এদেশে গণতন্ত্রের ত্রুটিগুলির কিছু দিক

লেখক
নিরপেক্ষ

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকদের গুরুত্ব সর্বাধিক৷ কারণ গণতন্ত্রের মূল কথা জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য, জনগণের সরকার৷ কিন্তু ভারতের মতো বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পুঁজিবাদী নিয়ন্ত্রিত সামাজিক অর্থনৈতিক কাঠামোয় গণতন্ত্র শুধু অসার বুলি ও জনগণকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেবার বাহনে পরিণত হয়েছে৷ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও সাধারণ মানুষের  ৮০ শতাংশের মধ্যে আজও সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সচেতনতা নেই৷ সেখানে গণতান্ত্রিক পথে  সরকার নির্বাচন এক প্রহসন মাত্র৷ দেশের কমপক্ষে ৫১ শতাংশ মানুষ সচেতন না হলে জনগণের সরকার কখনই প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়৷ কারণ সাধারণ মানুষ ধূর্ত রাজনৈতিক নেতাদের চতুর্চালে বশীভূত হয় ভোট দেন৷ ভালোমন্দ বিচার করার ক্ষমতা তাদের নেই৷ ভারতীয় গণতন্ত্রের অন্যতম ত্রুটি নির্বাচকদের বয়স নির্ধারণ৷ ১৮ বছর  মাপকাঠিটা মোটেই গ্রহণীয় নয়৷ নাগরিকদের নাগরিক হওয়ার নূ্যনতম গুণ সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সচেতনতার অবশ্যই অধিকারী হতে হবে৷  এদেশে সেটির দিকে নজর দেওয়া হয়নি৷ বহুদলীয় গণতন্ত্রটাও ঐক্য সংহতির পক্ষে খুব একটা বিজ্ঞানসম্মত নয়৷ তাই পোড় খাওয়া রাজনৈতিক নেতারা এটাকে পাল্টাতে বলে থাকেন দলহীন গণতন্ত্র৷ কিন্তু রাজনৈতিক দলের মানসিকতাই হয় মূলতঃ আত্মকেন্দ্রিক ও দলকেন্দ্রিক৷ তাই কথায় উদারতা থাকলেও বাস্তবে সংকীর্ণ দলীয় মানসিকতার মধ্যে আবদ্ধ৷ এখানে গণতন্ত্রের রীতিনীতিগুলি প্রতি পদে পদে অবহেলিত হয়৷ অনেক সময় রাজনৈতিক দলগুলির নেতাদের পরস্পরের মধ্যে সাধারণ সৌজন্যতা বোধটুকুও দেখা যায় না৷ একে অপরের শত্রুতায় পর্যবসিত হয়৷  এর প্রধান কারণ ভারতীয় গণতন্ত্র ধনতন্ত্রের বাতাবরণেই লালিত -পালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়৷ তাই সাধারণ মানুষের  সার্বিক কল্যাণের চিন্তা রাজনৈতিক দলগুলি মনে স্থান পায় না, স্পষ্ট করে বললে হয় পুঁজিপতিরা স্থান পেতে দেয় না৷ কারণ রাজৌনতিক দলগুলিকে পুঁজিপতিদের অঙ্গুলি হেলনে চলতে হয়৷ তাই পুঁজিপতিদের  ভাগ করো ও শোষন করো নীতির কবলে পড়ে ভারতীয় গণতন্ত্র গোষ্ঠীতন্ত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ, জাত-পাত সম্প্রদায়ের সংঘাতে লিপ্ত৷

তাই অতি গরিবদেশ ভারতের গণতান্ত্রিক শাসনে বৃহত্তর দরিদ্র জনগণ আরো শোষিত ও নির্যাতিত হচ্ছে আর মুষ্টিমেয় কয়েকজন ধনী ব্যষ্টিরা দিন দিন ফুলে ফেঁপে উঠছে৷  দলগুলি যখনই যে শাসনে আসে তারা পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে পুঁজিপতিদের স্বার্থরক্ষা করতে শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে বাধ্য হয়, ছল বল কৌশলের পথ ধরে শাসন ক্ষমতাকে কাজে লাগায়৷ এখানে বিরোধীদের ভূমিকাকে কোনরকম মান্যতা দেওয়া হয় না৷ এটাই দেখা যাচ্ছে বর্ত্তমানে মূলতঃ কেন্দ্র সরকারের শাসন ও আচার আচরণে বেশী করেই প্রকাশ পাচ্ছে৷

