রবীন্দ্রনাথের রসিকতা

লেখক
প্রণবকান্তি  দাশগুপ্ত

প্রখ্যাত নট শিশির ভাদুড়ি এসেছেন শান্তিনিকেতনে৷ উদ্দেশ্য রবীন্দ্রনাথের ‘গোড়ায় গলদ’ উপন্যাসটির নাট্যরূপ নিয়ে যাওয়া৷ ‘গোড়ায় গলদে’র নাট্যরূপ লেখাই ছিল রবীন্দ্রনাথ সেটা পড়ে শোণালেন৷ কিন্তু পছন্দ হলো না শিশির  ভাদুড়ির৷ রবীন্দ্রনাথ তখন নাটকটির পাণ্ডুলিপি টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেললেন৷ অবাক হলেন শিশির কুমার৷ যে রবীন্দ্রনাথের নিজের  লেখার প্রতি এত মায়া তিনি কিনা নিজের লেখা নিজের হাতে ছিঁড়ে ফেললেন৷

সেদিনই রবীন্দ্রনাথ সারারাত ধরে নাটকটি ফের নতুন করে পুরোটা লিখলেন৷ পড়ে শোনালেন শিশির ভাদুড়িকে৷ শিশির ভাদুড়ি নাটক শুণে খুশি হলেন৷

রবীন্দ্রনাথ তখন বললেন, গোড়ায় গলদ ছিল, শেষ রক্ষা হলো৷ এর নাম হোক ‘শেষ রক্ষা’৷

১৯৩৭ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি৷ বিংশ বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মিলন৷ স্থান চন্দননগর৷ প্রথম দিনের উদ্বোধনী ভাষণ ছিল রবীন্দ্রনাথের৷ বেলা বারোটায় অভিভাষণ শেষ করে রবীন্দ্রনাথ হুগলি নদীর ঘাটে তাঁর হাউস বোটে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন৷ কিছুক্ষণ বাদে অমল হোম এসে বললেন, এঁরা যা খাইয়েছে---তুলনা হয় না৷

বোটে অনিল চন্দ উপস্থিত ছিলেন৷ কবি বললেন, অনিল, তুমি তো ওখানে বলে এসেছ আমি খাব না৷ এখন শুণছ তো?

বনফুল এলেন রবীন্দ্রনাথের কাছে৷ প্রণাম সেরে তার ‘বৈতরণীর তীরে’ উপন্যাসখানা রবীন্দ্রনাথের হাতে দিলেন৷ হাসতে হাসতে কবি বললেন, ‘বৈতরণীর তীরে---আমাকে’৷