গণতন্ত্র ও জনসাধারণ

লেখক
হরিগোপাল দেবনাথ

জনসাধারণ্যে প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী ‘‘গণতন্ত্র’’ বলতে আমরা অধিকাংশরাই সাধারণতঃ ‘রাজনৈতিক গণতন্ত্র’কেই বুঝে থাকি৷ কারণ পলিটিক্যাল মার্চেন্ট তথা রাজনৈতিক মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা তাদের কথায়, বত্তৃণতায়, আলাপ-আলোচনায় আপামর জনসাধারণের মনের দুয়ারে অনুরূপ -ধারণাটাই পৌঁছে দিয়ে থাকে৷ গণতন্ত্রের সংজ্ঞাতেও খুব ফলাও করেই বলা হয়েছে---‘‘জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্যে, জনগণের সরকার তথা শাসন-ব্যবস্থা৷’ অর্থাৎ আক্ষরিক মার-প্যাচের  সাহায্যে ও শ্রুতি-মধুর বাক্য-বিন্যাসের দ্বারা রাজনৈতিক ব্যবসায়ীরা আর তৎসহ প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় স্কুল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মাষ্টার মশাইরাও তাঁদের কেতাবী-বিদ্যা ফলাতে গিয়ে মনে ‘না-না’ ভাবনাটা’’ যদিও বা কারো কারোর থেকেও থাকে তথাপি বর্তমানের পুঁজিবাদী শাসন-ব্যবস্থায় প্রকাশ্যে বলার সঙ্গে ব্যাখ্যা করে বোঝাতেও বাধ্য যে, গণতন্ত্রই হচ্ছে এ যাবৎ মানুষের চিন্তাধারায় উদ্ভাবিত শাসন-প্রণালী সমূহের মধ্যে সর্র্বেৎকৃষ্ট পন্থা৷ কেননা, যে জনগণের জন্যে সমাজ, রাষ্ট্র ও জনশাসন- ব্যবস্থাপনা সেই জনগণের উপর প্রাধান্য রেখেই তো গণতন্ত্রের ইমারত সমাজে গড়ে তোলার বিধিব্যবস্থা৷ জনসাধারণই হচ্ছেন গণতান্ত্রিক-প্রক্রিয়ায় শাসন-মন্দিরের মূল বিগ্রহ৷ সুতরাং, এর চাইতে উৎকৃষ্ট আর কী হতে পারে?

কিন্তু, আসলেও কি তাই? ব্রিটিশ-শাসনমুক্ত ভারতে আমরা বাস্তব-দৃশ্য কীরূপ দেখতে পাচ্ছি? বলা তো হয় জনগণের দ্বারা অর্থাৎ জনসাধারণের বোটের জোরে নির্বাচিত সংখ্যা গুরু প্রতিনিধিরা মিলে রাষ্ট্রের তথা দেশের ‘সরকার’ গড়ে তোলে আর সেই সরকার বা গভর্ণমেন্ট রাষ্ট্র পরিচালনা করার ক্ষমতা  হাতে পান৷ কার্যক্ষেত্রে কিন্তু এর সম্পূর্ণ বৈপরীত্যটাই হয়ে ওঠে মূল সত্য৷ দেশের অধিকাংশ বোটদাতাগণ নিরক্ষর বা অজ্ঞ আর সমাজচেতন না থাকা সত্ত্বেও, নীতি-পরায়ন হওয়ার বালাই না থাকলেও শুধুমাত্র নির্দিষ্ট বয়স হওয়াতেই বোটাধিকার পেয়ে যান বলে সেক্ষেত্রে মনোনীত প্রার্থীদের সঠিক যাচাই-হওয়া সম্ভব হচ্ছে কি? দ্বিতীয়তঃ যারা যারা-ই এই নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন ও যারা নির্বাচনপ্রার্থী হন, তাদের প্রকৃত নেতা-নেত্রী, সুদক্ষ পরিচালক, সমাজসেবী, আদর্শ-চরিত্রবান থাকার কোন বাধ্য-বাধকতা (কাগজে নয়, ব্যষ্টি-চরিত্রে ও বৈয়ষ্টিক আচরণে) থাকারও বালাই রয়েছে কি? বোটপাবার আগে তারা যা যা বলেন