আজ পর্যন্ত মানুষের সমাজে বিশেষভাবে প্রচলিত যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু আছে তা হ’ল এ্যাডাম স্মিথের ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা৷ এই ব্যবস্থার সঙ্গে ধনী ব্যষ্টি ও শাসককুল যুক্ত৷ যাদের মূল অর্থনৈতিক লক্ষ্যটা ‘‘শোষণের ওপর সমৃদ্ধি’’৷ এখানে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম জীব হ’ল মানুষ৷ সেই মানুষকে উৎপাদনের অন্যতম ফ্যাক্টর হিসেবেই দেখা হয়৷ শ্রমের বিনিময়ে তাঁকে পারিশ্রমিক দেওয়া হয়, খাদ্য বা খাদ্যের বিনিময়ে যৎসামান্য অর্থ যাকে বলা হয় স্যালারি, সাপ্তাহিক বা মাসিক মাহিনা৷
এরই নেগেটিভ প্রতিক্রিয়ার হাল হ’ল জড়বাদ ভিত্তিক কম্যুনিষ্ট শাসন ব্যবস্থায় ষ্টেট ক্যাপিট্যালিজ যা নাকি রাষ্ট্র উৎপাদন ও বণ্টন করবে ভোগ্যপণ্য৷ শ্রমিক শ্রমদান করবে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে৷ সেখানেও মালিকানা সত্বটা থাকবে রাষ্ট্রের৷ সেখানে রাষ্ট্রের অধিকারে থাকবে শ্রমিকদের ভাল করার লক্ষ্য কিন্তু সেটা শাসকদের মর্জির ওপর৷ সেটা প্রশ্ণাতীত নয়৷ শ্রমিকশ্রেণী বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে আন্দোলন করে এর কিছু প্রতিকার করে শোষণ বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে৷ শ্রমিকশ্রেণী ইয়ূনিয়ন করে৷ তাতে শ্রমিক আন্দোলনের পাশাপাশি কর্ষক আন্দোলন গড়ে ওঠে৷ ধীরে ধীরে এই শ্রমিক ও কর্ষক ইয়ূনিয়ন আইনের স্বীকৃতি পায়৷ শ্রমিকরা কিছু অর্থনৈতিক অধিকার লাভ করে৷
কিন্তু অতীতের ইতিবৃত্তে দেখা যায় মানুষের সমাজ বেঁচে থাকার জন্যে কৃষি ও শিল্পে শ্রম দান করেছে ও ফসল ও শিল্পজাত দ্রব্য উৎপাদন করেছে তার বিনিময়ে উৎপাদিত দ্রব্য ও সামগ্রীর বিনিময়ে তারা অভাব পূরণ করেছে৷ দেখা গেছে মূলতঃ কৃষিপ্রধান দেশে যারা শ্রম দান করত যখন ফসল উঠত তখন গ্রামে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ যে শ্রম দান করত তার বিনিময়ে ফসল পেত৷ তারই বিনিময়ে তারা তাদের অভাব পূরণ করত৷ এমনকি রাজা খাজনা আদায় করত ফসলের বিনিময়ে৷
অতীতে যখন অর্থের অর্থাৎ টাকার প্রচলন ব্যাপক হয়নি তখন ধান বা চাষের বিনিময়ে মানুষ অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ করত আর ভোগ্যপণ্য দেওয়া-নেওয়ার পরিবর্তে অভাব পূরণের চলন ছিল৷ কড়ির বিনিময়ে ছোট ছোট লেনদেন চলতে আমরা দেখেছি গ্রামগঞ্জে৷ যেসব জিনিস পচনশীল সেগুলি মূলতঃ বিনিময় হত প্রতিবেশীদের মধ্যে৷ স্বর্ণ, রৌপ্য মূল্যবান ধাতু নির্মিত মুদ্রা যেটা রাজছাপ নির্মিত মুদ্রা হত সেগুলি বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে প্রচলিত হ’ত৷ গৃহপালিত পশুও বিনিময়ের মাধ্যম হ’ত৷ ধীরে ধীরে এই বিনিময় প্রথা প্রায় উঠে গেছে৷ এখন মুদ্রা বা সরকারী নোটের বিনিময়ে লেনদেন বেচাকেনা ব্যাপকহারে প্রচলিত হয়েছে সারা পৃথিবীতে৷ অর্থ শব্দের মূল মানে হ’ল যা আমাদের অভাব পূরণ করে৷ পাঠ্যপুস্তকের মানে বই যে থাকে তাকে আমরা ‘অর্থপুস্তক’ বলে থাকি৷ বাস্তব