সাংসদ বিধায়করা দলের উধের্ব উঠে জনগণের কল্যাণের কথা ভাবতে পারেন না

লেখক
প্রবীর সরকার

লোকসভা ও বিধানসভায় যে সব প্রতিনিধি বিভিন্ন এলাকা থেকে নির্বাচিত হয়ে গেছেন তাঁরা নিজ নিজ এলাকার অভাব---অভিযোগগুলিকে আলোচনার জন্যে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপন করেন না শুধু দলীয় স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে দলাদলির বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ প্রকাশিত হচ্ছে সংবাদপত্র ও টিভিতে সেগুলিকে ধামাচাপা দিতে হৈ চৈ করে ওয়েলে নেমে হট্টগোল করে লোকসভা ও বিধানসভার নির্দিষ্ট দিনগুলি নষ্ট করেই নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন৷ নির্বাচনের পর তো ভোটারদের সঙ্গে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কোনও যোগাযোগই থাকে না৷ পশ্চিমবঙ্গের কথাই যদি বলা হয় তাহলে বলতেই হয় এ রাজ্যে শাসক দল কেন্দ্রীয় সরকারের অনুগত না হওয়ায়, বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার রাজ্যের প্রাপ্য কয়েক হাজার কোটি টাকা আটকে রেখে দিল্লী৷ অথচ এরাজ্যে ১২জন সাংসদ আছে কেন্দ্রের শাসকদলের৷ দলীয় কন্দলে বাঙলার জনগণ দুর্দশায় পড়ছে৷ রাজ্যের বিরোধী দল মজা দেখছে৷ অথচ রাজ্যের জনগণের প্রতি তাদের ও দায়িত্ব কর্তব্য আছে দলের উর্দ্ধে উঠে সে কথা ভাবতে পারে না৷

চরম দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হচ্ছে, আইন শৃঙ্খলা বলতে তো কিছুই নেই, নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তার দারুণ অভাব, চারিদিকে শুধু অভাব অরাজকতা৷ এর দায়---দায়িত্ব নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য কী ভাবছে তারও কোন আলোচনা নেই৷ লোকসভা ও বিধানসভাগুলি যখন চলে তখন দেখা যায় মন্ত্রীগণ এমনকী প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীগণ অধিকাংশ দিন অনুপস্থিত থেকে তাঁরা বাইরের নানান কাজে ব্যস্ত থাকেন৷ এদেশে শুধু প্রশাসনিক খরচের চাপ বহন করতেই দরিদ্র জনগণের দেওয়া কর শেষ হয়ে যাচ্ছে৷ মূলতঃ দেশের কতটুকু আর্থিক ও সামাজিক উন্নতি হচ্ছে লোকসভা ও বিধানসভায় নির্বাচিত প্রার্থীদের হাজির থাকাটা জরুরী বলেই জনগণ মনে করেন৷ বর্তমান লোকসভা ও বিধানসভায় কাজের দিনগুলিতে অনুপস্থিত থাকতে কিছু লোককে দেখা যায় টিভিতে৷ অধিকাংশ আসন শূন্য৷ মন্ত্রীদের অনুপস্থিতিতে প্রশ উত্তর ঠিকমত হচ্ছে না৷ এই ধরণের অবহেলাটা কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক৷ এই গুরুত্বপূর্ণ আসনগুলি ও দিনগুলি যদি অবহেলিতই হয়, তাহলে নির্বাচনে দাঁড়াবার প্রয়োজনটাই বা কেন দেখা যায় অনেকেই আলোচনায় অংশগ্রহণ না করে নিদ্রা যান৷ সভায় কী আলোচনা হচ্ছে সেটা জানার বা বোঝার প্রয়োজন নেই৷ শুধু বিরোধিতার জন্যে, সভার কাজ পণ্ড করার জন্যে তো এই সব স্থানে উপস্থিত হওয়া নয়৷

