প্রগতিশীল উপযোগতত্ত্বের পঞ্চমূল নীতি

লেখক
সত্যসন্ধ দেব

প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব (প্রাউট)–এর মূল পঞ্চনীতির প্রথম নীতি হ’ল ঃ সমাজের তথা সমবায়িক সংস্থার সুস্পষ্ট অনুমোদন ছাড়া কাউকে কোন প্রকার জাগতিক সম্পদ সঞ্চয় করতে দেওয়া হবে না৷ স্পষ্টতঃই এই নীতি আজকের পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অভিশাপ থেকে সমাজকে বাঁচাতে চায়৷ জগতের স্থূল সম্পদ (এক্ষেত্রে মানসিক ও আধ্যাত্মিক সম্পদের কথা বলা হচ্ছে না) সীমিত বলেই, কেউ যদি অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করে রাখে, তাহলে অন্যত্র অভাব দেখা দেবেই৷ তাই অবাধ সঞ্চয় নীতিতে প্রাউট বিশ্বাসী নয়৷ মানুষ সঞ্চয় করে চারটি কারণে (১) দৈনন্দিন ব্যষ্টিগত ও পারিবারিক প্রয়োজনে৷ (২) বিশেষ বিশেষ পারিবারিক তথা সামাজিক দায়–দায়িত্বের জন্যে৷ ৩) অনন্ত সুখের এষণা, (৪) মানসিক ব্যাধি৷ প্রথম কারণের জন্যে যতটুকু সম্পদের প্রয়োজন সেটুকু সঞ্চয় করার অধিকার মানুষের থাকবে৷ এইদিকে দৃষ্টি রেখে সমূহ

জাগতিক সম্পদ সঞ্চয়ের একটা সিলিং বাঁধা থাকবে৷

(বর্ত্তমানে যে কেবল জমির সিলিং বা শহরের বাড়ীর সিলিং এর কথা বলা হচ্ছে, এটা বিভ্রান্তিমূলক৷ এতে  টাটা বিড়লার সম্পদ সিলিং হচ্ছে না৷ তাই আমরা চাই সমূহ সম্পদের সিলিং৷ সঞ্চয়ের ২য় কারণের জন্যে–অর্থাৎ বিশেষ বিশেষ পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্বের দায় থাকবে সমাজের ওপর৷ যেমন শিক্ষা, চিকিৎসাদি সর্বস্তরে অবৈতনিক থাকবে৷ আমাদের সমাজে পণপ্রথা যেমন একটা বিষম দায়, প্রাউটের সমাজ ব্যবস্থায় ওই পণপ্রথাই থাকবে না, কেননা, পণপ্রথা অমানবিক, অসামাজিক বিধান বলে প্রাউট তা মানে না৷ দুর্দিনের সঞ্চয়ের দায়িত্বও সমষ্টিগত দায়িত্ব৷ সঞ্চয়ের ৩য় কারণ, মানুষ সঞ্চয় করে অনন্ত সুখের এষণায়, অনন্ত ক্ষুধার তাগিদে৷ এ ব্যাপারে মানুষের অনন্ত সুখের এষণা পরিতৃপ্ত করার জন্যে যাতে করে সে অনন্ত মানসিক ও আধ্যাত্মিক সম্পদের পূর্ণ উপযোগ নিতে পারে তার ব্যবস্থা সমাজ তথা রাষ্ট্র করবে৷ সঞ্চয়ের ৪থ কারণঃ, সঞ্চয় একটা ব্যাধি, তার জন্যে ব্যাধির নিরাময়ের সংশোধনাত্মক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থাও হয়তো নেওয়ারও প্রয়োজন হতে পারে৷

প্রাউটের মূলনীতির ২য় নীতি হ’ল, সমস্ত প্রকার সম্পদের সর্বাধিক উপযোগ ও যুক্তিসঙ্গত বণ্ঢন করতে হবে৷ সর্বাধিক উপযোগের জন্যে বিজ্ঞানকে প্রভূতভাবে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত করতে হবে ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার চর্চাকে যতদূর সম্ভব দ্রূত গতিতে বাড়াতে হবে৷ আজকের রকেটের যুগে, ভারতও যেখানে মহাকাশে উপগ্রহ প্রেরণ করছে, সেখানে ভারতের ১১৩ কোটি মানুষের সর্বপ্রথম চাহিদা যে খাদ্য, সেই খাদ্য–শস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে মান্ধাতার আমলের পদ্ধতি চলবে, এর চেয়ে লজ্জাকর ব্যবস্থা ও সরকারী অকর্মন্যতার নজির আর কিছু হতে পারে বলে আমাদের জানা নেই৷ হ্যাঁ, এ পথে হয়তো কিছু বাধা আছে, অজ্ঞ মানুষের সামাজিক সংস্কারও বাধা হতে পারে, কিন্তু এটা কি কোন উপযুক্ত অজুহাত হ’ল? তাহলে রাষ্ট্রশক্তি ধারণ করার সার্থকতা কোথায়? কেন সমস্ত প্রকারের বাধা হটিয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে, উন্নত বীজ ও সারের সাহায্যে কৃষিকার্য্য হচ্ছে না? এ না হওয়ার পেছনে কোন অজুহাত হতেই পারে না৷ আসলে নেতৃবৃন্দের দেশগঠনের পর্যাপ্ত যোগ্যতা, পৌরুষ ও নিষ্ঠার একান্ত অভাবই এর একমাত্র কারণ৷       (ক্রমশঃ)