এই বিশ্বসৃষ্টির মূলকারণ কী? প্রাণ বা প্রাণীনতার আদি বিন্দুটি কী? এই বিশ্বের কিংবা মহাবিশ্বের বুকে প্রাণীনতার আদিবিন্দুটি কী? এই প্রশ্ণের উত্তরে মহাপ্রাজ্ঞ শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার বলেছেন---‘‘এই মাইক্রোবাইটাম একটি অতিসূক্ষ্ম জীব৷ এদের মধ্যে যারা স্থূলতম তাদের দ্বারাই মহাকাশ থেকে জীবপ্রাণ উৎসারিত হয়ে এসেছে ও জড়াধারে এসেছে প্রাণের স্পন্দন৷ তারপর ঘাত প্রতিঘাতের ভেতর দিয়ে সংঘাত সংহতিতে সমিতি প্রমিতিতে ঘটেছে তার পরিবর্তন৷ এসেছে ডাইনোসর, এসেছে ঐরাবত,এসেছে বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ৷ আবার এরাই বিভিন্ন গ্রহে উপগ্রহে মানসসত্তাকে, জৈবসত্তার শরীর সংরচনাকে ধবংস করে চলেছে৷’ কাজেই ‘‘প্রাণের মূল কারণ এক কৌশিক প্রোটোজোয়া বা অনুজীবপঙ্ক নয়৷ প্রাণের উৎস হল এই মাইক্রোবাইটাম৷
সুতরাং মাইক্রোবাইটাম তত্ত্বের আলোকে বলতে পারি--- আজ হয়ত চাঁদ বা মঙ্গলগ্রহে কিংবা বৃহস্পতিগ্রহে আজকের বিজ্ঞানীরা প্রাণীণতার হদিশ খুঁজে পাচ্ছেনা, হয়ত বা আশু ভবিষ্যতে এই মাইক্রোবাইটামের প্রভাবে দেখতে পাবো ওখানেও অনেক আমাদের চাইতে উন্নত জীবের অস্তিত্ব মিলছে৷ শুধুমাত্রচন্দ্রে বা মঙ্গল গ্রহেই যে উন্নত জীবের সন্ধান মিলছে তা নয়৷ মাইক্রোবাইটাম তত্ত্বের আলোকে নিঃসন্দেহে বলতে পারি---একদিন বিশ্ব () তথা মহাবিশ্বে () মাইক্রোবাইটামের প্রাণীনতার সাহায্যে একদিন ভিনগ্রহে বুদ্ধিমান জীবের সৃষ্টি হবে৷
গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের কোন এক সময়ে আমাদের পরমারাধ্য ‘বাবা’ বলেছিলেন---আগামী সাড়ে তিন হাজার বছরের অনেক আগেই এই পৃথিবী নামক গ্রহটি আর মানুষের বসবাসযোগ্য থাকবে না৷ তাই তারকব্রহ্মও আর আসবেন না৷ ষাটের দশকের শেষের দিকে সংঘে যোগদান করার পর ২-৩ জন সিনিয়ার পূর্ণকালীন কর্মীর কাছে পরমারাধ্য ‘বাবা’ এই কথাগুলি বলেছেন আচার্য সুজিতজির কাছে৷ আচার্য সুজিতজির লিখিত কথার সমর্থনে আচার্য নিত্যসত্যানন্দ অবধূতজি যা লিখেছেন, পাঠক বর্গের কাছে কথাগুলিকে পুনরায় উপস্থাপিত করছি৷
আমরা জানি এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয়৷ এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবকিছুই একদিন পরিবর্তন হতে হতে প্রাণীন ও অপ্রাণীন সব সত্তাই মহাশূন্যে বিলিন হয়ে যাবে৷ একদিন আমাদের এই সৌরজগতের মধ্যে অবস্থিত পৃথিবী নামক গ্রহটাও আর বসবাসযোগ্য থাকবে না৷ যদিও আরও কিছুদিন বসবাসযোগ্য থাকত---কিন্তু পৃথিবীর উপর প্রতিনিয়ত অমানবিক অত্যাচারের ফলে জল, স্থল, আকাশ, বায়ুমণ্ডলকে ব্যাপকভাবে দূষন করে চলেছে৷ পৃথিবীর দুইমেরু যে হারে গল্তে শুরু করেছে, তাতে করে সমগ্র পৃথিবীটাই হয়ত একদিন খুব শীঘ্রই জলের তলায় তলিয়ে যাবে৷ সুতরাং মানব সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে দূর ভবিষ্যতে অন্যগ্রহে আমাদের পাড়ি দিতে হবে৷ অনেক মানুষকে সেখানে নিয়ে গিয়ে বসতি স্থাপন করতে হবে৷ কিন্তু প্রশ্ণ হ’ল অন্যগ্রহে কি কোন উন্নত জীবের অস্তিত্ব আছে? ‘বাবা’-কে এই প্রশ্ণই সর্বপ্রথম আচার্য সুজিতজি করেছিলেন৷
‘বাবা’ এই প্রশ্ণের উত্তর দিয়েছিলেন--- ‘‘হ্যাঁ আছে৷’’
প্রশ্ণ ঃ কোথায় আছে?
