ক্রুশ + ত্তুণ = ক্রোষ্টু৷ ‘ক্রুশ্’ ধাতুর অর্থ হচ্ছে একই ধবনি ক্ষার ক্ষার দিয়ে চলা৷ যেমন ঘেউ–ঘেউ–ঘেউ–ঘেউ–ঘেউ–, প্যাঁক–প্যাঁক––পিঁএ্য্, পিঁএ্যাঁক্ পিঁএ্যাঁক্–হুক্কাহুয়া–হুক্কাহুয়া–, ক্যা হুয়া–ক্যা হুয়া–ক্যা হুয়া৷
রসিক জনে ৰলে থাকেন, শেয়াল একটি ভীতু জীব৷ সামান্য একটু কিছু হলেই সে বিচলিত হয়ে পড়ে৷ তাই তারা রাষ্ট্রভাষায় ৰলে থাকে–ক্যাহুয়া–ক্যাহুয়া–ক্যাহ্ (কী হয়েছে.....কী হয়েছে.....কী হয়েছে.....কী হয়েছে.....) তাহলে ক্ষুঝলে এই যে ‘ক্রোষ্টু’ শব্দের কথা বলছি তার মানে হচ্ছে শেয়াল৷ তুমি যদি ‘ক্ত’ প্রত্যয় করে, ‘ক্রুশ্বন্’ ৰল তার মানে হয়ে দাঁড়াক্ষে সেই শেয়াল, যে এখন হুক্কাহুয়া করে চলেছে৷
তোমরা জান আমাদের পরিচিত মাংসাশী জীবেরা মুখ্যতঃ মার্জার বর্গ ও কুক্কুর বর্গে বিভাজিত৷ মার্জার বর্গীয় জীবদের মুখ গোল, গোঁফ আছে (ব্যাঘ্রী বা ক্ষিড়ালীর–ও গোঁফ আছে), পরিবারৰদ্ধ হয়ে বাস করতে একেবারেই চায় না৷ তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, সাহস আছে, কিন্তু ক্ষুদ্ধির প্রয়োগ করে সাহস দেখায় না অর্থাৎ সাহস দেখাতে গিয়ে ক্ষিপদে পড়তে চায় না৷ মার্জার বর্গীয়দের মানসিক উদারতা নাই বললেই চলে৷ আর কুক্কুর (সংস্কৃতে কুক্কুর/কুকুর দুই–ই ৰলে, ক্ষাংলায় ৰলে ‘কুকুর’) ৰর্গীয় জীবদের একটু ছুঁচলো মুখ, কেউ কেউ পরিবারৰদ্ধ হয়ে থাকে (যেমন–সিংহ), ক্ষুদ্ধি অত্যন্ত সাধারণ মানের৷ সাহস দেখাতে গিয়েই বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে বিপদে পড়ে৷ মানসিক উদারতা বেশ কিছুটা আছে.....ত্যাগও আছে৷ কুক্কুর বর্গীয় বৃহৎ জীব হচ্ছে আফ্রিকাদেশীয় সিংহ–বর্ত্তমানে ধবংসোন্মুখ৷ রাঢ়ী সিংহ অনুমানিক এক শত বৎসর হ’ল শেষ হয়ে গেছে৷ গুজরাতী সিংহ বা গিরনার সিংহ বা গিরসিংহ–এদের মেয়ে–পুরুষ কারুরই কেশর নেই৷ অন্য প্রজাতির সিংহের পুরুষদের কেশর থাকে–স্ত্রী–র থাকে না (ক্ষাংলায় ‘সিংহ’, সংস্কৃতে ‘সিংহ’, ফার্সীতে ‘ৰবৰর’, ইংরেজীতে ন্প্সু, লাতিনে ন্ন্দ্বপ্স) এছাড়া রয়েছে নেকড়ে বাঘ, উত্তর ভারতে ‘লক্কড় বাঘ্ঘ’, সংস্কৃতে ‘বৃক’, ইংরেজীতে ভ্রপ্সপ্তন্দ্র৷ তার পরই রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির কুকুর, তার পরে শেয়াল৷ অতি পরিচিত জীবদের মধ্যে এই বর্গের সবচেয়ে ছোট হ’ল খেঁকশেয়াল৷
