টিভিতে বিভিন্ন সংবাদ চ্যানেল সন্ধ্যার পরেই আলোচনার (ঝগড়ার!) আসর বসায়৷ ‘ঘণ্টা খানেক’ সহ নানান শিরোনামে৷ প্রথম প্রথম এগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল ,অনেকেই ভাবতেন আলোচনার মাধ্যমে ভালো কিছু বেরিয়ে আসবে যা হয়তো সমাজের উপকারে লাগবে৷ কিন্তু না, সাধারণ মানুষের ভুল ভাঙতে বেশী সময় লাগে নি৷ চ্যানেল মালিকদের পক্ষপাতিত্ব ও সঞ্চালকদের কলতলার ঝগড়ার পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো কাজে এই আলোচনাগুলো আসছে বলে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা মনে করছেন না৷ সঞ্চালকদের চিৎকার ও লাফালাফি, টেবিল চাপড়ে বা ধমক দিয়ে কথা বলার কায়দা দেখলে মনে হবে - এদের চেয়ে সমাজ হিতৈষী বোধহয় আর কেউ নেই! এঁরা এসব করে থাকেন তাদের চ্যানেলের টি আর পি বাড়ানোর জন্য৷ জ্বলন্ত কোনো সমস্যার সমাধান বের করা এদের আসল উদ্দেশ্য নয়৷ হয় শাসকদলের সমর্থনে বা তাদের বিরুদ্ধাচরণ করতেই স্টুডিওতে চলে এসব নাটক!! অথচ বর্তমানের জ্বলন্ত নানান সমস্যা সমাধানের নোতুন নোতুন ভাবনা বেরিয়ে আসতে পারত, যা সমাজের উপকারে লাগত৷
বেশীরভাগ আলোচনার টেবিলে ডাক পান নির্দিষ্ট কিছু ব্যষ্টি বা বাছাই করা তিন চারটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিগণ৷ সঞ্চালকদের বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ণের জবাব এঁরা এমনভাবে দিতে থাকেন বা কথাবার্তা বলেন যেন এঁরা সবজান্তা! যে সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিগণ সাধারণত উপস্থিত থাকেন তাঁরা অতীতে বা বর্তমানে রাজ্যে ক্ষমতায় ছিলেন বা আছেন, আবার কেউ কেউ অন্যত্র ক্ষমতাসীন৷ কিন্তু তাঁদের কথাবার্তা শুনলে মনে হবে এসব সমস্যা ইতিপূর্বে কোনোদিন ছিল না বা অন্য কোথাও নেই৷ তার উপরে নতুন একধরনের কথা ইদানিং সঞ্চালকগণ প্রায়ই বলেন - চ্যানেল কর্তৃপক্ষ কোনো দায় নেবে না, অথচ এমন কিছু কথার অবতারণা করবে যা মানুষের মনকে বিভ্রান্ত বা বিচলিত করবেই৷ পরে দেখা যায় ওসব ঘটনা (রটনা) ছিল সর্বৈব মিথ্যে৷ সম্প্রতি কলকাতায় ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক ও পৈশাচিক ঘটনার পরে বিভিন্ন চ্যানেলের দেওয়া বিবরণ বর্তমানে বিচার চলাকালীন যেসব তথ্য বেরিয়ে আসছে তাতে যথেষ্ট গরমিল দেখা যাচ্ছে৷ এগুলো সংবাদ মাধ্যম সম্বন্ধে মানুষের মনে বিরূপ প্রভাবই ফেলছে৷
দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিসরে সংবাদ মাধ্যমের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে৷ কিন্তু বর্তমানে এদের কাজ দেখলে মনে হবে না এরা দায়িত্বশীল কোনো ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত৷ একপেশে সংবাদ পরিবেশন করা হয় প্রায়শই৷ যাঁদের কাছ থেকে সমস্যা সমাধানের নোতুন ও বাস্তবসম্মত পন্থা পেতে পারে সমাজ তাঁদের এসব আলোচনার টেবিলে ডাকাই হয় না৷ তাহলে প্রতি সন্ধ্যায় ঘটা কর ‘ঘণ্টাখানেকের’ মত এইসব অনুষ্ঠান করার মানে কী? সাধারণ মানুষের মনকে বিভ্রান্ত করে দেওয়াই কী সংবাদ চ্যানেলগুলোর মূল লক্ষ্য? অথচ সমাজের জন্য অনেক ভালো কিছু করা যেতে পারে৷ কিন্তু পুঁজিপতি চ্যানেল মালিকরা সত্যিই কি দেশ ও দেশবাসীর সমস্যা সমাধানে আন্তরিক !!
নারী নির্যাতনের ঘটনা আজও একটি জ্বলন্ত সমস্যা আমাদের দেশে৷ রামমোহন, বিদ্যাসাগরের দেশে আজ ও নারীরা অত্যাচারিত৷ নারী নির্যাতন প্রসঙ্গে বহু আলোচনা ইতিপূর্বেই টিভিতে সান্ধ্যকালীন টকশোতে মানুষ শুনেছে, কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হয়নি৷ আজও পনপ্রথার বলি হতে হয় অনেক মেয়েকেই৷ যৌন লাঞ্ছনার শিকার বা ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে৷ শুধুমাত্র আইন করে বা শাস্তি দিয়ে এই পাপ দূর হবার নয়৷ আলোচনার টেবিলে যাঁরা বসেন তাঁরা সমস্যার গভীরে গিয়ে সমাধানের পথ হয় জানেন না নতুবা রাজনৈতিক তরজা করতেই তাঁরা বেশী দক্ষ৷ অথচ বহু বছর আগেই প্রাউট দর্শনের প্রবক্তা তথা মহান দার্শনিক ঋষি শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার নারীদের বহুবিধ সমস্যার সমাধান দিয়ে গেছেন,যা তাঁর গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা আছে৷ তিনি বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন কেন নারীদের উপর অত্যাচার সংঘটিত হয়ে থাকে ,আর কিভাবেই বা এথেকে পরিত্রাণ সম্ভব৷ শুধু ব্যাখ্যা করেই তিনি থেমে থাকেন নি, গড়ে তুলেছেন বিশ্বব্যাপী সংঘটন ‘গার্লস প্রাউটিস্ট’৷ চ্যানেল কর্তৃপক্ষ আজ পর্যন্ত নারী নির্যাতন বা এই জাতীয় সমস্যা বিষয়ক আলোচনায় কখনও ডাকেন নি বা ডাকবার প্রয়োজন বোধ করেনি গার্লস প্রাউটিস্ট নামক সংঘটনের কোনো সদস্যাকে৷ ঐসব চ্যানেল কর্তৃপক্ষ কী ধরেই নিয়েছেন নারীদের সমস্যার সমাধান তথাকথিত ঐ তিন- চারটি রাজনৈতিক দল করে দেবে ,নাকি তাদের টিকি অন্যত্র বাঁধা আছে? নোতুন পথের সন্ধান যাঁরা দিতে পারেন তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো না হলে ক্ষতি নির্যাতনের শিকার যাঁরা, তাঁরাই৷ ক্ষতি সমাজের৷ গার্লস প্রাউটিস্ট সদস্যাগণ নিজেদের মত করে সামাজিক অপরাধগুলোর সমাধানের পথ বাতলে দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছেন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে৷ টিভির টকশো তে বলবার সুযোগ মিললে বহু শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ একসঙ্গে জানতে পারতেন সমাধানের উপায়৷ এতে লাভ হতো অসংখ্য নির্যাতিতার, উপকৃত হ’ত সমাজ৷
- Log in to post comments