পয়লা জানুয়ারী আন্তর্জাতিক নববর্ষ৷ ইয়ূরোপে আজ নববর্ষ পালিত হয় পয়লা জানুয়ারী৷ কিন্তু এক সময় মার্চ মাসে নববর্ষ হতো৷
বাংলাতেও এখন যেমন বৈশাখ নববর্ষ অনুষ্ঠিত হয় প্রাচীনকালে হতো অগ্রহায়ণে৷
চীনা ও ইহুদীরা কোন নির্দিষ্ট দিনে নববর্ষ পালন করতো না৷ প্রাচীনকালে চান্দ্রবৎসর গণনার রীতি ছিল৷ সভ্যতার উন্মেষের সাথে সাথে সৌর আবর্ত্তনকে কেন্দ্র করে বছরের হিসেব শুরু হয়৷ সূর্যের হ্রাস বৃদ্ধি নেই৷ চন্দ্রকলার কিন্তু হ্রাসবৃদ্ধি আছে৷ আর এই সূর্য ও চন্দ্রের গতির তারতম্য হেতু কোন বছরে বারো, কোন বছরে তের মাস গোণা হয়৷ ফলে প্রাচীনকালে বিশেষতঃ চীনা ও ইহুদীরা নববর্ষ কোন নির্দিষ্ট দিনে পালন করতো না৷
আর্যরা উত্তরায়ন আরম্ভের দিনটিকে নববর্ষ মনে করতেন৷ উত্তরায়ন আরম্ভ হয় ২২শে ডিসেম্বর বা ৭ই পৌষ৷ তাই আর্যগণ ৭ই পৌষ নববর্ষ পালন করতেন৷ সেদিন তাঁরা সূর্যের পূজা ও যজ্ঞ করতেন৷
আজ থেকে ১৬০০ বছর আগে পৌষমাসের শেষ দিনে উত্তরায়ণ আরম্ভ হতো৷ অতএব ১লা মাঘ ছিল নববর্ষের দিন৷ সেদিনের পুণ্যতিথিটি সাগর সঙ্গমে স্নান অর্থাৎ মকর স্নানের মধ্য দিয়ে আজো পালিত হয়৷
‘হায়ণের অর্থ বৎসর’৷ অগ্র হচ্ছে প্রথম৷ অর্থাৎ বৎসরের প্রথম মাস৷ গীতায় অগ্রহায়ণকে বলা হয়েছে মার্গশীর্ষ৷ এককালে এই মার্গশীর্ষ বা অগ্রহায়ণ ছিল বছরের প্রথম মাস৷ মার্গ শীর্ষ নক্ষত্রে পূর্ণচন্দ্রের উদয় হলে সেই পূর্ণিমাকে বলে মার্গশীর্ষী পূর্ণিমা৷ এই মার্গশীর্ষী পূর্ণিমার জন্যেই মাসটির নাম মার্গশীর্ষ৷ অগ্রহায়ন মাসে সূর্যাস্তের পর এই নক্ষত্রে পূর্ণচন্দ্রের উদয় হয়৷ তাই এককালে অগ্রহায়ণই ছিল বছরের প্রথম মাস৷ ১লা অগ্রহায়ণ ছিল বছরের প্রথম দিন৷
১লা বৈশাখে ব্যবসায়ীদের হালখাতার উৎস খুঁজতে হলে যেতে হবে সেই মোগল আমলে৷ আকবরের আমল থেকে হিজরীসন অনুযায়ী বছরের প্রথম দিন রাজস্ব আদায় করা হতো৷ প্রজারা তখন রাজস্ব স্বরূপ ফসল দিত৷ তাই আজকের হালখাতার তখন নাম ছিল ‘ফসলী’৷ সংস্কৃত ভাষায় এর নাম ছিল ‘পুণ্যাহ’৷ অর্থাৎ পুণ্যের দিন৷ পুণ্যের লোভে যাতে প্রজারা রাজস্ব দিতে আগ্রহী হয় তাই কি এই নামকরণ? তামিলরা তাদের নববর্ষ (পোঙ্গল) পালন করে মাঘের শুরুতে৷
নেপালে নববর্ষ হয় কার্ত্তিক পূর্ণিমার পরের দিন৷ প্রাচীন কালে চীনে পুরনো বছরের প্রতীক হিসাবে একটি কাগজের ড্রাগন তৈরী করে তাকে পোড়ানো হতো৷ অর্থাৎ আবাহন হতো এইভাবে৷
পশ্চিম আফ্রিকায় কিছু কিছু উপজাতির মধ্যে নতুন বছরের মঙ্গল কামনায় শস্য ক্ষেত্রে অবাধ মেলামেশা হয়৷
জাপানে নববর্ষের দিন দুটো পিঠে তৈরী হয়৷ একটি পিঠেপুরুষ অপরটি নারীরূপে কল্পিত হয়৷ আর এদের উভয়ের মধ্যে মিল ঘটানো হয়৷
খ্রীষ্টপূর্ব ৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার ১লা জানুয়ারী নববর্ষ প্রচলন করেন৷ সীজার ছিলেন সুপ্রসিদ্ধ রোমীয় মহাবীর৷
যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধির মতে ইয়ূরোপে যে ১লা জানুয়ারী নববর্ষ দিবস পালিত হয় তা ভুল, হওয়া উচিৎ ২৩শে ডিসেম্বর৷ কারণ ঐদিন থেকে উত্তরায়ন শুরু৷ উত্তরায়ণের আরম্ভকাল থেকেই নববর্ষের শুরু৷
উত্তর ভারতে বর্ষ আরম্ভ (বিক্রম সংবত) হয় চৈত্র মাসের শুক্লা প্রতিপদে৷ ওই দিন সেখানে ধবজা রোপণের প্রথা আছে৷ উড়িষ্যায় চালু ছিল আমলী ও বিলায়তী অব্দ৷ আমলী অব্দ শুরু হত ভাদ্রমাসের শুক্লা দ্বাদশী থেকে আর বিলায়তী আশ্বিন থেকে৷ দক্ষিণ ভারতে বার্হস্পত্য বর্ষশুরু হয় বৈশাখ মাসের কৃষ্ণা প্রতিপদ থেকে৷ কেরলে কোল্লামবর্ষ আরম্ভ হয় ভাদ্রমাসের কৃষ্ণা নবমী থেকে৷ গুজরাতিরা দেওয়ালীর দিন নববর্ষ পালন করে৷ সেদিন তারা জুয়া খেলে নতুন বছরের ভাগ্য পরীক্ষা করে নেয়৷
- Log in to post comments