খবরের কাগজে গতানুগতিক খবরের আড়ালে কিছু অনুপ্রেরণামূলক খবর মাঝে মধ্যেই বেরোয় যেগুলো আমার মত অনেকের মনেই বেশ আশার সঞ্চার করে৷ এমনই একটি খবর বেরিয়েছিল ১৭ই সেপ্ঢেম্বর ‘‘একটি বহুল প্রচারিত’’ সংবাদপত্রের (পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম পাতায়) ১৬ নং পৃষ্ঠায়৷ ‘চাকরি ছেড়ে জৈব কেঁচো সার তৈরি করে নজর কেড়েছেন কাঁথির সুনন্দন---এই শিরোনামে খবরটিতে আমার চোখ আটকে গেল৷ খবরটি পড়ে জানতে পারলাম চাকরির এই দুর্মূল্য বাজারে বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত কাঁথির দেশপ্রাণ ব্লকের প্রত্যন্ত চণ্ডীভেটি গ্রামের বছর চল্লিশের সুনন্দন শাসমল এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন৷ তাঁর এই প্রচেষ্টাকে প্রথমেই সাধুবাদ জানাই৷ যথেষ্ট মনের জোর না থাকলে চাকরি ছেড়ে দিয়ে শূন্য থেকে এভাবে শুরু করে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হওয়া সহজ কথা নয়৷ সত্যি বলতে কি ঘটনমূলক বা ইতিবাচক এই খবরগুলির জন্যই আমি খবরের কাগজ পড়ি৷
বর্তমানে কৃষিকাজে অত্যধিক পরিমাণে রাসায়নিক সার ও নানান কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা দিন দিন কমছে৷ এই অবস্থায় কৃষিবিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদগণের পরামর্শ রাসায়নিক সারের ব্যবহার যতটা সম্ভব কমিয়ে জৈব সার জৈব কীটনাশকের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য৷ কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় শুরু হয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে জৈব সার ব্যবহার করে চাষাবাদ করা৷ ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে৷ উৎপন্ন ফসলের গুণগত মানও ভালো৷ তবে ব্যাপকভাবে ব্যবহার এখনও শুরু হয়নি৷ অনতিবিলম্বে কৃষি কাজে জৈব সারের ব্যবহার না বাড়ালে ভবিষ্যতে সমূহ বিপদ অপেক্ষা করছে আগামী প্রজন্মের জন্য৷ সেদিক থেকে সুনন্দন এর উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য৷
কৃষিকাজে সার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান৷ জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে এটি সহায়তা করে৷ সেকারণে জৈব সার উৎপাদন প্রক্রিয়া কে ‘‘কৃষি সহায়ক শিল্প’’ বলতে পারি৷ কাঁথির সুনন্দন নিজ উদ্যোগে জৈব সার উৎপাদন করে যেমন নিজে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হয়েছে তেমনি তার এই প্রচেষ্টার ফলে পরিবেশেরও যথেষ্ট উপকার হচ্ছে বা পরেও হবে৷
সুনন্দন এর এই প্রচেষ্টা কে দেখে মনে হয়েছে রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়ে বাঙলার ব্লকে ব্লকে গ্রাম বাঙলার কর্মহীন যুবকদের নিয়ে যদি সমবায় পদ্ধতিতে জৈব সার উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে অনেকের আয়ের একটা ব্যবস্থা হত৷ এজন্য তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ও প্রথম পর্যায়ে আর্থিক সহায়তার দিকটাও সরকারকে দেখতে হবে৷ জৈব সারের চাহিদা দিন দিন বাড়বেই৷ এরসাথে কর্ষকদের (চাষীদের) মধ্যে প্রচার চালাতে হবে জমিতে জৈব সার ব্যবহারের উপকারিতার কথা৷ জৈব সার তৈরির কাঁচামাল পাওয়া খুব সমস্যার হবে না৷ প্রয়োজন কর্র্মেদ্যোগী যুবকদের৷ কাঁচামাল সংগ্রহ,সার উৎপাদন করা, প্যাকেট জাত করে বিপননের কাজ এসবই সামবায়িক প্রচেষ্টায় ভালোভাবেই হতে পারে৷
সমবায় পদ্ধতিতে ‘‘কৃষি সহায়ক’’ এই শিল্প গড়ে উঠলে কর্মহীন যুবকদের কর্মসংস্থানের একটা ব্যবস্থা যেমন হবে, কৃষিকাজেও তেমন একটা পরিবর্তন আসবে৷ তবে সমবায়ের সাফল্য নির্ভর করবে অবশ্যই সদস্যদের আন্তরিকতা, পারস্পরিক সহযোগিতা, নৈতিকতা ও উদ্যমের উপর৷ প্রথম দিকে ব্লকের শহরাঞ্চল এর কাছাকাছি গ্রামীণ এলাকায় এই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, যেখানকার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো৷ আমার বিশ্বাস সাফল্য আসবেই৷
