গোবর গণেশ গায়েন

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

 যে সোজা পথে চলে না, মার প্যাঁচ করে দিন কাটে সে কুট্টনী........কুটনী৷ এই কুট্টনীর স্বভাবসংক্রান্ত ব্যাপারকে বলব কৌট্টনী বা কৌট্টনিক৷ কুট্টনী+অন = কৌট্টনী আর কুট্টনী+ঠক=কৌট্টন্৷ এই মার প্যাঁচ সংক্রান্ত বিদ্যাকে বলা হয় কুট্টনী বিদ্যা বা কৌট্টনী বিদ্যা৷ যারা গোমরামুখো, যারা ‘‘রাম গরুড়ের ছানা হাসতে তাদের মানা’’ তাদের সম্বন্ধে কথ্য বাংলায় বলা হয় কুট্টনী–মুখ৷

এ প্রসঙ্গে আমার একটি পুরোনো গল্প মনে পড়ে যাচ্ছে৷

আমার বিশেষ পরিচিত জনৈক রেল–অফিসার ছিলেন–ধরো, তাঁর নাম গোবর গণেশ গায়েন৷ ভদ্রলোক সব সময় মুখ বেঁকিয়েই থাকতেন৷ আমি যখন লোকের আড়ালে বলতুম–‘‘হ্যাঁরে, অমন গোমড়া মুখ করে থাকিস কেন?’’ সে বলত–‘‘হাসলে লোকে আমার মাথায় চড়ে বসবে, আমাকে মানবে না৷’’

আমি বলতুম–‘‘আচ্ছা না হয় হাসলি না, কিন্তু কথা বলিস না কেন?’’ সে বলত–‘‘কথা বললে সস্তা হয়ে যাব৷’’

আমি বলতুম– ‘‘সেজন্যে তুই দূরে থেকে খাস্তা থাকতে চাইছিস?’’  সে না হেসে বলত–‘‘হ্যাঁ’’৷

একবার আমাদের একটা বড় রকমের পিকনিক হয়েছিল৷ পোলাও–কালিয়া ও ভাল–মন্দ খাবারের এলাহী বম্যাপার৷ কাশী থেকে এসেছিল লাউয়ের আকারের প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড শীতের বেগুন৷ রান্নাবান্না হয়ে যাবার পর দেখা গেল পঞ্চাশ/ষাটটা বড়বড় বেগুন বাড়তি হয়েছে৷ সবাই মিলে ঠিক করা গেল এই বেগুনগুলো পুড়িয়ে পোলাও–কালিয়ার মাঝে মাঝে খেয়ে মুখ পালটে নেওয়া যাবে৷ যেমন ভাবা তেমনি কাজ৷ খেতে বসে প্রথমেই পরিবেশন করা হ’ল বেগুন পোড়া৷ সবাইকে উৎসাহ দেবার জন্যে শ্রীমান গোবর গণেশ গায়েনের মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল– ‘‘বাঃ, বেগুনপোড়াটা ফার্স্ট–ক্লাস হয়েছে৷’’

আর একজন বললে– ‘‘না, ফার্স্ট–ক্লাস নয়, এয়ার–কণ্ডিশণ্ড্ হয়েছে৷’’ গোবর গণেশ আবার কথা বলে ফেললে৷ সে একটু গম্ভীরভাবে বললে– ‘‘যাই হোক, খেতে ভালই  হয়েছে৷’’ তার কথা লুফে নিয়ে আমার আর একটু বেশী পরিচিত শ্রীসমর সেনগুপ্ত সুযোগের তিলমাত্র অপব্যয় না করে গোবর গণেশকে উদ্দেশ্য করে বললে–‘‘বেগুনপোড়া যখন একবার ভাল লেগেছে স্যার তখন দেখবেন ওই পোড়ার মুখে বাকীগুলোও ভাল লাগবে৷’’

গোবর গণেশ ঠাট্টাটা না বুঝে আরও গম্ভীরভাবে ভোজনে মনোনিবেশ করলে৷

এই কুটনী স্বভাবের লোকেদের কেউই পছন্দ করে না৷ ওরা যেমন লোককে অবহেলা করে, লোকেও তেমনি সুযোগ বুঝে ওদের বিশ কথা শুনিয়ে দিতে ছাড়ে না৷ তোমরা কিছুতেই এই ধরনের কুট্টনী বুদ্ধিকে প্রশ্রয় দিও না৷ এতে সমাজেরও ক্ষতি, তোমাদেরও ক্ষতি৷