মাতৃভাষা লতে কী বোঝায়? মাতৃভাষা হচ্ছে সেই ভাষা যাতে খোলামেলা পরিবেশে আমরা সহজে স্বচ্ছল ভাবে ও স্বতঃস্ফূর্ত্ত ভাবে আমাদের ভর্া ব্যক্ত করতে পারি, যেমন ভাবে আমরা আমাদের মায়ের মত অন্তরঙ্গ জনের সঙ্গে কথোপথনের মধ্য দিয়ে ভাব বিনিময় করি৷ উদাহরণ স্বরূপ, পূর্ণিয়া জেলার একজন মানুষ তার নিকটতম ন্ধুর সঙ্গে অঙ্গিকা ভাষা ছাড়া অন্য কোন ভাষাতে কথা লর্ে না৷
এখন দেখা যাক্ ভাষার সঙ্গে সমাজিক অর্থনৈতিক প্রগতির ও সাংস্কৃতিক বিকাশের কোন ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ আছে কিনা৷ আমি আগেই লেছি ভাষা যেহেতু অন্তর্নিহিত ভাব ও চিন্তা প্রকাশের মাধ্যম সেহেতু তা মানুষের প্রাণধর্মের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত৷ নিজস্ব মাতৃভাষায় একজন যেমন স্বচ্ছন্দে ও সাবলীল ভাবে নিজের ভাবকে প্রকাশ করতে পারে তেমনটি অন্য কোন ভাষায় পারে না৷ মাতৃভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় কথা লতে সে অসুবিধা বোধ করে৷ প্রতিনিয়তই যদি অন্য ভাষায় কথা লিয়ে এরূপ অস্বচ্ছন্দ বোধ করতে তাকে াধ্য করানো হয় তর্ে তার প্রাণশক্তি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হর্ে---ক্রমশঃ প্রাণশক্তি দুল হয়ে পড়র্ে৷ এই রকম পরিস্থিতিতে সেই ব্যষ্টি বা ব্যষ্টি সমূহের মধ্যে এক মনস্তাত্ত্বিক সংকট দেখা দের্ে৷ প্রথমেই তার মধ্যে দেখা দের্ে এক ধরণের হীনম্মন্যতা বোধ---যা মানুষের মানসিক দুলতার কারণ৷ যাদের ভাষা অবদমিত হর্ে তাদের নৈতিক সাহস, উদ্যম ও প্রতিবাদ করার শক্তি হারিয়ে যার্ে৷ শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্যে একটা পরাজিতের মনোভাব জাগবে---যা কোন জনগোষ্ঠীর প্রাণ-স্পন্দনকে অচিরেই স্তব্ধ করে দের্ে৷
সুতরাং ভাষার অবদমন মানুষের মনে মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে৷ এই ধরণের ক্রমাগত অবদমনের ফলে জনগণ কখনই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারর্ে না ও তাদের অকালে অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটর্ে৷ এ বিষয়ে স চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে যে, ভাষার ক্ষেত্রে অবদমিত এই জনগোষ্ঠী মানস-অর্থনৈতিক শোষণের চাপে পড়ে স সময় আর্থিক দিক থেকে পেছিয়ে থাকবে৷ এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে ভারতবর্ষ সমেত সমস্ত পৃথিবীতে এই ট্র্যাজেডীটাই ঘটে চলেছে৷
‘সমাজ’ কথাটির অর্থ হ’ল, সকলে মিলেমিশে একসঙ্গে চলা---‘সমানম্ এজতি’৷ মানুষের উচিত যারা পেছনে পড়ে আছে তাদেরও সঙ্গে নিয়ে চলার সর্ব’তোভাবে প্রয়াস করা৷ এটাই সমাজের বৈশিষ্ট্য৷ তাই প্রাউট সুষ্পষ্ট ভাবে লে যে, প্রত্যেক প্রগতিশীল সমাজ ব্যবস্থায় সমস্ত ভাষাকেই সমান স্বীকৃতি, সুযোগ ও অধিকার দিতে হর্ে৷ একথা মনে রাখতে হর্ে যে, এই স্বীকৃতি কেবল তথাগতভাবে ও পঠন-পাঠনে সীমর্াদ্ধ রাখলে চলর্ে না, এ হতে হর্ে বৈবহারিক অর্থাৎ প্রাত্যহিক জীবনের সকল কর্মে এর স্বীকৃতি দিতে হর্ে৷ জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে---অফিস, আদালত, রেলওয়ে, বিমানবন্দর, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সরকারী-বেসরকারী সমস্ত কাজে প্রকাশের মাধ্যম হওয়া উচিত মাতৃভাষা৷ (কণিকায় প্রাউট ত্রয়োদশ খণ্ডের ভাষা সমস্যা প্রবচনের অংশ বিশেষ)