ফ্যাসিষ্ট শোষণের ভয়াবহ রূপ এই উন্মত্ত বর্বরতা

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

আর একটি দানবীয় নিষ্ঠুরতা প্রত্যক্ষ করলো পশ্চিমবঙ্গের মানুষ৷ না, এই দানবীয় হত্যাকাণ্ড রামপুরহাটের বগটুইয়ে প্রথম নয়৷ হয়তো বা শেষও নয়৷ ঘটনার পর যা হয়ে থাকে রাজনৈতিক দলগুলোর তরজা পরস্পর দোষারোপ সবই চলছে৷ কিছু দিন পরে এও ঠাণ্ডা হয়ে যাবে৷ রাজনীতির কারবারিরা অপেক্ষা করতে থাকবে আর একটা বগটুই-এর জন্যে৷ শুধু এই হত্যালীলার,এই অমানবিক নিষ্ঠুরতার আসল গড ফাদার পর্দার অন্তরালেই থেকে যাবে৷

পারিবারিক কলহ, রাজনৈতিক মতভেদ ঘটনার উৎস যাইহোক প্রশ্ণ একটাই মানুষ কেন এত নির্মম নিষ্ঠুর হবে! এই নৃশংস পৈশাচিক আচরণের মধ্য দিয়ে সে কি পায়৷ ক্ষমতা, ধনসম্পদ, রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তি! হায়! মূঢ় মানুষ বোঝে না ---‘‘একের স্পর্ধারে কভু নাহি দেয় স্থান দীর্ঘকাল নিখিলের বিরাট বিধান৷’’

আসলে যে দ্বি-পদ জীবেরা এই দানবীয় ঘটনা ঘটায় তারা কেউ সমাজের তথাকথিত ওপর তলার লোক নয়, তথাকথিত অভিজাত পরিবারেরও নয়, অতি সাধারণ মধ্যবিত্ত নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের অকাল কুস্মাণ্ড৷ এই দুর্ভাগা মানুষগুলো বোঝেও না তারা কি করছে৷ কেন করছে৷ কার জন্যে করছে! ফ্যাসিষ্ট শোষকের ক্রর মানসিক শোষণের শিকার এই দুর্র্ভগা দ্বি-পদ জীবগুলো৷ এই শোষণের শিকার  রাজনৈতিক নেতারা, কবি সাহিত্যিক শিল্পী সমাজের সব শ্রেণীর মানুষই৷ কিন্তু সবাইকে দিয়ে এই নিষ্ঠুর দানবীয় ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়৷ তার জন্যে বেছে নিতে হয় সমাজের একেবারে নীচুতলা থেকে৷ বাকীদের কাজ প্রকৃত খল-নায়কদের পর্দার আড়ালে রাখা৷ মঞ্চের লড়াই---মরছে  মারছে শোষিতরাই আসলে এই অমানবিক নিষ্ঠুরতা, মূল্যবোধহীন রাজনীতি, ধর্মের নামে ব্যাভিচার শিক্ষার অঙ্গনে উশৃঙ্খলতা, সংস্কৃতির অঙ্গনে অশ্লীলতার স্রোত, সামাজিক ভেদ-বিদ্বেষ, অর্থনৈতিক বৈষম্য সবার পিছনে সেই ফ্যাসিষ্ট শোষকের অদৃশ্য অঙ্গুলী হেলন৷