জগতে অর্থকে মুদ্রা বলে, কাগুজে নোট প্রচলন আছে যাতে সরকারী প্রতিশ্রুতি দেবার বিনিময় মূল্য উল্লেখ করে কাগুজে নোটে৷ তার বিনিময়ীে আমরা আমাদের প্রয়োজন মেটাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় করি৷ বিক্রেতা যে বিক্রয়মূল্য পায় তার দ্বারা তারা প্রয়োজন মেটায়৷ তাই বলা হয় অর্থ হ’ল বিনিময় মাধ্যম৷ আজ এ ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে তা হ’ল কোটি কোটি মানুষ শোষণ ও বঞ্চিত হচ্ছে সামান্যতম ধনী ব্যবসাদার ও ব্যষ্টিদের ও শাসকদের দ্বারা যারা ছল-বল-কৌশল করে সেই বিনিময়ের মাধ্যমকে কুক্ষিগত করে ভোগ, ঐশ্বর্য্য-এর অধিকারী হচ্ছে আর সমাজের সিংহভাগ মানুষ শোষিত ও বঞ্চিত হয়ে রয়েছে৷ জনগণ শোষিত ও বঞ্চিত হয়ে আছে মূলতঃ ধনতান্ত্রিক ও তথাকথিত জড়বাদী কম্যুনিষ্ট রাষ্ট্রকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণে যেখানে মানবিক মূল্যবোধের দারুণ অভাব৷ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ব্যাপক হারে অর্থের চলন নেই সাধারণ মানুষের হাতে, অর্থাগম হচ্ছে না৷ বর্তমান যুগ চরম বৈষম্যের ও শোষণের যুগ৷ বৈশ্য শ্রেণী-(ধনী ব্যবসাদারগণ) সারা পৃথিবীর সম্পদ কুক্ষিগত করে ও শাসকগণকে নিজেদের দলদাসে পরিণত করে ফেলেছে৷ ধনীশ্রেণী বড় বড় শিল্প যেমন কলকারখানা গড়ে অর্থাৎ শিল্পাঞ্চল গড়ে গ্রামের কুটির শিল্পকে প্রতিযোগিতার পিছনে ফেলে যন্ত্রদানবের সহায়তায় ব্যাপক হারে ভোগ্যপণ্য উৎপাদন করে অপেক্ষাকৃত সস্তায় বাজারে সেগুলির যোগান দিয়ে কুটির শিল্পকে ধবংস করে দিয়েছে৷ অতীতের স্বয়ং সম্পূর্ণ গ্রামগুলি বন্ধ্যা হয়ে পড়েছে৷ বেকার সমস্যা দারুণভাবে বেড়েছে৷ ইংরেজ আমলে বিদেশী পুঁজি ভারতের মত দেশে শিল্পায়নের মধ্য দিয়ে শিল্পবিপ্লব করে কৃষি ও শিল্পের মধ্যে গ্রামীণ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় একসময়ে যে ভারসাম্য ছিল সেটাকে ধবংস করে দিয়ে অর্থনৈতিক ভারসাম্যমূলক ব্যবস্থাটাকে শেষ করে দেয়৷ ইংরেজ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদী শাসকগণ এদেশকে আর্থিক দিক থেকে চরমভাবে শোষণ করে সারা পৃথিবীতে বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে ইংল্যাণ্ডকে সম্পদশালী করে তুলে পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক হিসাবে পরিণত করে৷ আর এদেশকে ভিখারীতে পরিণত করে৷ দেশের কর্মক্ষণ যুবক-যুবতীরা বিক্ষুব্ধ শূদ্রে পরিণত হয়৷ পরাজিত জনগোষ্ঠী হিসাবে পরাধীন জনজাতিতে পরিণত হয়৷ আধুনিক শিক্ষায় যুবক-যুবতীরা দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে ব্রতী হন৷ এ ইতিহাস সকলেরই জানা৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ বিদেশী পাশ্চাত্ত্য শোষকদের কূটকৌশলে কিছু স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক নেতা প্রলুব্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে দেশভাগ করে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পরিবর্তে নিছক রাজনৈতিক স্বাধীনতার রাঙ্গামূলো হাতে নিয়ে দেশের হিতে বিপরীত করেই চলেছেন বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থার ছত্রছায়ায়৷