ও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েও  তা খেলাপ করেন৷ সেজন্যে শাস্তিমূলক বা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাপনা রয়েছে কি? বরং শাসন ক্ষমতা হাতে পাওয়ার আগে ও পরে কারোর যদি আচরণগত আকাশ---পাতাল  পার্থকও ধরা পড়ে যায় কিংবা শুধু ব্যষ্টিগত স্বার্থসিদ্ধি হল না বা দাপট দেখানো গেল না বলে দলছুট হয়ে গেল, দল ভেঙে আরেক দলে ভিড়ল অথবা নোতুন দল খাড়া করে দিল জোট পাকাল মন-গড়ামত, এমনকি জনবৈরিতার খাতায়ও নাম লেখাল তাতেও কিন্তু সেই পলিটিক্যাল ডেমোক্র্যাসীতে স্রেফ সংখ্যাগরিষ্ঠতার (মেজরিটি শাদা-মাটা কথায় মাথা-গুণতির জোরে) দোহাই পেড়ে গলায় বরমাল্য পেয়ে যাবে--- ঘটা করে সম্বর্ধনাও পেয়ে যাবে৷ তাই, গতাণুগতিক রাজনৈতিক গণতন্ত্রকে সমালোচকদের দৃষ্টিতে বলা হয়ে থাকে ---‘ফূলোক্র্যাসী বা বোকা মানুষদের তন্ত্র’ মবোক্র্যাসী বা দিশাহীন তথা হিড়িক-লাগা মানুষদের তন্ত্র’ যুক্তি-বিচার অগ্রাহ্য করে শুধু সংখ্যা-গণনার জোরে সমর্থন পাওয়ার গুরুত্বের প্রাধান্য বলে ‘ঘনতন্ত্র’ (রুল অব মেজরিটি) আবার, হয় টাকা-পয়সার জোরে (মানি-পাওয়ার) অথবা গায়ের জোরে বা পেশীশক্তির ভয় দেখিয়ে (মাসল্‌-পাওয়ার), দুর্নীতি বা কপটতার জোরে  বোটে জেতা সহজ হয় বলে একে ‘ডেমোক্র্যাসীর’্‌ বদলে ডেমোন্‌ক্র্যাসী বা দানবতন্ত্র’৷ বস্তুতঃ, এই অশুভ-প্রক্রিয়ার কারণেই আমাদের এই রাজ্য, গোটা দেশ ভারত-যুক্তরাষ্ট্র কিংবা গোটা দুনিয়ারও অধিকাংশ দেশগুলোরই চলমান দুর্গতির নিরসন ঘটছে না৷ বর্তমান ভারতের কিংবা এই ত্রিপুরা রাজ্যটির শোচনীয় অবস্থা তো আরও বেশী ভয়াবহ৷ এক কথায় বলা যেতে পারে--- মুখোশপরা গণতন্ত্রের আড়ালে পার্টি তথা গোষ্ঠীর একনায়কতন্ত্রের বাড়া স্বৈরাচার৷

সমাজতান্ত্রিক চিন্তানায়কদের মধ্যে অনেকের মতে,--- অর্থনৈতিক গণতন্ত্র-ছাড়া রাজনৈতিক গণতন্ত্র সর্বৈব অর্থহীন ও অসার৷ কারণ,স্বাধীনতা বলতে বোঝায় সবরকমের পরাধীনতা তথা বন্ধন থেকে মুক্তির উপায়৷ সুতরাং অর্থহীন স্বাধীনতা ব্যতিরেকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা স্রেফ বোটাধিকার পাওয়া যেমনটা আমাদের দেশে চলে চলেছে৷ দশকের পর দশক ধরে ভূমিহীন, ঠিকানাবিহীন, নিরাশ্রয়, ফুটপাথবাসী, গাছতলাবাসী, নোংরা বস্তিবাসী যারা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত উচ্ছিষ্টভোজী, ভবঘুরে ভিখিরি রুগ্ণ হয়েও বিনা-চিকিৎসায় কাতর, পঙ্গু হয়ে চলচ্ছক্তিহীন, দুঃস্থ-অসহায় বলে জীবনভর অবহেলিত, দরিদ্র আর মুর্খ বলে ক্রীতদাসতুল্য শোষিত ধনীগৃহে গায়ে-গতরে খাটা বান্দা-বাঁদী-দাসীরা প্রতিবারই নির্বাচন এগিয়ে এলে দু-চার দিনের জন্যে নেতা-নেত্রীদের বা বোট-প্রার্থীদের দ্বারা বা তাদের সাঙ্গপাঙ্গ-ক্যাডারদের দ্বারা একটু আপ্যায়ন বা মুখরোচক খাবার মুখে নেবার সুযোগ পেলেও পেতে পারেন! এছাড়া,  বছরের পর বছর জুড়ে ভাগ্যে দুর-দার বা কীল-চড়-লাথি ছাড়া, বড়লোকদের, অভিজাত ও তথাকথিত শিক্ষিত মহলের ঘৃণা-নিন্দা-কুৎসা ছাড়া ভাগ্যে আর কিছুই জোটে না৷

