মানুষের দেহ পেলেই তাকে মানুষ বলা যাচ্ছে না৷ যুক্তি বুদ্ধির মুক্তি যেখানে নেই, নিজের সামর্থ্যকে চেতনায় বিস্তারিত করার এষণা যার নেই, বিশালকে দেখে বা অতি ক্ষুদ্র জিনিসে লুকোনো সুন্দরকে দেখে যদি সে বিস্মিত হতে না জানে, দুর্গম অজানাকে জানার অনন্ত জিজ্ঞাসা যার নেই, পরিশ্রম নেই তেমন স্বার্থপর মানুষ হ’ল অসহায় পোকার মত৷ শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস এদেরকেই বলেছেন ‘লোক না পোক’৷ এরা থাকা না থাকা সমান৷ মানুষ হিসেবে এরা ‘সামাজিক বোঝা’৷ এদের মধ্যে অনেকের তথাকথিত ডিগ্রি আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের, চাকরী বা ব্যবসা আছে, ভালো পোষাক আছে গায়ে, দুনিয়ার খোঁজ-খবরও রাখে আর তাই নিয়ে তর্ক করে৷ জীবনে কোনদিন ফুটবলে পা লাগায়নি এমন মানুষ টিভি-তে খেলা দেখতে গিয়ে হঠাৎই প্রতিভাবান মেসির অন্ধভক্ত হয়ে গেল, এখন উঠতে মেসি, বসতে মেসি, স্বপ্ণে মেসি তিনি নাকি ফুটবলের ভগবান৷ তেমনি এক মেসি ভক্ত থাকত কেরলে৷ এখন আর নেই৷ খেলা হচ্ছে হাজার হাজার মাইল দূরে রাশিয়ায়৷ কেরলের ভক্ত রাত জেগে দেখল সেই খেলা, তিন গোল খাওয়া মেসি মাঠে অসহায় পড়ে আছেন, আর তাই দেখে আর এক ভগবান মারাদোনা কাঁদছেন৷ এইসব দেখে কেরল ভক্ত লিখলঃ পৃথিবীতে আর আমার দেখার কিছু নেই আমি চললাম৷ পরদিন তার মৃতদেহ পাওয়া গেল৷ এই ত্রিশ বছরের যুবকের কেবল স্বপ্ণবিলাসী, ভাববাদই মৃত্যুর কারণ হ’ল৷ কিন্তু মেসি মরল কি? না৷ কেননা মেসিরা জন্মযোদ্ধা হয়৷ ওরা পালায় না৷ ওরাই মানুষ৷ কেরলের যুবকের মধ্যে যদি আত্মমর্যাদা থাকত, অসহায় মানুষের প্রাণীদের জন্য সেবার ভাব থাকত, কেবল ফুটবল নয়, একটা মানবিক পৃথিবী গড়ার স্বপ্ণ থাকত সে আজ অকালে ঝরে যেত না৷ এই জন্য আমাদের ভুল শিক্ষানীতিই দায়ী৷
- Log in to post comments