মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু কে? কেউ বলে ভয়, কেউ বলে হীনমন্যতা৷ সূক্ষ্মভাবে যদি দেখা যায় তাহলে ৰোঝা যাবে যে হীনমন্যতার জন্ম ভয় থেকেই৷
ভয় দু’প্রকারের– যা বাহ্যবস্তু থেকে আসে(external source) যার উদ্ভব আমাদের অন্তস্তলে(internal source)৷ একটি শরীরের ভয়, অন্যটি মনের ভয়৷ ধর, এক বড় পশু এসে গেল৷ সেটি ‘হালুম’ বলে তোমাকে খেতে চায়৷ স্বভাবতঃই তুমি ওখান থেকে পালিয়ে যাবে৷ এই শারীরিক ভয়ের পিছনে আছে আত্মরক্ষার চেষ্টা আর তা কোনো ব্যাধি নয়৷ এটা স্বাভাবিক ব্যাপার, আর মানুষ নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী এইসব পরিস্থিতিতে সামঞ্জস্য স্থাপন করে নেয়৷
কিন্তু আন্তরিক ভয় সবচেয়ে বিপজ্জনক৷ ধর, একজন মানুষ শারীরিকভাবে দুর্বল কিন্তু সাহসী৷ আর একজন বলবান কিন্তু সাহসী নয়৷ যদি দু’জনের মধ্যে লড়াই হয়, সাহসী মানুষটিরই জয় হবে৷ এর কারণ কী? ভিতরের ভয় যার মধ্যে যত কম, সে তত বেশী সাহসী হবে৷ হীনমন্যতার(inferiority complex) জন্ম ভিতরের ভয় থেকে৷ ধর, কারোর দ্বারা একটা অন্যায় বা অনুচিত কাজ হয়ে গেছে৷ ভিতরের ভয়ের কারণে সে তোমার সামনে আসবে না৷ দূূরে দূরে থাকার চেষ্টা করবে৷ এটা হ’ল ভিতরকার ভয়ের প্রভাবে৷ মানুষকে ভিতরের ভয় থেকে সতর্ক থাকতে হবে৷ যার মধ্যে এই ভয় দেখবে, তার মন থেকে সেটা দূর করার চেষ্টা করবে৷ তাকে বলবে, ‘ভয়ের কোনো কারণ নেই৷ মানুষের দ্বারা ভুল হয়েই যায় কিন্তু সে সংশোধনও করে নেয়৷ এখন থেকে ভয়ের সম্বন্ধে আর ভাববে না৷ কেবল সংশোধনের সম্পর্কে ভাববে৷ শীঘ্রই তোমার মন শক্ত হয়ে যাবে৷’
একজন মানুষ অনেক উঁচুতে পৌঁছে যায়, আর একজন মানুষ চাইলেও তা হতে পারে না৷ এর প্রধান কারণ আন্তরিক ভয়৷ তাই ভয় মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু৷ কেউ চুরি করল৷ পুলিশ ও সমাজ থেকে সে ভয় পাবে৷ তাই ভয়ের কারণে সে কী করবে? সমাজ আর পুলিশ থেকে দূরে দূরে থাকবে৷ এর পরে কী হবে? সম্ভবতঃ নিজেকে তৈরী করবার চেষ্টা না করে সে সকলের থেকে দূরে থাকতে চাইবে৷ ভালো হবার চেষ্টা সে করল না৷ তাই সে দ্বিতীয়বার চুরি করবে৷ সে সমাজ আর পুলিশের কাছ থেকে আরও দূরে থাকার চেষ্টা করবে কেননা নিজেকে তৈরী করার প্রয়াস সে করছে না৷ এইভাবে যে ছিল চোর, সে একদিন হয়ে যাবে ডাকাত৷ কিন্তু এই ভয় যার মধ্যে নেই, সে চুরি করে ফেললেও পুলিশ বা সমাজের কাছে খোলাখুলি স্বীকার করে নেবে৷ শাস্তি তো সে পাবেই কিন্তু যেহেতু ভয় নেই, তাই একদিন সে সংশোধিত হয়ে যাবে৷ যেখানে ভয় আরও কম, সেখানে চুরিই করবে না৷
যে মানুষ নির্ভয় সে–ই নীতিবান হয়৷ সাধনার মাধ্যমে নীতিবান তৈরী হয় আর সেই মানুষই নির্ভয় হয়ে যায়৷ যার মধ্যে ভয় নেই, সে সাধনা করে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাবে৷ যার মধ্যে ভয় একটু বেশী, সাধনা করে ভয়কে সরিয়ে দেবে৷ তবেই সে এগিয়ে যাবে৷ তাই তোমরা মনে রাখবে, কেন ভয় পাব? ভয় কেন মনের মধ্যে থাকবে?
নিমের ক্ষীজ থেকে যে গাছ হবে তাতে কখনও আম ফলতে পারে কি? তা হতে পারে না৷ আমের ক্ষীজ হলে তবেই আম হবে, এটাই নিয়ম৷ বাঘের বাচ্চা কি শিয়ালের মত হুক্কা হুয়া করবে? – না, সে করবে হাঁউ, হাঁউ৷
মানুষের পরমপিতা কে? আদিপিতা কে? পরমপুরুষই সকলের আদিপিতা৷ যেহেতু সকলেই পরমপুরুষের সন্তান, তাই কার কাছে থেকে ভয় পাবে? পরমপুরুষের সন্তানকে অন্যে সকলেই ভয় করবে৷ সে কেন কারও কাছ থেকে ভয় পাবে মনে আন্তরিক ভয় তখনই বাসা বাঁধে যখন সে ভুলে যায় বা ভুলে থাকে যে পরমপুরুষ তার পিতা৷ মানুষ যখন সাধনা করে তখন এই কথা তার মনে সবসময় থেকে যায়৷ এতে স্বাভাবিকরূপে সে নির্ভয় হয়ে যায়৷ তাই সাধনা করা প্রতিটি মানুষের কর্তব্য কেননা নিজের সত্য পরিচয় সাধনার দ্বারাই সবসময় তার মনে থাকে, নাহলে ভুলে যায়৷ সিংহের বাচ্চা শিয়ালের মত আচরণ করে বসে৷ তোমরা কখনও হুক্কা হুয়া করবে না, তোমরা করবে হাঁউ হাঁউ৷ তোমাদের জয় হোক৷