‘বাবা’ বলেছিলেন--- বিশাখা নক্ষত্রে৷
‘বাবা’-কে এই প্রশ্ণগুলি যখন করেছিলেন---তখন ছিল ১৯৬৩ সাল৷ একদিন আচার্য সুজিত কুমারজি পরমারাধ্য ‘বাবা’র সাথে ‘সংস্কার’ সম্বন্ধে আলোচনা করছিলেন আর উত্তর দিচ্ছিলেন স্বয়ং ‘বাবা’৷ ওই দিন ‘বাবা’ ডেমনেস্ট্রশনের মাধ্যমে বহু আশ্বর্যজনক বিস্ময়কর ও অবিশ্বাস্য তথ্যের কথা দেখিয়ে ছিলেন৷ সুজিতজি একবার বাবাকে প্রশ্ণ করেছিলেন আচ্ছা ‘বাবা’ এটা কি সম্ভব হতে পারে যে অন্যকোনও গ্রহে যেখানে মানুষের মত উন্নত জীব আছে---সেখানকার জীব কি এখানে অর্থাৎ পৃথিবীতে জন্ম নিতে পারে? তা কি সম্ভব? বাবা বলেছিলেন---হ্যাঁ সম্ভব৷ কিন্তু এমন ব্যাপার খুব কমই হয়৷ তবে হয়৷ বিশাখা নক্ষত্রে মানুষের মত উন্নত জীব বাস করে, তখন তিনি এব্যাপারে বাবাকে আরও কিছু প্রশ্ণ করেন৷ উত্তরে বাবা বলেছিলেন--- বিশাখা নক্ষত্রে মানুষের মত উন্নত জীব আছে৷
সুজিতজি এই সময় প্রশ্ণ করেছিলেন---তাঁরা কি আধ্যাত্মিক সাধনা করে?
বাবা--- হ্যাঁ করে৷ ওরা যে আধ্যাত্মিক সাধনা করে তা বেশ উন্নত ধরনের৷
এরপর সুজিতজি প্রশ্ণ করেন---ওখানে কি আনন্দমার্গের মতো কোনও সংস্থা আছে?
বাবা উত্তর দিয়েছিলেন---হ্যাঁ আছে৷
প্রশ্ণ ---এখানে তো আমরা সংঘের ইয়ূনিট তৈরি করি৷ কমপক্ষে পাঁচজন সাধক-সাধিকা দিয়ে একটি আনন্দমার্গের ইয়ূনিট তৈরী করা হয়৷ যারা নিয়মিত একটি নির্দিষ্ট স্থানে আনন্দমার্গের আদর্শানুযায়ী রীতি-পদ্ধতি মেনে সমবেত সাধনা করে থাকেন৷ সমাজে আনন্দমার্গের আদর্শ প্রচারের জন্য ইয়ূনিটের প্রত্যেকে বিভিন্ন দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ দয়া করে যদি বলেন যে আজ পর্যন্ত বিশাখা নক্ষত্রে ক’টি ইয়ূনিট তৈরী হয়েছে?
‘বাবা’ উত্তর দিলেন--- আশিটি
প্রশ্ণ--- ওখানে কি এখানকার মতো ‘আচার্যের’ ব্যবস্থা আছে---যিনি আধ্যাত্মিক সাধনা শেখান ও দীক্ষা দেন?