ত্রিপুরার মত রাজ্যে, বিগত বামফ্রন্ট-আমলে আনীত ‘জমি-হস্তান্তর’ কালো আইনের বলি হয়ে যারা তাদের বাস্তুভিটে-জমি-পুকুর-বাগান হারিয়ে এখনও প্রায় লক্ষাধিক মানুষ আনাচে-কানাচে কোনরূপ ঠাঁই যোগাড় করে জীবন-যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন, যাদের পূর্বে নির্দিষ্ট জীবিকা ছেড়ে, পল্লী ছেড়ে রাস্তায় নেমে এসেছেন, পুরুষরা অশক্ত দেহেও মুটে গিরিতে নেমেছেন, মা-বোনেদের কেউবা আত্মসম্মান ফেরিতে বাধ্য হয়েছেন শুধু পেটের দায়ে, তাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা জুটেনি বলেই রাজনৈতিক স্বাধীনতায় তারা বোটাধিকার পেয়েও কিন্তু মানবাধিকার তথা মানুষ হিসেবে সুষ্টু জীবনধারণের  অধিকার থেকে বঞ্চিতই রয়ে গেছেন! এরাজ্যে বিগত বামআমলে যারা রাজ্যের নোংরা রাজনীতির সেরা মূলধন উগ্রপন্থার হামলায় অপরিণত বয়সেই পৃথিবী থেকে উধাও হয়েছেন কিংবা জীবন থেকে ঝরে পড়েছেন তাদের অনেকেই বোট দিয়েই বাম-নামীয় শাসকদের সরকার ঘটনে সক্রীয় ভূমিকা হয়তো নিয়েছিলেন৷ উগ্রপন্থীদের হামলায় যারা বাস্তুচূ্যত হয়ে মনুষ্যেতর জীবনযাপন করে কোনরকম বেঁচে রয়েছেন তাদের অনেকেই এই রাজনৈতিক গণতন্ত্রের বোটাধিকার প্রয়োগ করে চলেছেন৷ সমগ্র দেশের পুঁজিপতি করপোরেটদের মেদবহুল দেহে চাকচিক্য বাড়াতে যারা নিত্যদিন দ্রব্যমূল্য ভোজ্যতেল, রান্নার গ্যাস, পেট্রল-ডিজেল, বিদ্যুৎ, ওষুধ-পত্রসহ মানুষের জীবনে যে নূ্যনতম চাহিদাগুলো মেটাবার উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না তারাও কিন্তু রাজনৈতিক গণতন্ত্রের খাতায় রেকটেড বোটার অনেকেই৷ এরাজ্যের কয়েক লাখ আর সারাদেশের কয়েক কোটি বেকাররা প্রত্যেকেই বনেদী বোটার, অথচ কর্মহীনতার কারণে তাদের এগিয়ে চলার পথ রুদ্ধ৷ যারা বয়সোত্তীর্ণ বেকার তারা, যারা চাকুরি তথা কর্মসংস্থান পেয়েও কোন না কোনভাবে বর্ত্তমানে চাকুরিহারা কিংবা অবাঞ্ছিত কারণে ছাঁটাইয়ের শিকারে পরিণত তাঁরাও কিন্তু প্রত্যেকেই বোটার ছিলেন ও আছেন৷ কিন্তু তাদের কারোরই অর্থনৈতিক স্বাধীনতাভোগের  উপায় নেই---অর্থনৈতিক গণতন্ত্রভোগের দরজাও তাদের জন্যে খোলা নেই৷ আমাদের দুয়েক প্রজন্ম পূর্বেকারপুরুষগণ রাজনৈতিক গণতন্ত্রের ভোগাধিকার স্বরূপ দেশভাগের বলি