একটা মানুষ অন্যের মুখের গ্রাস কেড়ে নেবে, এটা তো উচিত নয়৷ সুতরাং মানুষ যাতে একটা বিধিসম্মতভাবে তার সমস্ত সম্পদ নিজেদের মধ্যে মিলে মিশে ভাগ করে কাজে লাগাতে পারে তার একটা ব্যবস্থা দরকার ছিল যা এর আগে কোন মহান পুরুষ করে নি৷... এই না করার জন্যে সমাজ জীবনে যে অনুপপত্তি থেকে গিয়েছিল, সেই অনুপপত্তির জন্যেই মানুষের যত দুঃখ কষ্ট ভোগ চলছিল৷... যাতে এটা না হয়--- যাতে মানুষ তার মহত্তর লক্ষ্যকে চোখের সামনে রেখে জাগতিক দুঃখ-ক্লেশগুলোকেও দূর করবার চেষ্টা করে সেই জন্যেই প্রাউট দর্শনের সৃষ্টি হয়েছে প্রাউড দর্শনকে সৃষ্টি করা ছাড়া অন্য কোন পথ ছিল না৷ তা যদি না করা হতো আরো হয়তো শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষের দুঃখ-কষ্ট- ক্লেশ চলতেই থাকতো ও সুবিধাবাদী নিচাশয় ব্যষ্টিরা সহজ সরল মানুষের বৌদ্ধিক সরলতার সুযোগ নিয়ে অথবা বৌদ্ধিক অভাবের সুযোগ নিয়ে তাদের শোষণ করত৷,... এখন পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে এই নিপীড়ন, এই দমন ও শোষণ থেকে বাঁচাতেই হবে---যেন তেন প্রকারেণ৷
প্রাউট দর্শনের প্রবক্তা পরম শ্রদ্ধেয় শ্রী প্রভাত রঞ্জন সরকার শুধু ওপরের কথাগুলোই বলেননি, বিশ্বের নিপীড়িত শোষিত মানবতার আর্থিক মুক্তির জন্য বাস্তবমুখী ও বিজ্ঞানসম্মত সুনির্দিষ্ট পথনির্দেশনা দিয়ে গেছেন৷ তিনি শুধু মানুষের কথাই চিন্তা করেন নি, সর্বজীবের তথা সর্ব অস্তিত্বের সার্বিক কল্যাণের চিন্তা করেই পরিকল্পনা তৈরি করে দিয়ে গেছেন যা সম্পূর্ণ নতুন ও মৌলিক৷
তিনি পষ্টই বলেছেন--- আজ অর্থনীতি বস্তা পচা তত্ত্বকথার কচ কচানি ছাড়া আর কিছুই নয়৷ প্রাউটের অর্থনীতি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও প্রয়োগভৌমিক বিজ্ঞান৷ তিনি কেন্দ্রিত অর্থনীতির কঠোর বিরোধী ছিলেন৷ তাই ভৌগোলিক অবস্থান, জল হাওয়া, ভূ-প্রকৃতি অর্থনৈতিক সমস্যা সম্ভাবনা প্রভৃতি দেখে ও মানুষের ভাষা কৃষ্টি সাহিত্য সংস্কৃতি নৃতাত্ত্বিক পরিচয় অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে ২৫০ এরও অধিক অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভাগ করেছে৷ অর্থনৈতিক পরিকল্পনার রূপায়ণের সর্বনিম্ন স্তর ব্লক থেকে শুরু হবে৷ পরিকল্পনা স্থানীয় কাঁচামালের উপর নির্ভর করে তৈরি করতে হবে ও স্থানীয় মানুষের শ্রমদানে পরিকল্পনার উপায় তো হবে৷ লক্ষ্য থাকবে প্রতিটি অর্থনৈতিক অঞ্চলকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তোলা ও ধীরে ধীরে সারা পৃথিবীকে একটা অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা৷ উদাহরণস্বরূপ বাঙালীস্তনের কথা বলা যেতে পারে৷
প্রাউট প্রবক্তা সারা পৃথিবীতে ২৫০ টার বেশি স্বয়ংসম্পূর্ণ সামাজিক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলেছেন৷ ভারতবর্ষে এইরকম ৪৪টি অঞ্চল আছে৷ তার অন্যতম ও বৃহত্তম অঞ্চল হল বাঙালীস্তান৷
সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ, সমগ্র ত্রিপুরা, ঝাড়খন্ড, বিহার, উড়িষ্যা, অসম ও মনিপুরের সঙ্গে যুক্ত বাঙলার অঞ্চল গুলো নিয়ে তৈরি হয়েছে স্বয়ংসম্পূর্ণ সামাজিক অর্থনৈতিক অঞ্চল বাঙালীস্তান৷ এই অঞ্চলগুলো তৈরি করতে গিয়ে যে যে বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা হল --- সম অর্থনৈতিক সমস্যা, সম অর্থনৈতিক সম্ভাবনা, নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, সামাজিক সাংস্কৃতিক ভাভপ্রবণতা ( ভাষা শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতিগত পরিচয়), ভৌগোলিক অবস্থান, যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রভৃতি৷ ভারতবর্ষের ৪৪ টি জনগোষ্ঠীর প্রত্যেকের নিজস্ব ভাষা, কৃষ্টি সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তির সম মর্যাদা দিয়ে, প্রতিটি অঞ্চলকে আর্থিক দিক দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তুলতে হবে৷ তবেই পুঁজিবাদের দানবীয় শোষণের হাত থেকে শোষিত নিপীড়িত জনগণ মুক্তি পাবে৷
- Log in to post comments