জগন্নাথের ভক্তদের জন্যে  জগন্নাথের মন্দিরের দ্বার রুদ্ধ থাকবে কেন?

লেখক
জিজ্ঞাসু

রামায়ণে দেখি সীতাহরণের জন্যে রাবণকে সন্ন্যাসীর ভেক নিতে হয়েছিল৷ কেন?  হাজার বছর ধরে সাধারণ মানুষ দিনরাত দেখে এসেছে, সাধু সন্ন্যাসী অন্য পৃথিবীর মানুষ৷ এরা সৎ পবিত্র শুদ্ধ পরপোকারী৷ এদের জীবন পরমেশ্বরকে জানার জন্যে, নিজের ‘বৃহৎ আমি’-কে জানার জন্যে, সর্বপ্রাণীর সেবার জন্যে৷ সীতা তাই সাধুবেশী রাবণকে বিশ্বাস করেছিল৷ কিন্তু পরে ঠকেছিল৷ বিশ্বাসের এই ছবিটা আজকের সাধারণ মানুষের মনে আজও গেঁথে আছে৷ মানুষের এই সরল বিশ্বাসকে ভাঙিয়ে ধূর্ত নিকৃষ্ট বেনিয়ারা ধর্মের ব্যবসাতে ঢালাও পুঁজি ঢালছে৷ এভাবেই নানা প্রকার দেব-দেবীর মূর্ত্তি, যজ্ঞ, পূজা---এসবের (সাপ্তাহিক পূজা, মাসিক পূজা, ত্রৈমাসিক পূজা, সান্মাসিক পূজা, বাৎসরিক পূজা, ভগবানের ভোগ, মহাভোগ) রমরমা লেগেই আছে৷ সাধারণ মানুষ নানান ভণ্ডামির ফাঁদে আটকা পড়ে শোষিত হচ্ছে৷ এইসব বুঝতে বুঝতে তাদের জীবনে সন্ধ্যা নেবে আসে৷ কিন্তু চক্ষুলজ্জায় কাউকে সে বলে না যে সে পাণ্ডাপুরুতের কাছে কতবার কতভাবে ঠকেছে৷ সরল ভক্তিপ্রাণা নারীদের ঠকানো তো আরও বেশী সহজ৷ পান্ডারা তখন গুরু হয়ে বসে পরিবারে৷ ২০১৮ সালে দেখছি ভারতে ধর্মের তথাকথিত হর্তাকর্তারা (পুরীর পান্ডা সমাজ, গোবর্ধন পীঠের শঙ্করাচার্য নিশ্চলানন্দ, পুরীর রাজা দিব্যসিংহদেব, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ প্রভৃতি) ভারতের সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের সৎ পরামর্শ শুণে চোখ লাল করছে৷ কত বড় দুঃসাহস! পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সেবায়েৎ পান্ডাদের উদ্দেশ্যে সুপ্রিমকোর্টের সৎ পরামর্শ ছিল,  এটা তো জগন্নাথের মন্দির! জগতের সর্বপ্রাণীর নাথ, সব দেশের সব মানুষের নাথ, তাই তার নাম জগ+ নাথ= জগন্নাথ৷ তাই যদি হয় তবে মন্দিরের দ্বার সব মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হোক৷ কঠিন জাত-পাতের নিষেধ তুলে দেওয়া হোক৷ সব মানুষের সমান অধিকার আছে ভক্ত হিসাবে৷ ক্রীশ্চান বা মুসলিম বা দলিত হলে মন্দিরে ঢোকা যাবে না এসব নিয়ম বন্ধ হোক৷ সুপ্রিমকোর্টের এই আবেদনের পাশাপাশি পুরীর স্থানীয় বিচারক অম্বুজ মোহন দাসেরও অভিমত, মন্দিরের পাণ্ডাদের পরিবারতন্ত্র এখনই বন্ধ করা উচিত৷ এতেও পান্ডাদের গোঁসা হয়েছে৷

 ধর্মের নামে সাধারণ মানুষকে শোষণ করে, মানুষকে হীনম্মন্যতার শিকার করে রাখা ধর্ম ব্যবসায়ীর একটা চতুর কৌশল৷ এঁরা মন্ত্র বলবে কিন্তু মন্ত্রের অর্থ বোঝাবে না৷ কারণ তাতে পান্ডা পুরুতের ভন্ডামি ধরা পড়ে যাবে৷ ব্যবসা বন্ধ হবে৷ তবুও যাইহোক সাধারণ মানুষ জাগছে, সাধারণ মানুষের দাবী ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে বিগত ৫০০ বছর ধরে৷ চৈতন্য মহাপ্রভুর মৃত্যুও রহস্যজনক৷ এ জন্যেও নাকি পাণ্ডারা দায়ী৷ সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্যর মধ্যে সাধারণ মানুষেরই দাবী ফুটে উঠেছে৷ আজ সুপ্রিমকোর্ট যে পরামর্শ দিচ্ছেন, আমরা চাই ভবিষ্যতে এই পরমর্শ শক্তিশালী আইনে রূপান্তরিত হোক৷ আর বকধার্মিকদের হাত থেকে সাধারণ মানুষ রক্ষা পাক৷ সুপ্রিমকোর্টই এখন জগন্নাথের মাধ্যম হোক৷ ধর্মের নামে---জাত-পাতের নামে আর্থিক শোষণের ব্যবসা বন্ধ হোক৷