হয়েছিলেন বলেই আমরা অধিকাংশ উত্তর পুরুষরা আজ দেশে--- উদ্বাস্তু, রিফ্যুজি, বিদেশী, বাঙলাদেশী, অনুপ্রবেশকারী, ঘুষপেটিয়া, কাঙালী, ছারপোকা, উইপোকা, মশা-মাছি ডি-বোটার, কচুরিপানা৷ এসবই কিন্তু আমাদের জুটেছে অর্থনৈতিক গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা না পাওয়া, শুধু রাজনৈতিক গণতন্ত্রের বোটে ছাপ-মারার বা বোতামটেপার ‘‘মানুষ-যন্ত্র’’  বিবেচিত হচ্ছি বলে অর্থাৎ আমরা জন্মসূত্রে মানুষ আর রাজনৈতিক গণতন্ত্রের দুনিয়ার মানুষরূপী দানববাদের পেট ভরিয়ে নাদুস-নুদুস বানাবার জন্যে শুধু ‘‘ মেশিন’’ হয়েই কর্মসূত্রে বিরাজমান৷ অর্থনৈতিক গণতন্ত্র ব্যতিরেকে রাজনৈতিক গণতন্ত্রের নীট ফায়দা!

রাজনৈতিক গণতন্ত্রের বোটারগণ দ্বারা রাজনৈতিক গণতন্ত্রের বোট-প্রার্থীদের জেতাবার ফলে রাজনৈতিক হিপোক্র্যাটদের ঘটিত অসম-সরকার সেই বোটারদেরই ‘ডি-বোটার’ বানিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে পূরে রেখে অনাচারে উপেক্ষায় অনেককে যমালয়ে নির্বাসনে পাঠাচ্ছে আর যাদের সেই দণ্ডাজ্ঞা এখনও পেতে বাকী, তারা ধীরগতিতে তিলে তিলে মরণ-যন্ত্রণায় ছট্‌ফট্‌ করছেন৷ সমগ্র ভারতবাসীদেরও (মুষ্টিমেয় রূপোর চামচে  দুধ খাওয়া সোনার  পালঙ্কে নিদ্রাসুখ ভোগরত ধনকুবেরদের ছাড়া) পুঁজিপতিদের খেলনা-সদৃশ ক্যাবিনেট-ভূষণদের অঙ্গুলি হেলনে আর পুঁজিপতিদের  অদৃশ্য ইঙ্গিতে বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি লাগামহীন মাত্রায় দুর্নীতি, কসাইনীতি, বিসদৃশ আচরণ, ব্যাংক লুট অর্থলোপাট, বিমুদ্রাকরণ দ্বারা কালোবাজারি ও কালো টাকার বিত্তশালীদের অন্ধকারের কানাগলি উদ্ধারের কাজ, জি.এস.টি দ্বারা গরীব ক্রেতাদের পকেটমারি, জ্বালানীর উপর্যুপরি মূল্যবৃদ্ধি, প্রতিপত্তিশালী বিত্তবানদের ব্যাংঙ্ক লোন মকুব করে দেওয়া৷--- সবই চলছে নীরবে, নির্বিবাদে৷ আমাদের সংবিধান অনুসারে আমরা সকলেই এক সার্বভৌম সমাজতন্ত্র ঘেঁষা গণতান্ত্রিক ও প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাগরিক৷  অথচ রাজনৈতিক গণতন্ত্রের বোটারদের রাজনৈতিক স্বাধীনতার একনিষ্ঠ সুবিধাবাদীদের গড়া সরকার কর্ত্তৃক দেশের সম্পদ,  জনগণের ভোগ্যসামগ্রী, জনপরিষেবা মূলক ব্যবস্থাদি একে একে কর্র্পেরেট সংস্থাদের হাতে  অথবা বিত্তশালীদের কাছে বিক্রয় শর্তে তুলে দেওয়া হচ্ছে৷ অর্থাৎ দেশটায় গণতন্ত্রে বোরখার আড়ালে পুরদস্তুর নগ্ণ পুঁজিবাদ প্রতিষ্ঠার ক্রম পদক্ষেপ এগিয়ে চলেছে৷ প্রশ্ণ হল--- আজকের এ অবস্থার জন্যেই কি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা প্রাণ বিসর্জন দিয়ে গেলেন ব্রিটিশ শাসকদের হাতে নির্মম নির্যাতন ও