‘বাবা’---বললেন--- হ্যাঁ আছে৷
১৯৬৩ সালের ঘটনা এটা৷ ‘বাবা’র এই কথা শুনে আচার্য সুজিত কুমার জির দৃঢ়ধারণা হল যে, অতীতে বেশিদিন আগে নয়, বাবা বিশাখা নক্ষত্রে তারকব্রহ্মরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন৷
অন্য একজন সাধকের কাছে আচার্য সুজিতজি শুণেছিলেন যে পরমারাধ্য ‘বাবা’ নাকি বলেছিলেন যে আমাদের এই গ্যালাক্সিতে ৪৯টি গ্রহে মানুষের মত উন্নত জীব আছে৷ তবে কবে কোথায় কোন প্রসঙ্গ বাবা এই কথাগুলি বলেছিলেন তা সুজিতজি জানতে পারেননি৷
ব্রহ্মাণ্ড এর কথা ‘বাবা’ বলেছেন, কিন্তু এই ব্রহ্মাণ্ড এর ধারণা হয়ত বা অনেকের ভালভাবে নেই৷
এই কারণেই এখানে এই গ্যালাক্সি-এর সম্পর্ক দু’-চারটে কথা সংক্ষেপে আলোচনা করে নিচ্ছি৷ মোটামুটি আমরা যে ব্রহ্মাণ্ড বা গ্যালাক্সিতে বসবাস করি সেই গ্যালাক্সিটি মোট দশ হাজার কোটি নক্ষত্রের মধ্যে সূর্য হল এই গ্যালাক্সির মধ্যে অতি ক্ষুদ্র ও নগন্য একটি নক্ষত্র৷ আর আমরা হলাম এই ব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্র ৩০,০০০ আলোকবর্ষ দূরে, পৃথিবী নামক এক শহর তলীয় বাসিন্দা৷ এই হল আমাদের ভৌগোলিক পরিচয়৷
আজ সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের ব্রহ্মাণ্ডের মত মহাকাশের বুকে অজস্র ব্রহ্মাণ্ডের সহিত যোগাযোগ করতে হবে৷ তাই বাবা তারকব্রহ্ম বা মহাসম্ভূতিরূপে এত তাড়াতাড়ি এসেছিলেন৷ আজ হতে সাত হাজার বছর আগে সদাশিব এসেছিলেন ভারতে, এরপর সাড়ে তিনহাজার বছর পর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এসেছিলেন ভারত গড়তে৷ কিন্তু বাবা এসেছেন মহাবিশ্বব্রহ্মাণ্ড গড়তে৷
কালচক্রের এই নিয়ম অনুযায়ী আমরা তো সাড়ে তিন হাজার বছর পর আবার তারকব্রহ্মের আবির্ভাব আশা করতেই পারি---তাই না? কিন্তু না এই শেষবারই আনন্দমূর্ত্তিজীর নাম রূপের মাধ্যমে তারকব্রহ্মরূপে এই গ্রহে এসে গেলেন৷ এই কারণেই ‘বাবা’ পৃথিবীতে এত তড়িঘড়ি এসেছেন এক ‘অজানা’ পথিক রূপে৷
প্রভাত সঙ্গীত ঃ
অজানা পথিক এসেছে, আলো জ্বেলেছে কুটিরে আমার৷
হাসিতে মুকুতা ঝরে, যা কিছু করে ভালো যে তাহার৷৷
তন্দ্রা ভাঙ্গায় মধুর তানে, চন্দ্রালোকে রাঙায় প্রাণে৷
বর্ষা নামায় প্রীতির টানে, সে বানে হিয়া ভাষায় সবার৷৷
জানে সে বাসিতে ভালো, বাছে না মন্দ ভালো৷
দেখে না শাদা কি কালো, ভরে দেয় মমতা অপার৷৷
মহাসম্ভূতি বাবা আবার আমাদের অজানা পথিকরূপেই পৃথিবী ছেড়ে কাউকে না জানিয়ে ১৯৯০ সালের ২১শে অক্টোবর রাত্রে সকলকে চোখের জলে ভাসিয়ে পৃথিবী ছেড়ে অজানা জগতে চলে গেলেন৷
প্রভাত সঙ্গীত ঃ
তুমি এসেছিলে কাউকে না বলে’ না জানিয়ে চলে গেলে
মোর আরও গীতি ছিল গাওয়ার, আবও ছন্দে তালে৷৷
ভাবিতে পারিনি আমি, এভাবে আসিবে তুমি৷
এমনি যাবে চলে আঁখিজলে মোরে ফেলে’৷৷
ধরার ধূলিতে যত ফুল ফোটে শত শত৷
তাদের কোরক তলে দিয়ে গেলে মধু ঢেলে’৷
প্রাউট ও নব্য মানবতাবাদের প্রণেতা জগৎগুরু শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী কেবলমাত্র সদ্বিপ্র সমাজ ঘটনের উদ্দেশ্যে তারকব্রহ্মরূপে এই পৃথিবীতে আসেননি৷
শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী নিজেই বলেছেন---
‘‘আমি এখানে সধ্বিপ্র সমাজ ঘটনের উদ্দেশ্যে আসিনি৷ সেটা আমার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে পৃথিবী ভক্তি-স্রোতে প্লাবিত করা৷’’
''I have not come here to establish sadvipra samaj. That is but a fraction of my purpose.My real mission is to inundate the world with devotion.''
- Log in to post comments