ভারতে সাধারণতঃ তিন ধরনের মউমাছি দেখা যায়– রক্–ক্ষী, ৰুশ–ক্ষী ও এপিস ইণ্ডিকা৷ রক–ক্ষী ৰড় জাতের মউমাছি, মধু প্রস্তুত করে প্রচুর পরিমাণে৷ চাক ৰড় ৰড়, সাধারণতঃ বটগাছে বা ৰড় ৰড় গাছের ডালে চাক ৰাধে৷ অনেক সময় চাক এত ৰড় হয় যে চাক ফেটে টস্ টস্ করে মধু মাটির ওপরে পড়তে থাকে৷ রক–ক্ষীর দ্বারা তৈরী মধু একটু ঝাঁঝাল হয়৷ এই মধু উগ্রবীর্য নামে খ্যাত৷ মানুষের প্রাণশক্তি যেখানে কমে এসেছে –মৃত্যুর হিমশীতলতা যেখানে তার অবসন্ন দেহে নেবে এসেছে, অনেক সময় সেই অবস্থায় এই উগ্রবীর্য মধু নোতুন করে প্রাণসঞ্চার করে দেয়৷ প্রাণশক্তি কমে যাওয়া মানুষের শরীরের অভ্যন্তরে যদি কোন রক্তক্ষয়ী রোগ না থাকে, তবে তিনটে কৃষ্ণতুলসীর পাতার সঙ্গে দশ ফোঁটা মধু প্রাতঃকালে খালিপেটে পান করলে তাতে অতি উত্তম ফল পাওয়া যায়৷ তবে কারও যদি অর্শ, রক্ত–আমাশায় বা দেহের অভ্যন্তরে ক্ষত (আলসার) থাকে তবে তার পক্ষে এটা পান করা অনুচিত৷
ৰুশ–ক্ষী হচ্ছে ছোট প্রজাতির মউমাছি৷ এরাও ভারতের প্রাচীন অধিবাসী৷ গাছে চাক তৈরী করা ছাড়াও এরা মাটির ঘরের দেওয়ালে চাক তৈরী করতে বেশী পছন্দ করে৷ এক একটি চাক থেকে মধু পাওয়া যায় খুবই কম৷ তবে মধু বেশ সুসন্তুলিত৷ স্বাদে গন্ধে ভাল৷ অন্যান্য মধুর চেয়ে লঘুবীর্য৷ ভাল নিম্ব মধু (নিম ফুলের মধু) এরাই তৈরী করে৷ এরা সহজে কামড়ায় না৷
এপিস–ইণ্ডিকা ভারতের সাবেকী মউমাছি৷ এদের আকার মাঝারি, এরা মাঝারি আকারের গাছে বাস করে৷ যে সব গাছে পুষ্পমধু (flower nector) বেশী পরিমাণে হয় তারা সেই গাছে বা সেই গাছের নিকটবর্ত্তী এলাকায় চাক তৈরী করে৷ এরা অনেক দূর পর্যন্ত উড়ে যেতে পারে৷ সরষে ফুলের মধু এরাই ভাল তৈরী করে৷ আয়ুর্বেদীয় ঔষধ প্রস্তুতিতে এদের তৈরী মধুই বৈদ্যরা বেশী পছন্দ করেন৷ সুন্দরবনে শীতের শেষে এরাই প্রথমে চাক তৈরী করতে এগিয়ে আসে৷ এদের চাকের মধুত্থ (মোম) বেশী নমনীয়৷
(পোষা) মউমাছিকে আখের রস খেতে দিলে সে তা থেকে অতি উত্তম মানের মধু তৈরী করতে পারে৷ বছরে সব সময় যথেষ্ট পরিমাণে ফুল না থাকায় কখনো কখনো পুষ্প–মধুর (flower nector) অভাব ঘটে৷ তাই সে সময় মউচাকে যথেষ্ট মধু জমা পড়ে না৷ পোষা মউমাছিকে (Bee-keeping) আখের রস খাওয়ালে এ সমস্যার সহজেই সমাধান হতে পারে৷ [দ্রব্যগুণের চিকিৎসায় অনেক ঔষধ–প্রস্তুতিতে মধু অনুপান হিসেবে ব্যবহূত হয়৷]