মার্জার বর্গীয়দের মধ্যে সবচেয়ে ৰড় হ’ল সোঁদরৰনের ‘কুঁদো বাঘ’, বাংলায় ‘বাঘ’, সংস্কৃতে ‘ব্যাঘ্র’ বা ‘শার্দুল’, ফার্সীতে ‘শের’, ইংরেজীতে ন্ন্ধন্দ্বব্জ, ‘কালোবাঘ’, দক্ষিণ আমেরিকার ‘জাগুয়ার’, বা ‘ত্ন্ত্রুব্ধড়ন্দ্বব্জ’, ‘চিতাবাঘ’, চিত্রব্যাঘ্র বা প্তন্দ্বপ্সহ্ম্ত্রব্জস্ত্৷ তারপরেই রয়েছে হুড়ার/হুণ্ডার/বিগোয়া/গোবাঘা সংস্কৃতে ‘তরক্ষু’, ইংরেজীতে ‘হায়েনা’৷ তার চেয়ে ছোট রয়েছে ভাম্.....খট্টাশ (কথ্য ক্ষাংলায় খটাশ), ৰনক্ষেড়াল ও আমাদের ঘরোয়া পোষমানা ৰেড়াল৷ কুক্কুর বর্গ ও মার্জার বর্গ উভয়েই মাংসাশী, উভয়েই কাঁচা নিরামিষ খাদ্য খায় না তবে রান্না করা খাদ্য খায়৷ খুব মজার কথা এই যে কুক্কুর বর্গীয়দের মধ্যে বড়–ছোট৪ ভেদে নানা প্রজাতির কুকুর রয়েছে ঠিকই কিন্তু তারা কোন মৌলিক জীব নয়৷ পিতা নেকড়ে ও মাতা শৃগালী এই হ’ল কুকুরের পরিচয়৷ তাই আদিমকালের ফসিল (জীবাশ্ম) খুঁজতে গিয়ে নেকড়ের ফসিল পেয়েছি......পেয়েছি শৃগালের ফসিলও৷ কিন্তু পাইনি কুকুরের ফসিল৷ শিশুকালে কুক্কুর বর্গীয় সকল জীবই অনেকটা দেখতে একই রকম৷ ৰড় হৰার সঙ্গে সঙ্গে চেহারার বৈষম্যগুলো এক দিকে যেমন প্রকট হয়ে ওঠে অন্যদিকে আবাজের ভিন্নতা হয় পরিস্ফুট৷ এ্যালসেসিয়ানের স্থান নেকড়ের খুব কাছাকাছি৷ পোষমানা নেকড়ে (সহজে পোষ মানে না) ও এ্যালসেসিয়ানের তফাৎ অত্যন্ত কম৷ এদের দুয়ের ঘ্রাণশক্তি অতি প্রখর ও বিভিন্ন প্রকারের ঘ্রাণের মধ্যে পার্থক্য বোঝবার সামর্থ্য খুব বেশী৷ তাই অপরাধী ধরার কাজে এ্যালসেসিয়ান কুকুর মানুষকে যথেষ্ট সাহায্য করে থাকে৷ মার্জার বর্গ ও কুক্কুর বর্গের প্রতিটি জীবেরই নিজস্ব ধ্বনিগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে৷ সে বিচারে এদের সবাইকে কি ‘ক্রোষ্টু’ ৰলা যেত না?