শুধু তাই নয়, লোকসভা ও বিধানসভায় সদস্যগণ যাতে নিজেদের বক্তব্য রাখতে পারেন মাতৃভাষায় তারও সু-ব্যবস্থা করা জরুরী৷ এটাকে প্রথম গুরুত্ব দিতে হবে সরকারকে৷ সবাই সুবক্তা বা বিভিন্ন ভাষায় পণ্ডিত নন, তাই আঞ্চলিক ভাষা বিশেষ করে রাজ্যভাষায় অবশ্যই বত্তৃণতা দেওয়ার সুযোগ সরকারকে করতে হবে৷ অন্য ভাষায় সেগুলির যাতে অনুবাদ হয় তার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন৷ শুধু হিন্দী বা ইংরাজীতে বক্তব্য রাখলে চলবে না, কারণ এতে বহু নাগরিক কিছুই জানতে পারেন না৷

দেখা যাচ্ছে লোকসভা বা বিধানসভা গুলিকে সরকার পক্ষ ও বিরোধী পক্ষ নিজেদের দলের কোন্দল নিয়েই অধিকাংশ সময় ব্যয় করছেন৷

এই দেশে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির আর্থিক, সামাজিক সমস্যাগুলি, সীমান্ত সমস্যার সমাধান হয়, কৃষি ও শিল্পের উন্নতি ঘটে, বেকার সমস্যা দূর হয়, বন্ধ কলকারখানা খোলে, সমবায় আন্দোলনের মাধ্যমে আঞ্চলিক ক্ষেত্রে দেশ স্বনির্ভর হয় সেগুলি দেখতে হবে৷ সারা দেশে জনগণের অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থানের সু-ব্যবস্থা হয়, ব্যাপকভাবে রেশনিং পদ্ধতিতে অল্প দামে খাদ্যের যোগান সবাই পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে৷ প্রতিটি নাগরিককে সামাজিক ও আর্থিক দিক থেকে স্বয়ং সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে দেশকে নিয়ে যাবে, তবেই তো গণতন্ত্র সার্থক হবে৷ শুধু দলবাজীতে দেশের তিলমাত্র উন্নতি হবে না, হতে পারে না৷ এই দেশের আইনসভার কাজকর্মের ও আলোচনার ছবি দুরদর্শনে দেখে নাগরিকগণ খুবই মর্মাহত ও আশাহত৷

প্রথম প্রথম দেশের নেতাগণ দেশে যেভাবে বক্তব্য রাখতেন সেটা ইতিহাসে স্থান পেত৷ আর আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলি হয়ে উঠত সার্থক৷ যত দিন যাচ্ছে দেখা যাচ্ছে বিরোধীপক্ষ আলোচনার জন্যে দাবী করলে সরকারপক্ষ নানা অছিলায় তা এড়িয়ে যান৷ সৎ রাজনৈতিক নেতা ও দেশসেবকগণ ধীরে ধীরে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন না বিভিন্ন কারণে৷ তাই লোকসভা ও বিধানসভার সেই অতীতের গাম্ভীর্য ও গুরুত্ব অনেকখানি হারিয়ে গেছে৷ এখন বর্তমানে বিভিন্ন দল যে সব প্রতিনিধিকে নির্বাচনে দাঁড় করাচ্ছে তাঁরা অনেকেই আলোচনা ও বক্তব্য রাখার ব্যাপারে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ৷ তাই দেশের সমস্যার সমাধানের জন্যে উপযুক্ত প্রতিনিধি যাতে এসে দেশের কল্যাণ করতে পারেন সেদিকে রাজনৈতিক দলগুলির নজর দেবেন এটা দেশের নাগরিকদের আন্তরিক দাবী৷ এ ব্যাপারে সাংসদ ও বিধায়কদের অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে৷ সমস্যা সমাধানের পথে সন্ধান দিয়ে তাকে সার্থক করে তোলার দিকে নজর দিতে হবে৷ তবেই দেশের মঙ্গল হবে৷