পরিবেশ বিজ্ঞান (Ecology) ঃ
পরিবেশ বিজ্ঞানকে Ecology মানুষ স্বার্থের প্রেষণায় প্রতি পদে উপেক্ষা করে চলেছে৷ আমাদের মনে রাখা দরকার যে আকাশ–বাতাস–পাখী–পা জীব–জলজউদ্ভিদ–স সবাইকার সঙ্গে সবাইকার অচ্ছেদ্য সম্পর্ক৷ মানুষ সেই অভিন্ন মহাসমাজের একটি অংশ মাত্র৷ কাউকে বাদ দিয়ে কেউ টিকতে পারবে না৷ মানুষও পারবে না৷ নিবোধের মত অরণ্য ধ্বংস করে, বন্য পশুকে হত্যা করে, মৎস্যকুল ও পক্ষীকুলকে নির্মূল করে মানুষের কোন স্বার্থই সাধিত হবে না৷ এ পৃথিবীতে যে আসে সে যায়–কেবল প্রকৃতি নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত পৃথিবীতে বেঁচে থাকে৷ মানুষের এই নির্বুদ্ধিতার জন্যে অনেক কিছুই প্রকৃতি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বাঁচবে না৷ তার আগেই কালের অন্ধকারে হারিয়ে যাবে৷ মানুষ তার নির্বুদ্ধিতায় অনেক কিছুকে ধ্বংস করেছে ও তা করে সে নিজের চিতাই সাজিয়ে চলেছে৷ এই নির্বুদ্ধিতা অসহনীয়৷ এখনই মানুষকে সতর্ক হতে হবে ও পরিবেশ বিজ্ঞানসম্মতভাবে তার সমস্ত চিন্তা, কর্ম ও পরিকল্পনাকে ঢেলে সাজাতে হবে৷ অন্য কোন পথ নেই৷
জলবায়ুর বিশুদ্ধতা ঃ
মানুষের উচিত জলের ও হাওয়ার বিশুদ্ধির দিকে বিশেষ নজর রাখা৷ মৃত্তিকার বিশুদ্ধির কথাও যেন ভুলে থাকা না হয়৷ জল ও বায়ুর বিদূষণের ফলে আজকাল রোগবীজাণু প্রজাতির সংখ্যা বেড়ে চলেছে৷ এই সংখ্যাক্ষৃদ্ধি মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে বসেছে৷ ক্রমি–নিষেধক বা ক্রমিঘ্ণের ব্যবহার ঙ্(ওষুধপত্রের ব্যবহার) যতই বাড়ুক না কেন, গোড়ায় গলদ থাকলে অর্থাৎ মৃত্তিকায়–জলে–বায়ুত্ বিদূষণ–ক্রিয়া যে মাত্রায় বেড়ে চলেছে সেই মাত্রায় চলতে থাকলে, একদিন এই বিদূষিত মৃত্তিকা, জল ও বায়ুই মানুষের সামূহিক মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে৷
* * *
শীতের দিনে যেখানে কলকারখানা বেশী, চিমনি দিয়ে ধোঁয়া উদ্গীর্ণ হচ্ছে, সেরকম জায়গায় ধোঁয়া বেশী ওপরে উঠতে পারে না, নীচেই থেকে যায়৷ শীতের ভোরে কুয়াশার সঙ্গে ওই ধোঁয়া মিশে আরো কষ্টকর ও স্বাস্থ্যহানিকর হয়ে দাঁড়ায়, নিশ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়৷ হাওয়ায় ওজনের (ozone) লেশমাত্র থাকে না৷ এই ধোঁয়া–মেশা কুয়াশা (smog) বর্ত্তমান সভ্যতার একটি অভিশাপ৷ এই ধোঁয়াশার আবর্ত্তে যে জনপদ পড়ে, সেখানে মাইক্রোবাইটাম (negative microvitum—virus) সংক্রান্ত ব্যাধি উল্কাবেগে ছড়িয়ে পড়ে৷ বর্ত্তমান বিশ্বে ফ্লু–বর্গীয় ইনফ্লুয়েঞ্জা ও কঞ্জাংক্টিভাইটিস বর্গীয় চক্ষু ব্যাধি যখন আসে, তখনই হু হু করে সে রোগ বেড়ে যায়–তা মুখ্যতঃ এই ধোঁয়াশার জন্যেই৷ নাগরিক স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে গেলে এই ধোঁয়াশার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতেই হবে৷
(‘দ্রব্যগুণে রোগারোগ্য’ থেকে)