মানুষের স্বার্থবুদ্ধি কেড়ে নিল একটি নিষ্পাপ প্রাণ 

সংবাদদাতা
বিশেষ প্রতিবেদন
সময়

মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে পারল না অবোধ শিশু ঋষভ সিং৷ আট দিনের লড়াইয়ের পর মৃত্যুর কাছে হার মানতে হ’ল তাকে৷  গত ১৪ই ফেব্রুয়ারী সুকল যাওয়ার পথে পুলকার দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিল ঋষভ৷

একটি অবোধ শিশুকে এভাবে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে হ’ল কেন? পুলকার দুর্ঘটনা কী নিছকই একটি ঘটনা? কে তাকে ঠেলে দিল এই দুর্বহ জীবনযুদ্ধে? অবশ্যই এই সমাজ, এই রাষ্ট্র৷ যে সমাজ যে রাষ্ট্র চতুর্দিক দিয়ে অন্যায়-অবিচার দ্বারা, অসত্যের দ্বারা পরিবৃত৷ স্বার্থের বন্ধনে জর্জরিত মানুষ দিন দিন বিবেকহীন বিচারবোধহীন পশুতে পরিণত হচ্ছে৷ তার বলি হতে হচ্ছে ঋষভের মত নিষ্পাপ অবোধ শিশুদের৷

পুলকার দুর্ঘটনা নতুন নয়, আকস্মিকও নয়৷ দুর্ঘটনা আগেও হয়েছে, এই নিয়ে পত্র-পত্রিকায় অনেক হৈ-চৈ হয়েছে৷ তবু অবৈধ গাড়ী নিয়ে বেপরোয়া চালকের দৌরাত্ম কমেনি৷ এমনকি এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পরও শহরের বুকে পুলকার দৌরাত্ম্য দেখা গেছে৷

প্রশ্ণ হচ্ছে বছরের পর বছর এইভাবে বিধিনিষেধকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে প্রশাসনের বুকের ওপর দিয়ে অবৈধ গাড়ীগুলো চলে কী করে? অভিযোগ অবৈধ পুলকার মালিক ও চালকদের সঙ্গে প্রশাসনের একটা অলিখিত বোঝাপড়া আছে৷ গাড়ীগুলো চলার উপযুক্ত না হলেও চলছে৷ মাঝে মাঝে লোকদেখানো পরীক্ষা-নিরিক্ষা রাস্তার মাঝে দেখা যায়৷ কিন্তু ওই পর্যন্তই৷

দুর্ঘটনা জীবনেরই অঙ্গ৷ তাই নিয়ে সাতকাহন বলার কি আছে! সবই বিধিলিপি বলে ভগবানের ঘাড়ে দোষ দিয়ে অপরাধ ঢাকার প্রবণতা এই সমাজের আছে৷ আসলে এ সবের পেছনেই আছে মানুষের স্বার্থবুদ্ধি৷ উপরি আয়ের আশায় সবাই ছুটছে আইনকে ফাঁকি দিয়ে স্বার্থ-লোভে৷

এই স্বার্থবুদ্ধি ও সীমাহীন লোভ শুধু পুলকারই নয়, সকল প্রকার যানবাহন ও সমাজের সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতির বাসা বেঁধে চলেছে৷ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে বে-পরোয়া অসংযমী আচরণ৷ এই বে-পরোয়া মনোভাবই  সেইদিন পুলকার চালককে বে-পরোয়া করে দিয়েছিল৷ তাই সামনের ট্রাককে অতিক্রম করার সময় তার মনে একবারও আসেনি---তার হাতের স্টিয়ারিঙে অনেকগুলো অবোধ শিশুর প্রাণ আছে৷

এই বে-পরোয়া মনোভাবেই সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার সুশৃঙ্খল পরিকাঠামো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে৷ আর ঋষভের মত অবোধ নিষ্পাপ শিশুরা অসময়ে চলে যাচ্ছে৷ প্রশাসক, মন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে কঠোর ব্যবস্থা নেবার৷ মানুষের স্বার্থবুদ্ধি নতুন করে অবৈধ পথ খুঁজছে৷