সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
৫ই মার্চ দিনটিকে প্রতি বছর সারাবিশ্বের আনন্দমার্গীরা ‘দধিচী দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকেন৷ ১৯৬৭ সালের ৫ই মার্চ আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘের বয়স (১৯৫৫সালের ৯ই জানুয়ারি বিহারের মুঙ্গের জেলার জামালপুর রেলওয়ে কোয়ার্টারে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘‘আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘ’’ প্রতিষ্ঠিত হয়) তখন সবেমাত্র বার বছর অতিক্রম করে তের বছরে প্রদার্পণ করেছে৷ ১৯৬২ সালের শেষের দিকে আনন্দমার্গ মিশনে সন্ন্যাসী প্রথার প্রচলন শুরু হয়৷ তখন মিশনের শৈশবাবস্থা অর্থাৎ পাঁচ বছর বয়স অতিক্রম করেনি৷ সংস্থার প্রতিষ্ঠিত জন্মলগ্ণ থেকেই কিছু স্বার্থান্বেষী, বিপথগামী, সুবিধাবাদী ও মানুষের রক্ত শোষকেরা আনন্দমার্গকে ধবংস ও উৎখাত করতে লেগে পড়ে৷ ১৯৬৭ সালের ৫ই মার্চ আনন্দনগরে কমিউনিষ্ট গুণ্ডারা (তখন পশ্চিমবঙ্গে যুক্তফ্রন্টের সরকার চলছিল---জ্যোতি বসু ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) পরিকল্পিতভাবে আনন্দমার্গ মিশনের কর্মীদের আক্রমণ করে ও নির্মমভাবে পাঁচজন সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীকে হত্যা করে৷ দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ায় বিচারক তদানীন্তন স্থানীয় জয়পুর ব্লকের বিডিও অশোক চক্রবর্তী সহ মোট আঠারো জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সহ বিভিন্ন মেয়াদে দোষী সাব্যস্ত করেন ও শাস্তি প্রদান করেন৷
আনন্দনগরের প্রতিষ্ঠাকল্পে সেই সময় গুণ্ডাদের আক্রমণে আত্মবলিদান করে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁরা হলেন (ক) আচার্য অভেদানন্দ অবধূত (খ) আচার্য সচ্চিদানন্দ অবধূত (গ) আচার্য অবোধ কুমার ব্রহ্মচারী (ঘ) আচার্য প্রবোধ কুমার ব্রহ্মচারী (ঙ) আচার্য ভরত কুমার ব্রহ্মচারী৷
আনন্দমার্গে সব দধিচীদের স্মরণে প্রতি বছর ৫ই মার্চ ১২ ঘণ্টা(সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত) নির্জলা উপবাস পালন করা হয়ে থাকে৷
আনন্দনগরেও এই দিনকে সব আশ্রমবাসীরা, শিশুসদনের ছেলে-মেয়েরা তথা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রারা নির্জলা উপবাসের মাধ্যমে দধিচী দিবস পালন করে থাকে ও নিম্নোক্ত অনুষ্ঠান সূচীর মাধ্যমে সম্মিলিত দধিচী দিবস পালিত হয়:
১) আনন্দনগর ‘পাওয়ার হাউস সভাঘরে’ বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অখণ্ড ‘বাবা নাম কেবলম’ নাম সংকীর্ত্তন হয়৷ ২) কীর্ত্তন শেষে মিলিত ঈশ্বর প্রণিধান করা হয়৷ ৩) ঈশ্বর প্রণিধানশেষে মিলিত ভাবে নামকীর্ত্তন করে দধিচী পাহাড়ে যাওয়া হয়৷ ৪) দধিচী পাহাড়ে দধিচী বেদীতে পূষ্পার্ঘ্য প্রদান করা হয়৷ ৫) পূষ্পার্ঘ্য পর্বের পর প্রভাতসঙ্গীত, কীর্ত্তন ও মিলিত ঈশ্বর প্রণিধান করা হয়৷ ৬) ৫ই মার্চ দধিচী দিবস উপলক্ষে সেই সময় গুরুদেবের দেওয়া নিম্নোক্ত শপথ বাক্য পাঠ করান বাংলায় আচার্য নারায়ণানন্দ অবধূত হিন্দি ও ইংরেজি আচার্য কিষণসিং সুদ৷ শপথ বাক্যঃ ‘যে পাপশক্তির ফলে এই পাঁচ ভাইয়ের হত্যা হয়েছে যতক্ষণ পর্যন্ত সেই পাপশক্তির বিনাশ না করছি ততক্ষণ আমরা আরাম করবো না, আরাম করবো না, আরাম করবো না৷’ ৭) শপথ গ্রহণের পর স্মৃতি চারণ ও দধিচী দিবসের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করা হয়৷ ৮) তাৎপর্য ব্যাখ্যা শেষে লোয়ার হোষ্টেলে উপবাসকারীদের উপবাস ভঙ্গের জন্যে নেবুসর্বত ও খিচুড়ি বিতরণ করা হয়৷