সারা রাজ্যজুড়ে ডেঙ্গু আতঙ্ক ঃ আক্রান্ত ১৮,২৩৪, মৃত্যু-৩৫

লেখক
পি.এন.এ

সারা রাজ্যজুড়ে ডেঙ্গু আতঙ্ক দেখা দিয়েছে৷ বিভিন্ন নার্সিং হোম ও হাসপাতাল থেকে  ডেঙ্গুতে মৃত্যুর খবর আসছে৷ এই প্রতিবেদন লেখার আগের দিন ৬ই নভেম্বর রাত থেকে ৭ই নভেম্বর রাত পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে ১১ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে৷ প্রতিদিনই ডেঙ্গুতে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন, মৃত্যুও ঘটছে৷

পশ্চিমবঙ্গে চিফ সেক্রেটারী মলয় দে বলছেন, এ রাজ্যের  অন্যান্য ভাইরাল জ্বরে মৃত্যুকেও ডেঙ্গু  বলে অনেকে বলছেন৷ তাঁর হিসেবে এ বছর এ রাজ্যে ডেঙ্গুতে ১৮,২৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন ও তার মধ্যে ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ তিনি বলেন গত বছর ২০,১৪০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ও মৃত্যু হয়েছিল ৪০ জনের৷

ডেঙ্গুর উৎস ও সাবধানতা

ডেঙ্গু এইডিস মশাবাহিত  রোগ৷ ডেঙ্গুর মশা দিনে কামড়ায়৷ এমনকি  একটি মশার কামড়েও  এই রোগ হতে পারে৷ খোলা পাত্রে পরিষ্কার জলে এই মশা ডিম পাড়ে৷ তাই ঘরে বা ঘরের আশে পাশে কোথাও যেন জল জমে না থাকে  এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ আর মশা থেকে সব সময় দূরে থাকার  পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷  চিকিৎসকদের পরামর্শ এজন্যে মশার ধূপ জাতীয় কিছু ও মশারীর ব্যবহার আবশ্যিক ৷ এগুলি   মশা তাড়ানোর পক্ষে ভাল৷ 

রোগ লক্ষণ ঃ ডেঙ্গুতে রোগ লক্ষণ ইনফ্লুয়েঞ্জার মত জ্বর, মাথায় যন্ত্রণা,বমি,কখনও কখনও রক্তবমিও হয়৷ এ সমস্ত রোগলক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে যেন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া হয়৷

কিছু পরামর্শ

এই মারাত্মক  ডেঙ্গু প্রতিরোধ করার জন্যে আরও কিছু পরামর্শ নিম্নে দেওয়া হ’ল৷

১) নিম তেল তুলোয় ভিজিয়ে  ঘরে কোনে জানালার কোণে রেখে দিন৷ নিম ডেঙ্গুর মশা প্রতিরোধ করবে৷

২) কয়েক ফোঁটা তুলসীর পাতার রস জলে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খাবেন, তাতে শরীরে ডেঙ্গু সহ বিভিন্ন রোগের  বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে৷

৩) রসুনের কোয়া জানালার পাশে রাখলেও  ডেঙ্গু মশা পালবে৷

৪) খানিকটা কর্পূর জ্বালিয়ে দিলে এর ধোঁয়া ডেঙ্গুর মশা তাড়াবে৷

ডেঙ্গু সারাতে পেঁপে পাতার রস

সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় উদ্ভাবিত হয়েছে যে পেঁপে পাতা ডেঙ্গুর জন্যে বেশ কার্যকরী প্রতিষেধক৷ গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে পেঁপে পাতার রসে থ্রম্বোসাইটিস (প্ল্যাটিলেট) উৎপাদনে সাহায্যকারী উপাদান রয়েছে৷   গবেষনাটির  প্রধান গবেষক ছিলেন ---AIMST  ভার্সিটির  প্রফেসার  ডক্টর এস. কাঠিরেসান৷ ডক্টর এস. কাঠিরেসান   এর মতে ডেঙ্গুর ভাইরাস মূলতঃ আমাদের রক্তে প্লেটলেট কমিয়ে দেয়৷  সাধারণত প্লেট রেটের জীবনকাল ৫ থেকে১০ দিন পর্যন্ত৷  এরপরে আবার প্রয়োজন অনুসারে নূতন প্লেটলেট উৎপাদন হয়৷

