নীরোগ দেহ সবল মন লাভের একটি উপায়

লেখক
 শ্রীসুভাষ প্রকাশ পাল

হিন্দুশাস্ত্রে একাদশীর ব্রত পালনের উপর জোর দেওয়া হয়৷ মুসলীম, খ্রীষ্টান, জৈন ইত্যাদি ধর্মগ্রন্থের মধ্যেও বিভিন্ন ব্রত পালনের মাহাত্ম্য প্রচার করা হয়েছে, একাদশীর ব্রত বলতে একাদশী তিথিতে উপবাস করার কথাই বলা হয়৷ অনেক সম্পন্ন গৃহস্থ ঘর দেখা যায়, যেখানে এই তিথিতে ভাত খাওয়ার পরিবর্তে লুচি, মিষ্টি ইত্যাদি ভুরিভোজের ব্যবস্থা থাকে৷ যদি প্রশ্ণ করা হয়--- কেন এই শুকনো খাওয়ার ব্যবস্থা সঙ্গে সঙ্গে উত্তর আসে---আজ তো একাদশী, তাই ভাতের পরিবর্তে হাল্কা খাবার খাচ্ছি, আমরা যদি একটু বিচার করে দেখি, তবে দেখতে পাব এভাবে ভুরিভোজ্য করে পেটভরে খেয়ে ঠিকভাবে উপবাস ব্রত পালন করা হয় না বা এই ব্রতপালনের সুফলও লাভ করা যায় না৷  আসলে একাদশীতে কেন উপবাস করতে হয় বা উপবাসের প্রয়োজনীয়তা কী --- এ সম্পর্কেও সকলের ধারণা স্পষ্ট নয়৷

উপ---বস্‌ ধাতু থেকে উপবাস শব্দটি নিষ্পন্ন হয়েছে৷ এর অর্থ হল উপ---নিকটে বাস করা৷ অর্থাৎ ঈশ্বরের নিকটে থাকার জন্য যে ব্রত তাই উপবাস ব্রত, এই ব্রত পালনের সময় মনকে সর্বদা ঈশ্বরাভিমুখী রাখতে হয়, তাঁর স্মরণ, মনন ও চিন্তন যদি ঠিক ঠিকভাবে করা হয়, তবেই এই ব্রত পালন সার্থক হয়৷

মনে প্রশ্ণ জাগতে পারে ঈশ্বরের আরাধনাই ব্রত পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য হয়, তবে একদশী তিথিতেই বা কেন এই ব্রত পালন করতে হয়, উত্তরে বলা যায়--- সূর্য-চন্দ্রের আকর্ষন জোয়ার ভাটা হয় আমরা জানি, একাদশী তিথিতে চন্দ্রের আকর্ষন পৃথিবীর উপর সবচেয়ে বেশী৷ আমাদের শরীরের উপরও এর প্রভাব পড়ে৷ একাদশী থেকে অমাবস্যা বা পূর্ণিমা পর্যন্ত ঐ সময়ে শরীরের জলীয় পদার্থগুলি শরীর উর্র্দ্ধংশে আসবার চেষ্টা করে ও হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কতে চাপ সৃষ্টি করে অসুস্থতা ঘটায়৷ জড়তা, আলস্য এই সময় শরীরকে পেয়ে  বসে৷ উপবাস করলে অর্থাৎ কিছু না খেলে  শরীরে মাত্রাতিরিক্ত রসের সঞ্চার ঘটাবার সুযোগ থাকে না ফলে শরীর ও মন দুইই সুস্থ থাকে৷

উপবাস শরীর রক্ষারও প্রধান সহায়ক, যন্ত্রের যেমন মাঝে মাঝে বিশ্রাম দরকার, আমাদের পরিপাক যন্ত্রের মাঝে মাঝে বিশ্রাম দরকার, নিদ্রিত হলে শরীরের কর্মেন্দ্রিয়গুলি যেমন বিশ্রাম পায় ও সমস্ত ক্লান্তি দূর হওয়ার ফলে পরের দিন আমরা নূতন উদ্যমে সবকিছু কাজ করতে পারি, ঠিক তেমনি একদিন উপবাসের ফলে আমাদের পরিপাকযন্ত্রও সম্পূর্ণ বিশ্রাম পায়৷ ফলে উক্ত যন্ত্র নূতন উদ্যমে তার কাজ সুসম্পন্ন করতে থাকে, এই জন্য উপবাস বিধি পালন করলে অজীর্ণ, অম্ল ইত্যাদি অসুখ আর থাকে না ও হজম শক্তি বৃদ্ধির ফলে শরীর সবল ও সুস্থ থাকে৷

একদিন পূর্ণ উপবাসের সময় শরীরের অনেক রোগ জীবাণু ধবংস হয়ে যায়, ফলে ভাবী রোগাক্রমণের হাত থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়, যে কোন রোগের সূচনায় উপবাস করলে সেই রোগ আর ভীষনাকার ধারণ করতে পারে না,

উপবাস ইন্দ্রিয় সংযম তথা মনসংযমের পক্ষেও প্রকৃতি পরম সহায়ক, আমাদের শরীরের সারবস্তু শুক্রধাতু মাঝে মাঝে উদ্বৃত্ত হয়৷ উপবাস করলে ঐ উদ্বৃত্ত শুক্র অপচয় না  হয়ে শরীরের মধ্যে  থেকে ওজঃশক্তি বৃদ্ধি করে৷

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি উপবাস শরীর মন, আত্মা--- তিনের উন্নতির সহায়ক, তাই জগদগুরু শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী তার আত্মোন্নতিবাসী ভক্তদের জন্য যে ষোড়শ বিধি রচনা করেছেন, তার মধ্যে উপবাসকে একটি অবশ্য পালনীয় বিধি হিসেবে নির্দিষ্ট করেছেন এবং কিভাবে তা পালন করতে হয় তাও শিখিয়েছেন৷