালু আছে তাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে কয়লা মজুত আছে৷ কয়লার অভাবে সংকট বলে যে প্রচার ছড়িয়েছে তা ঠিক নয়৷ শুধু তাই নয় ‘মারাহ মাহান’ কয়লা ব্লক পরিবেশ রক্ষার কারণে ইনস্টিটিউট চালু করা যাবে না জানায়৷

তবু কিছু দিনের মধ্যে ১৫টি কয়লাখনি চালুতে পরিবেশ মন্ত্রকের আপত্তি উড়িয়ে দিয়ে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার জন্য নিলাম ডাকার ব্যবস্থা হয়৷ মাত্র একটা দরপত্র পড়ে৷ সেটা ছিল আদানি গোষ্ঠীর৷ তা বাতিল হয়৷ ফের দরপত্র ডাকা হয় মাত্র দুটি  দরপত্র জমা পড়ে৷ এতে আদানি দরপত্রটি গৃহীত হয়৷

আদানি গোষ্ঠীর হাতে রয়েছে আরো ৯টি কয়লাখনি সেখানে মজুত কয়লার পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার লক্ষ টন৷ তাই ক্যাপিটালিষ্ট কেন্দ্র সরকারের বদান্যতায় দেশের কয়লা শিল্পে একচেটিয়া আধিপত্য কায়েম করেছে আদানি গোষ্ঠী৷ তাই অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গেই বলতে হয় ভারত যুক্তরাষ্ট্রের নামে গরিবের সরকার যদি দেশের কোটি কোটি হত দরিদ্র মানুষের পৈত্রিক সম্পত্তি ধনীদের  হাতে  বিলিয়ে দেয় তাহলে তারা কি কারণে বোটের বাজারে নিজেদের জনগণের বন্ধু বলে দাবী করে বোট এর দাবী জানায়!

তাই এই যে সব ঘটনা ঘটে চলেছে এটাতো সাধারণ মানুষের চোখে পড়ে না৷ যারা ৫/১০ কেজি কয়লা কিনে বেঁচে থাকার জন্য যৎ সামান্য ভাত ফুটিয়ে খায়, তাদের যে কতো টাকা দিয়ে দেশের নিজস্ব সম্পদ কিনতে হয় সেটা জানার ঐ গরিবের সরকারের  দরকার নেই!

হত দরিদ্রদের রোগে ওষুধের দাম যা বেড়েছে তাকে , দ্রব্যমূল্য অত্যধিক হওয়ার দরুণ,চরম বেকার সমস্যায় কাতর  জনগণ একেবারে দিশেহারা৷ এই সবের কোন সমস্যার সমাধান হয় না৷ কারণ ধনীদেরই পোঁয়াবারো এই দেশের সরকারী শাসনে তাই আজ সচেতন জনগণকে বাঁচতে অনেক ভেবে চিন্তেই মতামত দান করতে হবে নির্বাচনে৷ কয়লাকে বলা হয় কালো সোনা৷ সেই গরিবের কালো সোনা শাসক উপহার দিচ্ছে ধনীগোষ্ঠীদেরই নিছক দলীয় স্বার্থেই কি নয় ঠিক নির্বাচনের তিনদিন আগে! এতোটা উদারতার অর্থটা কি কারণে? এর জবাব কি আছে গরিবের কাছে সেই নামকেওয়াস্তে বন্ধু শাসকদের?

অত্যন্ত লজ্জা ও দুঃখের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি শুধু এই কালো কয়লা নিয়ে কেলেঙ্কারীতে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই কোন না কোন ব্যাপারই দেখা যাচ্ছে যুক্ত৷ আর সেটাকে সেই প্রধান বিষয়ে মধ্যেই ফেলে রেখেছে সেই কেন্দ্রের সরকারই৷ কালো সোনা নিয়েই যেন বেশী কালো বাজারি টা চলছে সেই মহান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র! কোন দলই আজ জনগণের চোখে সমালোচিত হচ্ছে না সেটা কিন্তু নয়৷ দেশটাই যেন দুর্নীতিকেই সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়ে ফেলেছে৷ ভেজাল যেন এমন স্থান নেই যেখানে এটি অবস্থান করছে না! দোকানে বাজারে তো খুবই কম স্থান আছে যেখানে প্রকৃত মাপ পাওয়া যায়৷ প্রসঙ্গত বলি প্যাকেটের রান্নার তেল থাকে ৫০০ বলা হয় সেটা ৪৫০ গ্রাম৷ এরপর আর কি বলা যায়৷

এদেশের গণতন্ত্রের নামে চলছে মারাত্মক দলতান্ত্রিক শোষণও অত্যাচার মাত্র৷ একে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে মাত্র এই নির্বাচনে সচেতন নাগরিকগণ সঠিকভাবে সৎনীতিবাদী প্রার্থীদের নির্বাচনে জয়ী করে৷ যে সব রাজনৈতিক দল দলীয় রাজনীতিকে  রাজনৈতিক ব্যবসায় বলে মনে করে থাকে তারা গদীতে এসে যে যতটা পারে ততটাই দলীয় স্বার্থেই কাজ করে৷ আর পদে পদে নিজেদের দোষ ত্রুটিগুলিকে লোকচক্ষের আড়ালে নিয়ে গিয়ে বিরোধী দলের দোষ ত্রুটিগুলিকে বড়ো করে দেখিয়ে জনমানসে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে সদাব্যস্ত৷ তাই এই দলতন্ত্রের আশু সংস্কার ও পরিবর্ত্তনকাম্য৷ এটা পারে শুধু বোটারগণই৷