‘কান্দি’ আর ‘কাঁথি’ এক নয়

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

 

কাঁদির সঙ্গে কাঁথি নামের কোন সম্পর্ক নেই৷ কাঁথি নামটা এসেছে ‘কান্থিক’ থেকে যার মানে চাদর বা আবরণ৷ ‘চাদর’ শব্দটা কিন্তু ফার্সী৷ উর্দুতে ‘চাদর’ স্ত্রীলিঙ্গবাচক শব্দ অর্থাৎ ‘মেরা চাদর’ নয় ‘মেরী চাদর’৷ মুর্শিদাবাদ জেলার কাঁদি আর মেদিনীপুরের কাঁথি–দু’টোর উচ্চারণ ইংরেজদের কাছে খুবই কাছাকাছি, তাই তাঁরা কাঁথির জন্যে ‘কণ্টাই’ (ড্রপ্সুব্ধ্ত্র) শব্দ ব্যবহার করতেন৷ কাঁথি এই নামকরণের পেছনে দু’টো কারণ নিহিত রয়েছে৷ একটা হচ্ছে কাঁথির নামজাদা বস্ত্রশিল্প–বস্ত্র অর্থাৎ আবরণ৷ এক কালে কাঁথির তাঁত বস্ত্র বর্হিভারতে রপ্তানী হ’ত৷ দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে কাঁথির বৈদুষ্যের খ্যাতি (বৈদুষ্য একটি আবরণ)৷ এককালে কাঁথি বিদ্যাচর্চার অন্যতম কেন্দ্র ছিল৷ যথেষ্ট সংখ্যক সংস্কৃত পণ্ডিতের এখানে বাস ছিল৷ এখন নেই নেই করেও কাঁথি একেবারে হীনপ্রভ হয়ে যায় নি৷

 লেগুয়া থেকে সরকারী দপ্তর উঠে যাবার পর কাঁথির বিস্তৃতি ঘটে৷ এখন অনেক ব্যাপারেই শহরটি অনেক জেলা–শহরের থেকেও উন্নত৷ সেকালে অনেক জেলা–শহরেই কলেজ ছিল না৷ কাঁথিতে কলেজ তখনও ছিল৷ আমার পরিচিত ওঢিড়ষ্যার অনেক বয়স্ক মানুষেরা কাঁথি কলেজ থেকে লেখাপড়া শিখেছিলেন৷ তৎকালীন ওড়িষ্যার পাঁচটি জেলার (কটক, পুরী, বালেশ্বর, অঙ্গুল–খোন্দমহল, সম্বলপুর) মধ্যে কেবলমাত্র কটকে র্যাভেন্শ কলেজটি ছিল৷ তাই কাঁথির বিদ্যাগত গুরুত্ব মানতে হবে বৈ কি!

সেকালের বিহার ও ওড়িষ্যা প্রদেশে কলেজের স্বল্পতা নিৰন্ধন আমি ও আমার অনেক ৰন্ধু কলকাতার কলেজে পড়তে আসতে বাধ্য হয়েছিলুম৷ কাঁথির সংস্কৃত ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না৷ সেখানে একটি সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় করতে পারলে মন্দ হত না৷ আমার দৃঢ় অভিমত যে কবি কালিদাস এই কাঁথি এলাকার অধিবাসী ছিলেন৷ কাঁথির বহুমুখী উন্নতির অনেক সুযোগ–সুবিধা রয়েছে৷ সেদিকে সংশ্লিষ্ট মানুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি৷

খুব ভাল হয় যদি হলদিয়া থেকে কাঁথি–দীঘা হয়ে দাঁতন পর্যন্ত একটা রেলওয়ে লাইন টানা যায়৷*(যদিও হলদিয়া–দীঘা রেলপথ হয়নি, তবে বর্তমানে কলকাতা–দীঘা রেলপথ চালু হয়েছে৷–সম্পাদক৷) এতে হলদিয়া বন্দরের যেমন উন্নতি হবে তেমনি কাঁথি শহর নোতুন দিনের আলো পাবে৷ সৈকত–শহর দীঘা আরও জনপ্রিয় হবে ও দক্ষিণ মেদিনীপুর নোতুন আলোয় ভেসে উঠবে৷ শুধু তাই নয়, এতে স্থানীয় মৎস্যজীবীরা, পাণ–চাষীরা, কলা–চাষীরা ও ফুল–চাষীরা তাঁদের পণ্যের উপযুক্ত মূল্য আশা করতে পারবেন৷ সমুদ্র তীর বরাবর এ্যারোকেরিয়া বর্গীয় (জাপানী ঝাউ) গাছ লাগালে শোভা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সামুদ্রিক ঝড় প্রতিরোধের কিছুটা ক্ষমতা আছে৷ হলদিয়া থেকে সমুদ্র বরাবর সুবর্ণরেখার মোহানা পর্যন্ত মেরিন–ড্রাইভ গোছের একটি রাস্তা তৈরী হ’লে আরও ভাল হয়৷ এতে শুধু ভ্রমণকারীদের কাছে আকর্ষণীয় হবে তাই নয়, পথিপার্শ্বে ছোট–বড় ব্যবসা কেন্দ্র ও শহর গড়ে উঠবে৷ তাতে স্থানীয় মানুষের আর্থিক উন্নয়নে বিশেষ সুবিধা হবে৷ কাঁথি–জুনপুটের মধ্যবর্ত্তী এলাকায় সমুদ্র–নির্ভর শিল্প গড়ে তোলা যায়৷ কাঁথির কাছে রসুলপুর নদীর মোহানায় ছোট একটি বন্দরও গড়ে তোলা যায়৷ প্রাকৃতিক সুযোগ–সুবিধা থাকায় বন্দর তৈরীর খরচও পড়বে যৎসামান্য৷