লক্ষণ ঃ সংস্কৃতে ‘অশ্বরী’ শব্দের অর্থ পাথর, তাই চল্তি ভাষায় এই রোগকে বলা হয় পিত্ত–পাথুরী পিত্তকোষে এই পাথর সৃষ্টি হওয়ার ফলে আহারের সঙ্গে সঙ্গে নাভির দক্ষিণ পার্শ্বে বেদনা, বমনোদ্রেক ও বমনের পরে কিছুটা সুস্থতাবোধ এই রোগের লক্ষণ৷ রোগ কিছুটা পুরাতন হয়ে’ গেলে রোগীর অক্ষুধা ও শারীরিক দুর্বলতাও প্রবলভাবে দেখা দেয়৷
কারণ ঃ যকৃৎ–যন্ত্রটি একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি৷ পিত্তরস নিঃসারণ, রস থেকে রক্ত সৃষ্টি ও রক্ত বিশুদ্ধীকরণ কার্যে এই যন্ত্রটিকে রত থাকতে হয়৷ যকৃৎ–নিঃসৃত পিত্তরস প্রথমে পিত্তস্থলীতে সঞ্চিত হয়, পরে সেখান থেকে পাকস্থলীতে ও ঊধর্ব অন্ত্রে প্রেরিত হয়৷ রস–রক্তের দূষিত বস্তুসমূহকেও যকৃৎ ওই পিত্তের সঙ্গে পাকস্থলীতে প্রেরণ করে ও পরে সেখান থেকে সেগুলি অন্ত্রের সাহায্যে মলনাড়ীতে পৌঁছায় ও দেহ থেকে নিঃসারিত হয়ে যায়, রস রক্তে দূষিত বস্তুর পরিমাণ বেশী থাকলে, বিশেষ করে অম্লবিষ অত্যধিক মাত্রায় থাকলে পিত্তরসের সঙ্গে ওই বস্তু খুব বেশী পরিমাণে পিত্তস্থলীতে প্রেরিত হয়৷ পিত্তস্থলীতে ওই রস থিতিয়ে গিয়ে দূষিত বস্তু সমূহ সাররূপে জমা হতে থাকে ও ক্রমশঃ তারা দানা বাঁধতে থাকে •crystallization—৷ এইভাবে পিত্তস্থলীতে ছোট ক্ষড় নানা আকারের পাথর তৈরী হ’তে থাকে৷ আহারের পর পিত্তস্থলীর ওই পাথরগুলি পিত্তরসের পথ যখনই অক্ষরোধ করতে চায়, তখনই দেহযন্ত্র বিশেষ শক্তি প্রয়োগ করে’ পিত্তস্থলী থেকে ওই পাথরগুলিকে পাকস্থলী বা গ্রহণীনাড়ীতে ঠেলে বের করে দিতে চায়৷ দেহযন্ত্রের এই বিশেষ শক্তি প্রয়োগই যন্ত্রণার সৃষ্টি করে৷ রোগের প্রথম অবস্থায় দেহযন্ত্র পাথরগুলিকে এইভাবে ঠেলে বের করে দিতে পারে, কিন্তু পুরাণো হয়ে গেলে দেহযন্ত্র দুর্ক্ষল হয়ে পড়ায় অথবা পাথরের আকার বেশী ক্ষড় হয়ে পড়ায় তখন আর সেগুলিকে ঠেলে বের করে দেওয়া সম্ভবপর হয় না৷ রোগের এই পুরাতন অবস্থা সত্যই রোগীর পক্ষে প্রাণঘাতক হয়ে দাঁড়ায়৷
চিকিৎসা ঃ প্রত্যুষে ঃ উৎক্ষেপমুদ্রা, যোগমুদ্রা, দীর্ঘপ্রণাম, পদহস্তাসন ও নাসাপান, আগ্ণেয়ীমুদ্রা বা আগ্ণেয়ী প্রাণায়াম৷ সন্ধ্যায় ঃ অগ্ণিসার, কর্মাসন, সর্বাঙ্গসন৷
পথ্য ঃ–মাদকদ্রব্য ও আমিষ খাদ্য, ঘি ও কোষ্ঠবদ্ধতাকারক খাদ্য কঠোরভাবে পরিত্যজ্য৷ রোগীকে প্রচুর পরিমাণে (আন্দাজ ৪৷৫ সের) জল পান করতে হক্ষে ও একাদশী, অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় নেবুর রস সহ স–ম্বু উপবাস করতে হক্ষে৷ রোগ যখনই একটু বেড়ে যাবে তখনই অন্যান্য খাদ্য বন্ধ রেখে কেবল নেবুর জল খেয়েই থাকতে হবে৷ নিরম্বু উপবাস এ ব্যাধিতে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ৷
বিধিনিষেধ ঃ– রোগীর যকৃত যত বেশী বিশ্রাম পায় ততই মঙ্গল৷ তাই ফলের রস ও ক্ষারধর্মী খাদ্যই এই রোগের প্রশস্ত৷ রোগীকে অবশ্যই যথেষ্ট পরিমাণে শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে কারণ এটি ধনীদেরই রোগ৷ বিশেষ করে ধনীগৃহের মহিলাদের মধ্যেই এর প্রাদুর্ভাব বেশী৷ নেবু এই রোগে ঔষধ ও পথ্য দুই–ই৷
কয়েকটি ব্যবস্থা ঃ–
১) গোদুগ্ধে হরীতকীর অস্থি (আঁটি) সিদ্ধ করে’ (অস্থি ফেলে দিয়ে) ওই দুগ্ধ পান করলে অথবা,
২) হরীতকী, মুথা, লোধ ও বটফল সমানভাবে একত্রে দু’তোলা পরিমাণ নিয়ে তার ক্বাথ নিয়মিতভাবে পান করলে এই রোগে উত্তম ফল পাওয়া যায়৷ শেষোক্ত ঔষধটি বহুমূত্র রোগেও সেব্য৷
ঔষধগুলি প্রত্যুষে খালি পেটে সেবনীয়৷
(‘যৌগিক চিকিৎসা ও দ্রব্যগুণ’ থেকে)