শীর্ষ আদালতের রায় --- সংবিধানের ভিত্তিভূমি সমাজতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষতা

লেখক
প্রভাত খাঁ

ভারত যুক্তরাষ্ট্রের দলতান্ত্রিক সরকারগুলি ৭৭বছর ধরে চলেছে নিছক দলীয় স্বার্থেই তারা গরিব জনগণের জন্য তিলমাত্র ভাবে না৷ কারণ এরা ধণতন্ত্রের ধনীদের নিয়েই তাদের কারবার৷ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোদিজী তো ঘোষণাই করেছেন যে নাকি কয়েক কোটি মহিলাকে লক্ষপতি থেকে কোটিপতি করবেন৷ আর তৃতীয়বারে সর্বদাই তিনি এমনভাব দেখাচ্ছেন যে তিনি হলেন সবচেয়ে উপযুক্ত একজন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেশের ভাগ্যবিধাতা!

তাই তিনি সংবিধান দিবসে একাধিকবার মহান সাংবিধানটিকে নিয়ে যে সব আচরণ করে চলেছেন সেইগুলি অতীব বেআইনি ও দৃষ্টিকটু আর সংবিধান বিরোধী কাজ৷ গত ২০২৩ শে ২৬শে নভেম্বর নূতন সাংসদ ভবন উদ্বোধনের সময় প্রত্যেক সাংসদকে স্মারকহিসাবে একটি করে সংবিধানের কপি উপহার দেন৷ তাতে ১৯৭৬ সালে ভারতের সংবিধানে ৪২তম সংবিধান সংস্কারে উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ সেকুলার শব্দটি ছিল না৷

আবার ২০১৭ সালের ৬৬তম সংবিধান দিবসে সংবাদপত্রে একটি বিজ্ঞাপন হয় তাতে প্রস্তাবনায় যে দুটি শব্দ ছিল সেই সেকুলার ও সোসালিজম’ শব্দ দুটি ছিল না৷ গত ২১শে অক্টোবর ২০২৪শে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা যেটি বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ সমর্থক গণ করেছিলেন তাতে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন যে সংবিধানে ‘‘সেকুলারিজম ও সোসালিজম’’ শব্দ দুটি হলো সংবিধানের ‘বেসিক স্ট্রাকচার’ কারণ গণতান্ত্রিক শাসনে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা দুটি শব্দই অতীব গুরুত্বপূর্ণ৷ এই দুটি শব্দকে কখনোই অস্বীকার করার উপায় নেই৷ তাই মামলা আবেদনকারীদের পরাজয় হয়৷ অত্যন্ত লজ্জারও দুঃখের কথা হলো বিজেপির মোদিজী সরকার বেশী গুরত্ব দেয় ভারতের দলীয় শাসকগণ ১০০ বার সংবিধান সংশোধন করেছেন মাত্র ৭৭ বছরে দলের স্বার্থে৷

আমেরিকার সংবিধান কয়েক শত বৎসরের৷ সেখানে সংবিধান সংশোধন হয়েছে মাত্র তিনবার৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসকগণ সংবিধানের প্রতি কতটা শ্রদ্ধাশীল ও সংবিধানকে কতটা মান্যতা দেয় এটা তারই প্রমাণ৷ আর ভারতীয় শাসকবর্গ সংবিধান অপেক্ষা দলীয় স্বার্থকে বড় করে দেখে তারা দলের স্বার্থে ও ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে সংসদে সংখ্যা গরিষ্ঠতার জোরে ইচ্ছামত সংবিধান সংশোধন করে৷

এরা বাবা সাহেব আম্মেদকরের সভাপতিত্বে তৈরী সংবিধানকে কোনরূপ মান্যতা দেয় না৷ প্রকৃত গণতন্ত্রে সংসদে বিধানসভায় শাসক দলগুলি ক্ষমতার জোরে বিরোধী দলগুলিকে কোন মান্যতাই সংযত হয়ে শাসন চালাবার বড়ই অভাব৷

তাই পরিশেষে বলি, একটি কথা সেটা হলো নাগরিকগণকে আরো সচেতন হতে হবে ও সংবিধানকে মর্যাদা দিয়ে যাতে দেশ শাসিত হয় ও শাসকদল দলবাজি ছেড়ে যাতে সকল নাগরিকদের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল করে তার জন্য নির্বাচনে সৎনীতিবাদী সমাজসেবকদের নির্বাচিত করতে হবে৷ শুধু অন্ধ হয়ে এইসব দলের স্তাবকতা করলে দেশ ও দশের দুর্দশার সীমা থাকবে না৷ ও জনগণের জন্য আর দলতন্ত্র হলো দলের জন্য দলের দ্বারা ও মনে রাখতে হবে গণতন্ত্র হল জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা নির্বাচনের সময় তাঁদের অত্যন্ত সচেতন হতেই হবে৷