‘‘তমসাবৃত নিশীথে আলোর আমেজ কি কেবল মানুষই চায়?....সবাই চায়৷ তিমিরাচ্ছন্ন আস্তিত্বিক বিস্মৃতির ভেতর দিয়ে উত্তরণের উত্তাপ.....বেঁচে থাকা....বেড়ে থাকার আকুতির পরিপূর্তি সবাই চায়৷ সবাইকার এই চাওয়াটা পাওয়ার মাধুর্যে পূর্ণত্বের দিকে এগিয়ে চলবার প্রথম সুযোগ যে মহাশম্ভূতির মাধ্যমে পৃথিবী পেয়েছিল তার সম্বন্ধে যথাযথভাবে আলোচনা মানুষ করেনি৷’’
আনন্দমার্গ দর্শন প্রণেতা পরমশ্রদ্ধেয় শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী তাঁর নমঃ শিবায় শান্তায় গ্রন্থে শিব সম্পর্কে লিখতে গিয়ে ওপরে কথাগুলি উল্লেখ করেছেন৷ সত্যিই শিব সম্পর্কে যথাযথ আলোচনা হয়নি বলেই প্রকৃত শিবের সঙ্গে মানুষের আজও পরিচয় হয়নি৷ তাই মানুষ জানে শিব ভাঙ্গ গাঁজা খায়, দিগম্বর হয়ে ঘুরে বেড়ায়, শিবকে একটা বিকৃত রূপ দেবার চেষ্টা হয়েছে৷ ভারতবর্ষের পুঁজিবাদী শাসন ব্যবস্থায় এটাই স্বাভাবিক৷ কারণ যুব সমাজ যত শিবের অনুগামী হয়ে ভাঙ গাঁজায় মেতে থাকবে, শোষকের শোষণযন্ত্র ততই সহজে চলবে৷ শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি আদর্শ মানব সমাজ গড়তে যেমন এক পূর্ণাঙ্গ সর্বানুসূ্যত জীবনদর্শন দিয়েছেন, পাশাপাশি প্রাচীন ভারতের যথাযত ইতিহাসকেও মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন৷ আজ থেকে প্রায় ৭ হাজার বছর আগে যখন সদাশিব আমাদের এই ধরাধামে আবির্ভূত হয়েছিলেন তখনও মানব সমাজ গড়ে ওঠেনি৷ পরিবার প্রথাও গড়ে ওঠেনি৷ শিবই প্রথম বিবাহিত পুরুষ৷ তিনি বিবাহ করে পরিবার প্রথা গড়ে তুলে মানব সমাজ ঘটনের ভিত্তি তৈরী করেন৷ তিনি চিকিৎসা বিদ্যা ও সুর সপ্তকের আবিস্কার করে সঙ্গীত বিদ্যাকে বিধিসম্মত রূপ দেন৷ তন্ত্র ও যোগ সাধনাকে তিনি বিধিসম্মত রূপ দেন৷ তাই শিবকে আমরা বলতে পারি মানব সভ্যতার জনক৷ কিন্তু আজ প্রকৃত শিবের পরিচয় মুছে দিয়ে শিবের বিকৃত রূপ দেখিয়ে যুব সমাজকে বিপথগামী করা হচ্ছে৷ পুঁজিবাদী শোষকের শোষনের ধারা বজায় রাখার এও এক কৌশল৷ তাই আনন্দমূর্ত্তিজী তাঁর গ্রন্থে প্রকৃত শিবকে মানুষের সামনে তুলে ধরলেন৷
শিব সম্পর্কে লিখতে গিয়ে তিনি বললেন--- ‘‘মানব সভ্যতা ও মানব সংস্কৃতির বিবর্ত্তনে শিবের যে বিরাট ভূমিকা তাতে এই কথাই বলা সঙ্গত হবে যে শিবকে বাদ দিয়ে মানব সভ্যতা, মানব সংস্কৃতি দাঁড়াবার ঠাঁই পাবে না৷ কিন্তু মানব সভ্যতা মানব সংস্কৃতিকে বাদ দিয়েও শিব স্বমহিমায় ভাস্বর থাকবেন৷’’
পরিশেষে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী কথায় শেষ করি---
সুর সপ্তকের আবিষ্কার করেন শিব৷ বর্তমান পৃথিবীর সংগীত সম্পূর্ণভাবে সুরসপ্তকের ওপর আধারিত৷ অত্যন্ত দুঃখের কথা শিব এই যে গভীর সাধনায় সংগীতের প্রথম চরণ বিন্যস্ত করে গেছিলেন লোকে সে সাধনা ভুলে যাচ্ছে৷..... আজ হা-হুতাশ করে কেউ যদি বলেন:
আর কি ভারতে আছে সে যন্ত্র!
আর কি আছে সে মোহন মন্ত্র!
আর কি আছে সে মধুর কন্ঠ!
আর কি আছে সে প্রাণ!
সেথা আমি কি গাহিব গান!
আমি বলব, যদি শিবের অনুগামীরা শিবের পথ ধরে তার শতকরা এক ভাগও এগিয়ে যায়, তাহলে ভারতে... পৃথিবীতে.... এই মহাবিশ্বে সেই মোহন মন্ত্র আর মধুর কন্ঠ আবার ফিরে আসবে৷
- Log in to post comments