এবার আসুন একটু দেখে নিই ফ্যাসিষ্ট শোষক সম্পর্কে প্রাউট প্রবক্তা পরম শ্রদ্ধেয় শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার কি বলেছেন---‘‘ফ্যাসিষ্ট শোষকরা তাদের শোষণের সুবিধার জন্যে প্রথমেই প্রাকৃতিক সম্পদপূর্ণ একটি দুর্বল জনগোষ্ঠীকে বেছে নেয়৷ ফ্যাসিষ্টদের ক্রুরদৃষ্টি যে জনগোষ্ঠীর ওপর র্নিদ্ধ হবে সেই জনগোষ্ঠীকে তারা প্রথমেই চেষ্টা করবে তাদের নিজস্ব সামাজিক-সাংসৃকতিক পরিবেশ থেকে উৎখাত করতে৷ এই প্রয়োজনে ফ্যাসিষ্ট শক্তি সর্বদাই ওই জনগোষ্ঠীর ওপর অন্যতর এক ভাষা ও সাংসৃকতিক পরিবেশকে চাপিয়ে দিতে চায়, যার ফলে ওই জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ব্যষ্টি মানস সহজে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে না, তার মধ্যে এক ধরণের পরাজিত মনোভাব গড়ে উঠতে থাকে৷ ওই পরাজিত মনোভাব তার তেজকে,সংগ্রামশীলতাকে ধবংস ক’রে তার মানসিকতাকে সম্পূর্ণ বিনষ্ট করে ফেলে৷ তীব্র অর্থনৈতিক শোষণের জন্যে ফ্যাসিষ্টরা ওই পটভূমিকাকে নিপুণভাবে ব্যবহার করে৷ ফ্যাসিষ্ট শোষণের প্রধান লক্ষ্য হ’ল প্রাকৃতিক সম্পদের অবাধ লুণ্ঠনের জন্যে প্রয়োজনে একটি জনগোষ্ঠীকে ইতিহাসের বুক থেকে বিলুপ্ত করে দেওয়া’’৷

আজ বাঙলায় যা ঘটছে তার পিছনেও আছে ওই ফ্যাসিষ্ট শোষক গোষ্ঠী৷ রাজনৈতিক বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ বাঙালীর অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলছে, আর তার বনজ সম্পদ, কৃষিজ সম্পদ, খনিজ সম্পদ লুটে নিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমী শোষক গোষ্ঠী৷ স্বাধীনতার আগেই বিদেশী ব্রিটিশ শাসক বুঝেছিল বাঙলার প্রাণোচ্ছ্বল যুবশক্তিকে  ধবংস না করতে পারলে দেশ শাসন ও শোষণ চলবে না৷  তাই একদিকে অর্থনৈতিক ভাবে বাঙলাকে দেউলিয়া করে দেওয়ার ও বাঙলার উন্নত শিল্প সংস্কৃতিকে অশ্লীল অসংস্কৃতির প্রবেশ ঘটিয়ে বাঙালী ছাত্র যুব সমাজের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার চক্রান্ত ব্রিটিশ ভারতেই শুরু হয়েছিল৷ ব্রিটিশ চলে গেলে দেশীয় পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী শোষক সেই ব্রিটিশের দেখানো পথেই বাঙালী জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে লুন্ঠন করে চলেছে৷

তাই রাজনীতিতে দেশবন্ধু সুভাষচন্দ্র বাঘাযতিন সূর্য সেনরা যে আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেমের উজ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছে তা থেকে দূরে সরিয়ে অশ্লীল অসংস্কৃতির স্রোত বহিয়ে ভাতৃঘাতীর রাজনীতির খেলায় মাতিয়ে দিয়েছে ঐ দেশীয় সাম্রাজ্যবাদী শোষকরা৷ রামপুরহাটের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়তো হবে,অপরাধীরা হয়তো সাজাও পাবে৷ ঘটনার পরে পরেই যেভাবে মুখ্যমন্ত্রী ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন তাতে এটুকু আশা রাজ্যবাসী করতে পারে৷ কিন্তু তাতে কী এই ধরণের ঘটনা আর ঘটবে না এমন আশ্বাস কেউ দিতে পারে! কারণ আসল অপরাধীতো পর্দার আড়ালেই থেকে গেছে৷ তাদের অদৃশ্য অঙ্গুলি হেলনেই রাজনৈতিক দলগুলি চলে৷ ওই আসল অপরাধীদের খুঁজে বার করতে না পারলে এই দানবীয় নিষ্ঠুরতা থেকে বাঙলার মুক্তি নাই৷