–না, তা যেত না৷ কারণ শেয়াল ছাড়া কেউই নিয়মিতভাক্ষে একটানা আবাজ দেয় না৷ কুকুর একটানা ঘেউ ঘেউ করে বটে কিন্তু তা কোন সুনির্দিষ্ট বিধিতে নয়৷ তাই ‘ক্রোষ্টু’ ৰলতে শেয়ালকেই ক্ষোঝায়৷
একৰার শুণেছিলুম আড়ংঘাটার জনৈক ধনী মানুষের সখ হয়েছিল এ্যালসেসিয়ান পোষার৷ সেবার গরমকালে তিনি আঁৰ বেচার টাকা নিয়ে জষ্ঠি মাসের রোদ মাথায় করে এসেছিলেন হাতীবাগান হাটে–একটা রোবৰারে৷ তাঁর মুখের দিকে চেয়ে ট্যাঁকে টু–পাইস্ আছে ক্ষুঝতে পেরে ৰিক্রেতা তাঁকে একটি কেমন ধরনের যেন এ্যাল্সেসিয়ানের বাচ্চা গছিয়ে দিলেন৷ ভদ্রলোক আড়ংঘাটায় গিয়ে সেই শিশু এ্যাল্সেসিয়ান নিয়ে যথেষ্ট আদিখ্যেতা করতে লাগলেন৷ তা করৰেন নাই বা কেন আঁৰ বেচার করকরে দশহাজার টাকায় কেনা৷ সেবার নদে জেলায় আঁৰেটে
+মর ফলন ছিল আশাতিরিক্ত৷ দামও ছিল ভাল৷ ফলে ভদ্রলোক সন্ধ্যের সময় এ্যালসেসিয়ানে–শিশুর মাংসের বরাদ্দ আরও ৰাড়িয়ে দিলেন৷ শিশু এ্যালসেসিয়ান গায়েগতরে অল্প দিনে ৰেশ নধর হয়ে উঠল৷ ভদ্রলোক সন্ধ্যের সময় এ্যালসেসিয়ানের পাশে এসে ৰসতেন ও তার আবাজ শোণার জন্যে উৎকর্ণ হয়ে থাকতেন৷ কিন্তু এ্যালসেসিয়ান হলেও হাজার হোক ছোট শিশু তো, তাই সে কোন আবাজ করত না৷ কিছুদিন পরে আরো একটু ৰড়সড় হয়ে উঠলে ভদ্রলোক আশা করলেন এক্ষার তার কাছ থেকে তিনি একটা বিশুদ্ধ ধরণের ক্রোশন বা ঘেউ ঘেউ ধবনি শুণক্ষেন৷
নদে জেলা দোঁয়াশ মাটির জেলা৷ তাই তুলনামূলক বিচারে পুকুরের সংখ্যা একটু কম কিন্তু সেকালে আড়ংঘাটার আশেপাশে পুকুর ছিল যথেষ্ট৷ আর তার চারপাশে হয়ে থাকত নীল গাছের ঝোপ৷ একদিন সন্ধ্যেক্ষেলা শেয়ালেরা তাদের দৈনিক স্বাভাবিক দিনচর্চ্চার অঙ্গ হিসাবে প্রথম প্রাহরিক ‘হুক্কাহুয়া’ ধবনি দিতে শুরু করল৷ একটানা হুক্কাহুয়া ধবনি অল্প কয়েক সেকেণ্ড শোণার পরই ভদ্রলোকের বাড়ীর এ্যালসেসিয়ান কুকুর তাদেরই ছন্দে ছন্দ মিলিয়ে তালে তাল দিয়ে হুক্কাহুয়া ধবনি শুরু করল৷ তার চোখে মুখে ফুটে উঠল শৃগালের আভিজাত্যের শুভ–সূচনা৷ ভদ্রলোক শোকাশ্রুনেত্রে তাঁর বাড়ীর খিড়কির দরজা খুলে দিলেন৷ এ্যালসেসিয়ান শিশু শেয়ালের দলে ভিড়ে গেল৷ ভদ্রলোকের মনের স্মৃতিপটে ভেসে উঠল সেই জষ্ঠি মাসের গরমের দিনের কথা, সেই হাতীবাগানের হাটের সেই বিক্রেতার কথা যে এ্যালসেসিয়ানের নাম করে তাঁকে শৃগালশিশু গছিয়ে দিয়েছিল, তাকে বোকা বানিয়ে হাতিয়ে নিয়েছিল করকরে দশহাজার টাকা৷