উদ্ধত ও অহংকার আর হুঁমকী হলো তাদের শাসনের মূল চাবিকাঠি৷ গণতন্ত্রে নাগরিকগণই সুপ্রিম অর্থরিটি এদের ক্ষমতা ক্ষুন্ন করাটা যেন তাদের কাজ৷ কথায় কথায়  এরা দলীয় সংকীর্ণ স্বার্থেই সংবিধান সংশোধন করে সংখ্যাধিক্যের অজুহাতে বিরোধীদের অগ্রাহ্য করে৷ এই নজির পদে পদে৷ সেটি অনেক সময় মহামান্য বিচার বিভাগ পছন্দ করেন না৷ প্রবীন নাগরিকগণ অসন্তুষ্ট৷ প্রতিটি দেশের নিরাপত্তা রক্ষার দায় নাগরিকদেরই৷ শাসক এদিকে নজর দেবেন৷ নিরাপত্তা রক্ষার জন্য অভ্যন্তরীণ ও বহিঃ বিভাগের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা৷ এর জন্য সরকারকে কোন কাব্য করার দরকার হয় না নোতুন নাম দেবার৷ তবে যাঁরা এই বিভাগের অধীনে আসবেন তাঁদের জন্য নূ্যনতম বৎসর অন্ততঃ ১০ বছর করা জরুরী৷ এই পদে নিয়োগ করাটা বিধিসম্মত নয়৷ তাদের নিযুক্তরা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগবে বা শিকার হবে৷ এটি গণতন্ত্র বিরোধী বলে মনে হয়৷ এ ব্যাপারে বর্তমানের কোন দলীয় সরকারই বিশ্বাসযোগ্য নয় কারণ পরে যারা আসে দেখা যায় তারা আগের বিধান খারিজ করে এক অচলাবস্থারই সৃষ্টি করে৷ এতে কারোর উপদেশই খাটে না৷  স্বেচ্ছাচারিতারই পরিচয় দিয়ে গণতন্ত্রকে বার বার খেলো করছে জনগণের  নজরে৷ এটাই হলো অত্যন্ত দুঃখের  বিষয় এদেশের গণতন্ত্রে! আর গরিব নাগরিকগণ এই শাসনে সব দিক থেকে শোষিত হচ্ছে৷ গণতন্ত্রে দলীয় সহমতের ভিত্তিতেই গভর্নর ও রাষ্ট্রপতি  মনোনীত হওয়াটাই কাম্য---নিরপেক্ষ মহান ভারতে রাজনৈতিক দলগুলির উচিত রাজনৈতিক লড়াই! আর এই পদগুলি পূরণের সময় কখনোই উচ্চনীচ ছোট বড়ো জাতপাত উল্লেখ না করাটা মানবিক মূল্যবোধকেই মর্যাদা দেওয়া৷ গণতন্ত্রে জাতপাতকে ধীরে ধীরে  উল্লেখ না করাটাই কাম্য কারণ আজকের স্রষ্ঠার দৃষ্টিতে সকলেই তাঁর সন্তান৷ জাত পাতের ভেদাভেদ যারা মানে তারা মূলতঃ স্রষ্ঠাকেই অগ্রাহ্য করে৷ এটা গণতন্ত্রের পক্ষে এক ধরণের অসহনীয় কথা দলীয় রাজনীতি ও ধান্দাবাজির কথা৷ উন্নত মানসিকতার লক্ষণ হল গণতান্ত্রিক রীতি নীতিকে মর্যাদা দিয়ে মানুষের মধ্যে সব রকম ভেদাভেদকে দূর করে দেওয়া৷