আজ ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার শোষণে ধনী আরও ধনী হয়ে উঠেছে আর হতভাগ্য নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারীরা সর্বস্বান্ত হয়ে ভিখারীতে পরিণত হয়েছে৷ দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া, চরম বেকার সমস্যায় দেশ কাতর, অর্থনৈতিক মন্দায় দেশ পিছু হটছে৷ আর মুদ্রাস্ফীতিতে দেশ অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়েছে৷ করভারে জনগণ শোষিত৷ কিন্তু সরকার কেবলমাত্র সরকারী কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি করে ও বিলাসজাত দ্রব্যের দ্বারা দেশের বাজার পূর্ণ করে তরুণ-তরুণীদের বিপথগামী করে এক চরম অস্থিরতার দ্বারা দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে৷ বেকার সমস্যা দেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠীকে বিপথগামী করে তুলেছে৷ যত দিন যাচ্ছে দেশের ধীরে ধীরে মানবিক মূল্যবোধ ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে৷ নৈতিক অধঃপতনে দেশ ধুঁকছে৷ ক্রয়ক্ষমতা মানুষের কমে যাওয়াতে মানুষ পঙ্গু হয়ে পড়ছে আর্থিক দিক থেকে৷ সেই কারণে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা যাতে বাড়ে তার জন্যে বেকার সমস্যা দূরীকরণের জন্যে ব্লক ভিত্তিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করে তুলতে হবে৷ গ্রামগুলিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলতে না পারলে ও কর্মক্ষমদের অর্থোপার্জনের ব্যবস্থা করার পথ না দেখালে দেশ আরও পঙ্গু হয়ে পড়বে৷ কিছু ব্যষ্টির পকেট ভর্তি করার পথ করে দেওয়া ও সরকারী, আধা সরকারী কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি করায় অর্থ বৈষম্য বাড়ছে৷ সরকার অর্থভাণ্ডার উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যয় না করে কিছু নাগরিকের পকেট ভর্তি করায় বাজারে ক্রয়ক্ষমতায় বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে৷ কোটি কোটি মানুষ ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে আর্থিক দৈন্যতায় ভুগছে৷ এটা সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক বৈষম্যের ফল৷ তাই প্রতিটি নাগরিক যাতে কর্মক্ষম হয় ও আয় করতে পারে তার জন্য কৃষি শিল্পে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটাতে হবে৷ গ্রামগঞ্জে, ব্লক ও পৌরসভায় আঞ্চলিক ক্ষেত্রে সমবায় প্রথায় দ্রুত ছোট ছোট শিল্প, কৃষিজাত ও কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলার ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে৷ সেখানে কেবলমাত্র আঞ্চলিক নাগরিকগণ কর্মপ্রাপ্তির সুযোগ পাবে৷ তাতে স্থানীয় বেকার আয়ের পথ পাবে ও তাদের বেকারত্ব ঘুচবে৷ তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে৷ গ্রামগুলিকে