প্রবাদের গৌরী সেন

লেখক
প্রণবকান্তি  দাশগুপ্ত

বাংলায় একটা প্রবাদ বাক্য আছে---‘লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন’৷ কে  এই গৌরী সেন?

 গৌরী সেন ছিলেন নিতান্তই সাধারণ ঘরের ছেলে৷ জাতিতে সুবর্ণবণিক৷ নিবাস ছিল হুগলী জেলার বালীতে৷

পলাশীর যুদ্ধের সময় ইংরেজ কোম্পানী গোবিন্দপুর থেকে সবাইকে বসবাস তুলে নিয়ে যেতে বলেন৷ বৈষ্ণবচরণ শেঠ তখন উঠে আসেন বড় বাজারে৷ বৈষ্ণবচরণ শেঠ ছিলেন পরম বৈষ্ণব৷ তখনকার নাম করা ধনী ব্যবসায়ীও বটে৷

সামান্য পুঁজি নিয়ে এই বৈষ্ণবচরণের সঙ্গে ব্যবসায়ে যোগ দেন গৌরী সেন৷ বৈষ্ণবচরণ একবার দস্তা ক্রয় করেন৷ কিন্তু পরীক্ষায় দেখা গেল, দস্তার সাথে বেশ কিছু  পরিমাণ রূপা মেশানো আছে৷ বৈষ্ণবচরণ অত্যন্ত সৎ ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি ভাবলেন, গৌরী সেনের সৌভাগ্যের জন্যেই তার নামে কে না  দস্তার রূপা পাওয়া গেছে৷ অতএব বিক্রয়লদ্ধ সমস্ত টাকা বৈষ্ণবচরণ গৌরীসেনকে  প্রদান করলেন৷ ফলে সামান্য ব্যবসাদার গৌরী সেন আঙুল ফুলে কলাগাছ হলেন৷ তিনি রাতারাতি মহাধনী হয়ে গেলেন৷ অগাধ সম্পত্তির  অধীশ্বর হয়ে তিনি কারবারে উত্তরোত্তর উন্নতি করতে লাগলেন৷

কিন্তু গৌরী সেন অর্জিত সমস্ত টাকা সৎকাজে ব্যয় করতেন৷ বিলাসিতা বা ভোগ বাসনায় নিজেকে ভাসিয়ে দেননি৷ কন্যা দায়, মাতৃদায়,পিতৃদায়, দেনার দায়ে আদালতে  অভিযুক্ত আসামীদের জরিমানা প্রদানে, আর যারা ন্যায়পথে থেকে সৎকাজের জন্য ফৌজদারিতে জড়িয়ে  জরিমানার আসামী হতো গৌরী সেন তাদের জন্য অকাতরে অর্থব্যয় করতেন৷ এরফলে সেই সময়ে অনেকে সাতপাঁচ না ভেবে এমন অনেক কাজ করে বসতো যার পরিণতিতে হয়ে দাঁড়াতো অর্থদণ্ড৷ আর সেই সময় শরণাপন্ন হতো গৌরী সেনের৷ ভাবতো, লাগে  টাকা , দেবে গৌরী সেন৷ কার্যতঃ ঘটতো ও তাই৷ সেই থেকে  গৌরী সেন বাঙালীর কাছে এক প্রবাদ-পুরুষে পরিণত হয়ে গেলেন৷ লাগে  টাকা, দেবে গৌরী সেন৷