(১০) বৈদিক ‘ণজ্’ ধাতু ও লৌকিক সংস্কৃতে ‘নজ্’ ধাতুর অর্থ হ’ল লজ্জা পাওয়া৷ ‘নজ’ ধাতু+ ‘ক্ত’ প্রত্যয় করে আমরা ‘নক্ত’ শব্দটি পাচ্ছি৷ ‘জ’ তালব্য বর্ণ৷ তাই তার সঙ্গে দন্ত্য বর্গীয় ‘ত’ এর সংযুক্তি হয় না--- ‘ক’ বর্গের প্রথম অক্ষর ‘ক’ এর সঙ্গে সংযুক্তি হয়৷ তাই চ বর্গের স্থানে ‘ক’ বর্গের ‘ক’ ব্যবহার করে ‘নক্ত’ শব্দটি পেলুম৷ দিন যেখানে লজ্জা পেয়েছে এই অর্থে ‘নক্ত’ শব্দের মানে হচ্ছে ‘রাত্রি’৷ লজ্জা পেলে মানুষ আঁচলের খুঁট দিয়ে অথবা বস্ত্র খণ্ড দিয়ে অথবা রুমাল দিয়ে মুখ ঢাকে৷ তাই নত্ত+ ক = নক্তক, মানে বস্ত্র খণ্ড বা রুমাল (শব্দটি ফার্সী রুমাল/রোমাল দুই ৰানানই শুদ্ধ)৷ রুমাল অর্থে ‘নক্তক’ শব্দটি অনায়াসেই ব্যবহার করতে পারি৷ নক্তক> নত্ত> ন্যাতা৷ যাঁরা রান্নাৰান্না করেন তাঁরা ন্যাতা শব্দের সঙ্গে উত্তমরূপে পরিচিত৷ মনে রেখো ন্যাতা আর ‘নেতা’ এক শব্দ নয়৷ উচ্চারণ দোষে কোন নেতাকে ভুলেও যেন ন্যাতা করে দিও না৷ যাই হোক, এই ‘ন্যাতা’ শব্দটি পরিচিতিবিহীন দেশজ ৰাংলা নয়, এটি একটি গোত্রপরিচয়যুক্ত তদ্ব শব্দ৷ তাই ‘নজ+ ‘ড’ করে যে ‘ন’ পাচ্ছি তার অর্থ হচ্ছে ‘লজ্জা’, ‘লজ্জা পাওয়া’ ও ‘লজ্জা দেওয়া’৷
(১১-১২) আমরা ‘নক্র’ শব্দটি পাচ্ছি ন+ ক্রম্+ ড করে৷ ‘ক্রম্’ ধাতুর অর্থ হ’ল ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়া৷ ‘ক্রম্’ অচ করে ‘ক্রম’ পাচ্ছি৷ তদুত্তরে শস্ প্রত্যয় করে ক্রমশঃ পাচ্ছি---যার মানে, ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে৷ তাই ‘নক্র’ মানে, যে চলে না, নড়াচড়া করে না৷ ক্কচিৎ কখনও কয়েক লাখ মানুষের মধ্যে হয়তো কোন একজন মানুষের কাণ নড়াচড়া করে, কিন্তু নাক কখনও নড়াচড়া করে না৷ তাই ‘নক্র’ শব্দের একটি অর্থ হচ্ছে নাক (নক্রু> নক্ক> নাক)৷ মনে রাখা দরকার ‘নাসা’ বা ‘নাসিকা’ শব্দটি এসেছে ‘নস্’ ধাতু থেকে৷ কিন্তু নাক শব্দটি ‘নস্’ ধাতু থেকে আসেনি---এসেছে ‘নক্ত’ শব্দটি থেকে৷ ‘নক্ত’ নিজে এককভাবে ধাতু নয়, তার উত্তরে ‘ড’ করে ‘ন’ আসৰে না৷ এক্ষেত্রে নিপাতনে ‘ন’ শব্দ আসছে৷ এক্ষেত্রে ‘ন’ মানেও ‘নাক’৷ আর এই অর্থে যে জীবের নাকের খুবই প্রাধান্য রয়েছে সেই জীবকেও অর্থাৎ হাতীকেও ‘নত্রু’ ৰলা হয়৷ আর এই অর্থে নিপাতনে সিদ্ধ ‘ন’ শব্দেরও মানে হচ্ছে ‘হাতী’৷ ঠিক উপরিলিখিত কারণেই নিপাতনে সিদ্ধ ‘ন’ শব্দের আরও একটি মানে হচ্ছে ‘গণেশ ঠাকুর’৷ (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)