আর্থিক দিক থেকে স্বয়ম্ভর করে গড়ে তুলতে পারলে জনগণ শহরমুখী হবে না৷ তাতে অর্থের চলনটা বৃদ্ধি পাবে ও অর্থের চলনে ব্যাপকতা বাড়বে৷ দেশ আর্থিক শোষণের হাত থেকে মুক্ত হবে৷ এর জন্যে প্রয়োজন সরকারকে সেবার মানসিকতা নিয়ে শাসন করতে হবে৷ কিন্তু বর্তমান গণতন্ত্রে ও প্রত্যক্ষভাবে ব্যাপক ভাবে ধনীর অনুপ্রবেশ ঘটেছে ফলে ধনীর কৃপালাভের মুখাপেক্ষী হয়ে শাসকদল তাদের নিয়ন্ত্রণের অস্তিত্ব বজায় রেখেছে৷ তাতে রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়নের প্রবেশ ঘটেছে৷ তাই আজ আর দলকেন্দ্রিক বা গোষ্ঠী কেন্দ্রিক ধনতান্ত্রিক ও জড়বাদী চিন্তাধারা প্রসূত তথাকথিত এক দলীয় সাম্যবাদী অর্থনৈতিক তত্ত্বের অবসান আবশ্যিক৷ দু’টো তত্ত্বই আজ শোষণকে প্রশ্রয় দিয়ে শোষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ৷ আজকের আশু প্রয়োজন প্রগতিশীল অর্থনৈতিক তত্ত্ব যা বহুজনহিতায় চ বহুজনসুখায় কাজ করে যাবে সেবার ও ত্যাগের মাধ্যমে৷ তাই দরকার ত্যাগ, সেবা, নৈতিকতা---যেটার বড়ই অভাব৷ প্রতিটি মানুষ যাতে বাঁচতে পারে সেদিকে অবশ্যই নজর থাকবে সরকারের৷ সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত৷ শাসকগণের বিশ্লেষণাত্মক মানসিকতা ঐক্য ও সংহতির সেই সংশ্লেষণাত্মক মহৎ ভাবনাকে ধবংস করে মিথ্যাচারিতার ছল চাতুরীর দ্বারা খণ্ড-ক্ষুদ্র স্বার্থের লালসা চরিতার্থের জঘন্য কাজেই লিপ্ত রয়েছে৷ তাই প্রতি পদে পদে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে৷ জনগণের কল্যাণে আজ গণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে জনগণের হাতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি বজায় থাকে৷ এরই বার্তা বহন করছে প্রাউট৷ সমবায়কে আর্থিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অগ্রাধিক দিয়ে সার্কুলেশন অফ মানি-কে সার্থক করে তুলে জনগণকে শোষণের যাঁতাকল থেকে মুক্ত করে কলাণধর্মী শাসনকে জগতে প্রতিষ্ঠা করতে হবে৷ তবেই জগৎ বাঁচবে, মানুষের কল্যাণ হবে৷ মনে রাখতে হবে সৃষ্টির ভারসাম্য রক্ষা করে মানুষ, জীবজন্তু গাছপালার ন্যায়সঙ্গত উপযোগিতা নিয়ে সার্বিক কল্যাণের পথে চলতে হবে মানুষকে৷ আর মানুষের সমাজের সার্বিক কল্যাণের গণ অর্থনীতির বিজ্ঞানসম্মত ব্যাপকতাকে মান্যতা দিয়ে এগিয়ে চাই কল্যাণ ধর্মী সুশাসনের স্বার্থকতা৷ তিক্ত অভিজ্ঞতায় হতদরিদ্র জনগণ বুঝেছে যে ধনতন্ত্র ‘ভাতে মারে, আঁতে মারে কম্যুনিষ্ট’, তাই আজ গণ অর্থনীতিই হ’ল সকল সমস্যা সমাধানের চাবিকাঠি৷ জনগণই সকল মানুষের বেঁচে থাকার পথের সন্ধান দেবে৷ শিল্প ও কৃষি উন্নয়নে মূলধন যোগাবে দেশের জনগণই৷ তার জন্য বিদেশী পুঁজির যোগানের প্রয়োজন নেই৷ তাতে দেশ পরাধীনতার নাগপাশে আবদ্ধ হবেই হবে৷ তাই সরকারকে অবশ্যই গণ অর্থনীতির পূর্ণ বিকাশের দিকে নজর দিতে হবে তাই স্বয়ং সম্পূর্ণ ব্লক ভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার দিকে নজর দিতেই হবে জনগণ ও সরকারের সমবেত প্রচেষ্টায়৷
- Log in to post comments