পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক কাঠামোয় যান্ত্রিকীকরণের সমস্যা ও সমাধান

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

বস্তুতঃ উন্নত ধরণের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার অর্থই দ্রুত যান্ত্রিকীকরণ৷ প্রাচীনপন্থীরা এই যাত্রিকীকরণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে মুখর৷ মোদ্দা কথাটা এই যে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক কাঠামোয় যাত্রিকীকরণের অর্থ-ই জনসাধারণের অধিকতর দুঃখ---অধিকতর বেকারী৷ এজন্যেই প্রাচীনপন্থীরা এর বিরোধী৷ পুঁজিবাদকে না হটিয়ে জনকল্যাণ করতে গেলে যান্ত্রিকীকরণের বিরোধিতা করতেই হবে৷ কারণ যন্ত্রের উৎপাদিকা শক্তি দ্বিগুণ বেড়ে গেলে মনুষ্য শক্তির প্রয়োজন ঠিক অর্ধেকে নেবে যায়, আর তাই পুঁজিবাদীরা তখন ব্যাপকভাবে কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই করে৷ অল্পসংখ্যক আশাবাদী বলতে পারেন, অবস্থার চাপে পড়ে মানুষ এই উদ্বৃত্ত শ্রমিক দলকে ভিন্ন কাজে নিয়োগ করবার উপায় খুঁজে বেরে করবে আর এই উপায় খুঁজবার প্রচেষ্টাই বৈজ্ঞানিক প্রগতিকে ত্বরান্বিত করে দেবে৷ সুতরাং পুঁজিবাদী কাঠামোতে যান্ত্রিকীকরণের ফল আসলে ভালই৷ এমতটা কিন্তু বাজে না হলেও বাস্তবোচিত নয়৷ কারণ দ্রুত যান্ত্রিকীকরণের ফলে যত শীঘ্র মানব-শ্রম উদ্বৃত্তে পরিণত হয় তত শীঘ্র তাদের কাজে নিয়োগের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় না৷ উদ্বৃত্ত শ্রমজীবীরা অনাহার ও দারিদ্র্যের ফলে তিলে তিলে ধবংস হয়ে যায়৷ তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক চুরি-ডাকাতি, দুশ্চরিত্রতা ও বিভিন্ন ধরণের সমাজ-বিরোধী কার্যের সাহায্যে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে চেষ্টা করে৷ এ অবস্থাটা নিশ্চয়ই বাঞ্ছনীয় নয়৷ কিন্তু সামূহিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এ জাতীয় প্রতিক্রিয়া ঘটবার অবসর নেই৷ সেখানে যান্ত্রিকীকরণের অর্থ কম স্বাচ্ছন্দ্য< যন্ত্রের উৎপাদিকা শক্তি দ্বিগুণ হয়ে গেলে শ্রমিকদের কাজের সময়(working hours) অর্ধেক হয়ে যাবে৷ অবশ্য কাজের সময় কমানো পণ্যের চাহিদা ও শ্রমশক্তির দিকে চেয়েই করতে হবে৷
বিজ্ঞানের শুভ প্রয়োগের দ্বারা সামূহিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় মানুষের কল্যাণই হবে৷ এমনও হতে পারে যে যান্ত্রিকীকরণের ফলে হপ্তায় পাঁচ মিনিটের বেশী কাউকে মেহন্নত করতে হবে না অন্নবস্ত্রের চিন্তায় সর্বদা ব্যস্ত থাকতে না হওয়ায় তার মানস তথা অধ্যাত্ম-সম্পদের অপচয়ও হবে না৷ খেলা-ধূলা সাহিত্য-চর্চ্চা তথা অধ্যাত্ম-সাধনায় সে অনেক বেশী সময় ব্যয় করতে পারবে৷

উৎস

অজকের সমস্যা বই থেকে