ডেঙ্গুর ভাইরাস শরীরে যতদিন কার্যকর থাকে ততদিন পর্যন্ত নতুন শরীরে নতুন প্লেটলেট উৎপাদন ক্ষমতা নষ্ট করে দিতে ভূমিকা রাখে৷ সাধারণত একজন সুস্থ মানুষের রক্তের স্বাভাবিক প্লেটলেটের  পরিমাণ হল প্রতি মাইক্রোলিটারে  ১৫০,০০০ থেকে ২৫০,০০০ পর্যন্ত ৷ ডেঙ্গু হলে  এই প্লেটলেটের সংখ্যা খুব দ্রুত কমে যেতে থাকে৷ 

তাঁর মতে , ১০০,০০০ এর নীচে প্লেটলেট লেবেল চলে এলে তা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে৷ প্লেটলেট লেবেল যদি ৫০০০০ এর নীচে প্লেটলেট লেবেল চলে আসে তাহলে থ্রমবোসাইটোপেনিয়া হয়ে যায়৷  ফলে অনেক রোগীর মৃত্যু হতে পারে৷ তাই ডেঙ্গু হলে প্লেটলেট পরীক্ষা করে দেখা হয়৷ প্লেটলেট খুব কমে গেলে জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি  করানো উচিত৷

প্লেটলেটের পরিমাণ যখন অস্বাভাবিক কমে যায় তখন রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে ও হ্যামোরেজিং হতে পারে৷ এর ফলে  শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয় ও রোগীর মৃত্যু ঘটে৷

পেঁপে পাতার রস ডেঙ্গুর প্রতিষেধক এটা নিয়ে অনেক মানুষ দ্বিমত পোষন করেছে৷ কিন্তু ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডা রিসার্চ সেন্টারে গবেষক ড্যাং -এর মতে পেঁপে পাতার রস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও তা ডেঙ্গু জ্বর খুব দ্রুত সাড়িয়ে তোলে৷ এমনকি পেঁপে পাতার রস ক্যানসার প্রতিরোধেও সহায়তা করে ৷ শ্রীলঙ্কার ফিজিসিয়ান ডাক্তার সানাথ হেট্টিগ-এর মতে পেঁপে গাছের  কচি পাতার রস ডেঙ্গুর ওষুধ হিসাবে খুব উপকারী৷  তার এই গবেষণাটি ২০০৮ সালে  শ্রীলঙ্কার জার্র্নল  অফ ফ্যামিলি ফিজিসিয়ানস এ প্রকাশিত হয়েছিল৷

যেভাবে কাজ করে ডাক্তার সানাথ হেট্টিগ এর মতে  পেঁপে পাতায়  কিমোপাপিন ও পাপেইন নামে দুটি এনজাইম আছে৷ এই উপাদান দুটি প্লেটলেট উৎপাদন বাড়ায় এবং  রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে৷  এছাড়াও এগুলো ডেঙ্গুর  কারণে লিভারে কোন ক্ষতি হয়ে থাকলে সেটা ঠিক হতে সহায়তা করে৷  এছাড়াও পেঁপে পাতায় আছে  প্রচুর পরিমাণে কমপ্লেক্স ভিটামিন  যা বোনম্যারোকে  প্রচুর পরিমাণে প্লেটলেট উৎপাদন করতে সহায়তা করে৷

যেভাবে খেতে পারেন৷

ডাক্তার সানাথ হেট্টিগ-এর মতে  পেপে পাতার  রস খেতে হতে হলে  মোটামুটি কচি পাতা বেছে নেওয়া উচিত এরপর এই পাতা খুব ভাল করে ধুয়ে ব্লেন্ডারে অথবা বেটে রস বের করে ছেঁকে নিতে হবে৷  এর সঙ্গে কোনো চিনি কিংবা লবণ দেওয়া যাবে না৷ প্রাপ্ত বয়স্কদের দিনে দু বার ৮ঘন্টার বিরতি দিয়ে  ১০ মিলি লিটার পরিমাণ পেপের রস খাওয়া উচিত৷  ৫ থেকে ১২ বছর বয়সীদের ৫মিলি লিটার পেঁপে পাতার রস খাওয়া উচিত৷

কখন খেতে হবে

ডাক্তার সনাথ হেট্টিগের মতে ডেঙ্গু জ্বর হলেই পেঁপে পাতার রস খাওয়া  উচিত৷ রক্তের প্লেটলেট লেভেল ১৫০,০০০ এর নিচে নামতে শুরু করলেই পেপে পাতার রস দুই বেলা করে খাওয়া শুরু  করতে হবে৷ তবে সেই সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শে অন্যান্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা  সেবাও নিতে হবে৷