প্রাক্–মহাভারতীয় যুগে মেয়ের বিয়ে দেওয়া তেমন কোন বোঝা ছিল না৷ তাই মেয়ের জন্যে আদর একটুও টোল খেত না৷ সেকালে গোরুর দুধ দোয়া মেয়েদের কাজ ছিল৷ ওই কাজকে পবিত্র কাজ বলে মনে করা হ’ত৷ তাই দুহ্+ তৃচ্+ টা করে ‘দুহিতা’ শব্দটি মেয়েদের জন্যে ব্যবহার করা হ’ত৷ দুহিতা> জুহিআ> ঝি> ঝি – ভাশুরঝি, বোনঝি, দেওরঝি, ভাইঝি ইত্যাদি৷ ওড়িয়ায় ‘ঝি’ শব্দ এখনও চলছে৷ ‘দুহিতারুকী’ শব্দসঞ্জাত ‘ঝিউড়ী’ শব্দটিও প্রাচীন বাংলায় ভালভাবে চলত৷ গ্রাম–বাঙলার বর্ণনার দিতে গিয়ে মধ্য বাঙলার বর্ণনায় বলা হয়েছে – ‘‘কত বহু ঝিউড়ী সারি সারি জলে ভেসে যায়’’৷ মহাভারতীয় যুগে মেয়ের কদর কমে এল বিয়েতেও খরচ হতে শুরু হ’ল৷ তবে লোকে ‘দুহিতা’ শব্দটি রেখেই দিল৷ শব্দটির মানে করতে লাগল যে নারী শ্বশুর–বাড়ীতে যাবার সময় বাপের বাড়ীকে একেবারে দুয়ে নিয়ে যায়৷ রবীন্দ্রনাথ তাঁর এক কন্যার বিবাহের সময় অতিরিক্ত পণ পীড়নে জেরবার হয়ে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘‘ওরা আমাদের একেবারে দুয়ে নিয়ে গেছে৷’’
(‘‘গৃহকন্যা’’, ‘শব্দ চয়ণিকা’, ২৬শ পর্ব)