লক্ষণ ঃ আক্রান্ত স্থানে কাটা–ছেঁড়ার মত যন্ত্রণা, অতিরিক্ত অসহিষ্ণুতা বোধ, স্পর্শকাতরতা, দুর্বলতা, বমনেচ্ছা প্রভৃতি এই ব্যাধির প্রধান লক্ষণ৷ রোগটির প্রথম অবস্থায় রোগী বিশেষ কোন যন্ত্রণা অনুভব করে না, তাই প্রথমের দিকে রোগটি প্রায়শই উপেক্ষিত হয়৷
কারণ ঃ রোগটি সর্বদৈহিক তথা ত্রিদোষজ৷ বিভিন্ন কারণের একত্র সমাবেশে এর উদ্ভব৷ সাধারণতঃ দেখা যায় স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন না করার ফলে যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগে, তৎসহ যদি অলসতা, অসংযম, নিবানিদ্রা বা রাত্রিজাগরণের অভ্যাস থাকে, তারাই এই ব্যাধিতে অধিক সংখ্যায় আক্রান্ত হয়৷ কোষ্ঠকাঠিন্যের ফলে রক্ত তথা দেহাভ্যন্তর দূষিত পাচক রসে ও দূষিত বায়ুতে জর্জরিত হয়ে পড়লে এই রোগ প্রকাশ পায়৷ যারা অতিরিক্ত অসংযমী তাদের দেহযন্ত্রের কতকগুলি অংশ দুর্বল হয়ে পড়ে ও অতিরিক্ত শুক্রক্ষয়ের ফলে রক্ত নিঃসার হয়ে যায়৷ এইরূপ মানুষ অতিরিক্ত আমিষ গ্রহণ করলে রক্ত অম্লবিষপ্রধান হয়ে পড়ে ও দেহের দুর্বল অংশে ধীরে ধীরে রোগ ফুটে ওঠে৷
যারা শারীরিক পরিশ্রম করে না অথচ অম্লধর্মী খাদ্য বা লঙ্কা অথবা মাদকদ্রব্য, বিশেষ করে তামাকজাত দ্রব্যের অধিক ব্যবহার করে থাকে তাদেরও দেহের দুর্বল অংশ এই রোগে আক্রান্ত হবার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায়৷
চিকিৎসা ঃ রোগী যে কারণে রোগগ্রস্ত হয়ে পড়েছে সেই কারণগুলি বুঝে তদনুযায়ী আসন–মুদ্রার ব্যবস্থা দিতে হবে৷ এই রোগে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে থাকে৷ তাই কোষ্ঠ পরিষ্কারের দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে৷
প্রত্যুষে ঃ উৎক্ষেপ মুদ্রা, নাসাপান, দীর্ঘপ্রণাম, যোগমুদ্রা, ভুজঙ্গাসন ও কর্কট প্রাণায়াম৷
দ্বিপ্রহরে ঃ উৎক্ষেপমুদ্রা ও নাসাপান বাদে প্রত্যুষের অনুরূপ৷
সন্ধ্যায় ঃ মৎস্যেন্দ্রাসন, পদহস্তাসন, শয়নবজ্রাসন ও কর্মাসন৷
রোগী যদি এই চারটি আসনে অপারগ হয় তবে সেক্ষেত্রে সর্বাঙ্গাসন, মৎস্যমুদ্রা, নৌকাসন ও পশ্চিমোত্তানাসান অভ্যাস করবে৷ রোগী এতেও অপারগ হ’লে দ্বিপ্রহরে অনুরূপ৷ প্রত্যহ ব্যাপক স্নানও রোগীর অবশ্য করণীয় শরীরে সহ্য হ’লে দ্বিপ্রহর ও সন্ধ্যা দু’বেলায় স্নান করা যেতে পারে৷
পথ্য ঃ রক্তের অম্লভাগ কমাবার জন্যে ও যকৃতের কাজ ঠিক ভাবে চালু রাখবার জন্যে রোগীকে যতদূর সম্ভব ক্ষারধর্মী খাদ্য অর্থাৎ সর্ব প্রকার ফল–মূল, শাক–সব্জীর ঝোল প্রভৃতি খেতে হবে৷ যকৃতের অবস্থা বুঝে যথেষ্ট পরিমাণে দুধও রোগীকে গ্রহণ করতে হবে৷ যকৃৎ যাদের খারাপ তারা গোদুগ্ধের পরিবর্ত্তে নারকোল বা বাদামের দুধ অথবা ঘোল ব্যবহার করবে৷ রাত্রের আহার আট ঘটিকার মধ্যে সেরে ফেলতে হবে৷ দু’বেলায় আহারান্তে ঘণ্ঢা খানেক দক্ষিণ নাসা প্রবাহিত রাখতে হবে৷ দৈনিক প্রায় আড়াই সের জল রোগীর পান করা উচিত, তবে কখনও এক সঙ্গে আধ পোয়ার অধিক নয়৷ আনারস, জাম, কলা ও অন্যান্য সব রকমের নেবু ও টমেটো এই রোগে আহার ও ঔষধ দুই–ই৷
বিধি–নিষেধ ঃ কর্কট রোগীর পক্ষে আতপস্নান অত্যন্ত হিতকর৷ প্রত্যহ ব্রাহ্ম মুহূর্তে ও গ্রীষ্মকালে সকাল ন’টা থেকে দশটা–এগারটা মধ্যে ও শীতকালে দুপুর বারটা পর্যন্ত আতপস্নান করা উচিত৷ আতপস্নানের পর ভিজে গামছার সাহায্যে সর্বাঙ্গ অবশ্যই মুছে ফেলা উচিত৷ সর্বাঙ্গে মাটি মেখে প্রত্যহ নদীতে অবগাহন করলেও এই রোগে বেশ ভাল ফল পাওয়া যায়৷ রোগীর পক্ষে দিবানিদ্রা, রাত্রিজাগরণ, লঙ্কা, আমিষ খাদ্য ও মৈথুন কঠোরভাবে পরিত্যজ্য৷ সামর্থ্যমত উন্মুক্ত স্থানে ভ্রমণ ও যে সকল রোগী স্বভাবগতভাবে অলস তাদের পক্ষে কিছুটা শারীরিক পরিশ্রমও করা দরকার৷ কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখার জন্যে আহারান্তে হরীতকীর ব্যবহার বিধেয়৷
রোগী যাতে প্রতূ্যষেই শয্যা ত্যাগ করতে পারে তজ্জন্য রাত্রি ৮.৩০টা/৯টার মধ্যে শয়ন করা বাঞ্ছনীয়৷