পরিচয় ও প্রজাতি ঃ বিশ্বে নিমের অনেক প্রজাতি আছে – কেউ খুব তেঁতো, কেউ কম তেঁতো, বা কেউ একেবারেই তেতো নয়–যেমন মিঠা নিম বা কারি লিফ্৷ ভারতের যে সকল স্থানে তেজপাতা জন্মায় না সেখানকার মানুষ তেজপাতার বদলে এই মিঠা নিম বা কারি লিফ্ ব্যবহার করে থাকেন৷
সাধারণ নিম যা আমরা দেখে থাকি তা মূলতঃ ভারতীয় উৎসের৷ একে দেশী নিম বলা হয়৷ ‘নিম’ শব্দটি সুপ্রাচীন সংস্কৃত ‘নিম্ব’ শব্দ থেকে এসেছে (নিম্ব > নিম্ব্ > নিম হিন্দীতে ঈ–কার দিয়ে লেখা হয় নীম)৷ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রাচীন সাহিত্যে নিমের কথা রয়েছে৷ অতি শীতের দেশ ব্যতীত নিম সর্বত্রই জন্মায়৷ এমনকি অল্প স্বল্প মরুভূমির আবহাওয়াও নিম সহ্য করতে পারে৷ ভারতে ও এশিয়ায় এই সাধারণ নিম গাছের সংখ্যাই বেশী৷
ভারতে অধিক তিক্ত যে নিমটি পাওয়া যায় বাংলায় তাকে বলি ঘোড়া নিম – উর্দূতে ‘বকায়ন’, সংস্কৃতে ‘মহানিম্ব’ বা ‘কেশমুষ্টি’৷ এর গাছ আকারে একটু বড়, পাতা তীক্ষ্ণাগ্র৷ ফল কিছুটা গোলাকার৷ ঘোড়া–নিম গাছের দৈর্ঘ্য সাধারণ নিমের চেয়ে বেশী৷ ঘোড়া নিমের পাতা সাধারণ নিমের পাতা থেকে ভিন্ন৷ ভারতের সর্বত্রই এই ঘোড়ানিমের গাছ দেখা যায়৷ গাছের সংখ্যা সাধারণ নিমের চেয়ে কম৷ কারণ লোকে খাদ্য হিসেবে এর পাতা খায় না বলে এর গাছ লাগায় কম৷
রক্তদুষ্টি ও চর্মরোগে নিম ঃ ঔষধ হিসেবে সাধারণ নিমের অভ্যন্তরীণ ও বহিরঙ্গিক দুই–ই ব্যবহার আছে৷ এর পাতা, ডগা, ছাল, বীজ ইত্যাদি থেকে ঔষধ তৈরী হয়৷ নিমের পাতার রস অল্প পরিমাণে খেলে রুচিবর্দ্ধক ও রক্তশোধক৷ নিমপাতার রস বাইরের বতস্থানে প্রলেপ হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে নিম পাতা জলে সেদ্ধ করে সেই জল antiseptic বা বীজাণু–নিবারক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে ৷ নিম পাতার রস সহযোগে তৈরী নিম–তৈল বা নিম–ঘি চর্মরোগের ঔষধ তো বটেই, নিম বীজের তৈলও চর্মরোগের মহৌষধ কুষ্ঠরোগে নিম ছালের ক্কাথ একটি ঔষধ নিম গাছের ছায়া শরীরের পক্ষে খুবই ভাল৷ নিমের ছাল লঘু–চর্মরোগের ঔষধ৷ ঘোড়া নিমেরও ঔষধীয় গুণ অপরিসীম৷ চর্মরোগে বাহ্যিক প্রয়োগে এই নিমই সবচেয়ে সুন্দর ফল দেয়৷ এই গাছের হাওয়া যে কোন চর্মরোগের পক্ষে তো ভালই, ম্যালেরিয়া ও অনেক প্রকারের জ্বর রোগেরও ঔষধ৷ ছোট গ্রামে অন্ততঃ একটি ও বড় গ্রামে একাধিক কেশমুষ্টি বা ঘোড়া নিমের গাছ থাকা ভাল৷ নিমগাছের রস ট্টশুব্ভ্ত্র ত্ত্ত্রব্জন্ধপ্সব্দ্ত্রগ্ খেতে গেলে যাঁদের আমাশয় বা অর্শ রোগ রয়েছে তাঁরা যেন সাধারণ নিমের রসই খান৷ তবে যাঁদের অর্শ বা আমাশয় নেই, তাঁরা ঘোড়া নিম গাছের রসও খেতে পারেন৷
তিক্ত ভোজ্য হিসেবে নিমের ব্যবহার–বসন্ত ঋতুতে নিম ভক্ষণ ঃ নিমপাতা ভাজা প্রথম পাতে খেলে পেট ভাল খাকে ও কৃমি রোগের হাত থেকে রক্ষা করে৷ তবে ঘোড়া নিমকে ভোজ্য হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়৷ অতিরিক্ত তিক্ততা–নিবন্ধন একদিনে বেশী খেলে অথবা একটানা পর পর কয়েক দিন খেলে রক্ত–আমাশয় দেখা দেবার সম্ভাবনা৷
বসন্ত ঋতুতে নিমের পাতা মহোপকারী ঔষধ৷ এর প্রভাবে চর্মরোগ বিনষ্ট হয়, রক্ত পরিষ্কার হয়, রক্তদুষ্টি বিদূরিত হয়৷
(শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের ‘দ্রব্যগুণে রোগারোগ্য’ থেকে)