অকথ্য অমানবিক ক্লেশের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন লাখো লাখো মা-বোনেদের সিঁথির সিঁন্দুর মুছে গিয়েছিল নির্জন দ্বীপে হিংস্র জন্তুঘেরা পরিবেশে দীপান্তরে নির্বাসিত হয়েছিলো? আরও হৃদয় বিদারক প্রশ্ণ আজ মানবিক সত্তাকে  জীর্ণ-বিদীর্ণ করে চলেছে--- শুধু জনগণের অপরণীয় ক্ষতি সাধন করে, চরমতম অনিষ্ট করে পুঁজিপতিদের আরাধনার জন্যে বা উদ্দেশ্যেই কি জল্লাদরা নেতাজীর মত আদর্শচরিত্রকে রহস্য-চাপা রেখে তাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা আর রাজনৈতিক গণতন্ত্রকে হাসিল করতে চাইছেন!

তবে তারা কেন ভূলে যাচ্ছেন ---নিউটনের সেই তৃতীয় সূত্রঃ? প্রতিটির ক্রিয়ারই সমান প্রতিক্রিয়া, কর্মের প্রতিকর্ম থাকা অবধারিত--- একথা তারা ভুলে থাকলেও কি নিস্তার পাবেন, না পেতে পারেন ?

এ কথা ঠিক যে পৃথিবীর প্রায় সবদেশেই জনসাধারণের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতার অভাব রয়েছে৷ আর চালাক চতুর ধূর্ত রাজনৈতিক নেতারা জনসাধারণের এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে জনগণকে নানা ছলনায় বিভ্রান্ত করে  ক্ষমতা কুক্ষিগত করে৷ এজন্যেই রাজনীতিকরা ধর্মীয় গোঁড়ামি, জাত-পাত-ভেদ, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতা,মানুষে মানুষে জাতি উপজাতি বিভেদ, দলাদলি গোষ্ঠীভাগ, ডগমা বা কুসংস্কারের ভিত্তিতে ভূমিপুত্র-বিদেশী বিভেদ ইত্যাদি জীইয়ে রাখতে চায় ও নিত্যনোতুন ফন্দিও রচনা করে৷ সত্যি কথা বলতে---স্বাধীনতার নামে দেশভাগ ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্ঘটন, অযৌক্তিক রাজ্যভাগের কুপ্ররোচনা দান৷ জনসাধারণের এক গোষ্ঠীকে অপর গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার জন্যে অমানবিকভাবে উস্কানীর যোগান দেওয়া, দুর্বল জনগোষ্ঠীর বা নিরীহমানুষদের ভাষার অধিকার ও সংস্কৃতির অধিকার কেড়ে নিয়ে জোর করে অপরের ভাষা জীবিকা, ধর্মবিশ্বাস ও সংস্কৃতি চাপিয়ে দেবার হীনবৃত্তিমূলক  ও কু-মতলব প্রণোদিত কাজগুলো করে থাকে৷ বস্তুতঃ এজন্যেই ওইসব রাজনৈতিক গণতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষক সেজে রয়েছে৷ তাই ওরা কিছুতেই চায় না, চাইবেও না কোনদিন যে, জনসাধারণ সত্যিকারে অর্থনৈতিক গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে সফল হোক অর্র্থৎ প্রত্যেকেই নিজক্ষমতায় অর্থনৈতিক স্বাধীনতা তথা ক্রয়ক্ষমতা হাতে পেয়ে মানবিক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হোক৷ মাটির পৃথিবীটা সত্যিকারের বসুন্ধরা হয়ে উঠুক৷ কিন্তু মানুষকেই শোষণমুক্তির পথ খুঁজে নিতে হবে৷