বাংলাদেশী নামে উদ্বাস্তু হিন্দু বিতাড়ণ
বর্তমানে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি কি ভুলে গেছেন বিশেষ করে বর্তমানে যে মানুষগুলি দেশে ৮০ বছরের ঊর্দ্ধে, তাঁরা আজও কি ভাবনা চিন্তা করেন! সেই মানুষগুলি কিন্তু অতীতের অখণ্ড ভারতবর্ষকে ভোলেননি৷ বা ভুলতেই পারেন না৷ তাঁদের সবচেয়ে বড়ো প্রশ্ন একটাই যে তাঁদের সময়েই অখণ্ড ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য নেতা ও নেত্রীগণ জীবনমরণ পণ করে আন্দোলন করেন ও প্রাণ বিসর্জন করেন৷ কিন্তু সেই অখণ্ড ভারতবর্ষকে টুকরো করে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে পাকিস্তান ও ভারতযুক্ত রাষ্ট্রে গড়ে ওঠে৷ পাকিস্তান হয় পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান আর ডানাহীন হয়ে পড়ে ভারত যুক্তরাষ্ট্র৷
অর্র্থৎ পূর্ব পাকিস্তান নাম হয় পূর্ব বাংলার আর পশ্চিম পাকিস্তান নাম হয় পশ্চিম পঞ্জাব, সিন্ধু, বালুচিস্তান, উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ নিয়ে৷ বোটাবুটিতে দেখা গেল পূর্ব পাকিস্তানের লোকসংখ্যা পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়ে বেশী৷ তবু ঢাকা রাজধানী না হয়ে মিঃ জিন্নার চাপে রাজধানী হয় ইসলামাবাদ পশ্চিমে৷ আর রাষ্ট্রভাষা, বাংলা না হয়ে হয় ঊর্দ্দুভাষা৷ যে উপসর্গটি ক্যান্সার রোগের মতো পাকিস্তানে চেপে বসে তা হলো অন্ধ গোঁড়া কট্টর ইসলাম ধর্মমতের৷ যার জন্য আজও অমুসলমানগণ পাকিস্তান বিশেষ করে হিন্দু ধর্মমত অবলম্বীগণ৷ নরনারী শিশু নির্বিশেষে লক্ষ লক্ষ হতভাগ্যদের একবস্ত্রে অমানবিক নির্যাতন করে তাঁদের জমি জমা, বাড়িঘর, সব কেড়ে নিয়ে উদ্বাস্তু করে দেশ ছাড়া করে৷ সেই পূর্ব পাকিস্তান থেকে যাঁরা পূর্বভারত ও ভারতের বিভিন্ন রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়েন, ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল ঘোষণা করেন যে পাকিস্তানের সংখ্যা লঘুদের আশ্রয় দেবে ভারতযুক্তরাষ্ট্র৷ সেটাতে নেহেরু লিয়াফৎ চুুক্তিও হয়৷ সেই অনুসারে পশ্চিম পঞ্চাবের উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন হয়৷ কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান থেকে যারা এসেছিলেন তাদের অনেকেরই অদ্যাবধি পুনর্বাসন হয় নি৷ তাঁরা সবাই ছিলেন অখণ্ড ভারতবর্ষের সন্তান৷ পরে পূর্ব বাংলার (পূর্ব পাকিস্তানের) সেখ মুজিবর রহমান নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করে বিশেষ করে বাংলাভাষা আন্দোলন করে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম দেন গত ১৯৭১ সালে তা হলে বাঙালী উদ্বাস্তুরা বাংলাদেশী হয় কি করে? তাঁদের তাড়ানো হবে কেন! সারা অখণ্ড ভারতবর্ষের মানুষরাই তো সেই বংশোপরম্পরা সূত্রে ভারতীয়৷ অসমে ১৯ লক্ষের মতো বাঙালীকে নাগরিকত্ত্বহীন করা হয়েছে৷ তাতে অসমবাসীরাই তো ক্ষুদ্ধ৷ অনেকেকে ‘‘ডিটেনশন ক্যাম্পে’’ রাখা হয়েছে৷
এ কেমন গণতন্ত্র? বিজেপি কি ‘ধর্ম নিরপেক্ষ’ ভারতে হিন্দু রাষ্ট্রগড়ার স্বপ্ন দেখছেন৷ দেখা যাচ্ছে--- স্বাধীন (?) হওয়ার পর এদেশের বড়ো বড়ো রাজনৈতিক দলগুলো নানা সংকীর্ণ কারণে ভেঙ্গে যেমন কংগ্রেস, জনতা দল ভেঙ্গে একাধিক আঞ্চলিক দল হয়ে বিশেষ এদের মধ্যে বিজেপি দল, ‘বাংলাদেশী ধূয়ো তুলে দেশ গরম করছে৷ তাঁদের বিতাড়িত করতে তাইতো কাজের কাজ না করে অকাজেই মেতেছে৷--- নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে নিজেদের চরম প্রশাসনিক ব্যর্থতা ঢাকতে--- সেই ‘বাংলাদেশী’ তাড়াতে আবাজ তুলেছে৷ সারাভারত আজ উত্তাল৷ অবিজেপি রাজ্যগুলি নোতুন নাগরিকত্ব আইন কে বিধানসভাগুলিতে অবৈধ বলে পাশ করিয়ে নিচ্ছেন কারণ উদ্বাস্তুরাতো অখণ্ড ভারতবর্ষেরই পিতামাতার সন্তান৷ রয়েছেন যে সরকার এখনোও সারা দেশে জাতীয় নাগরিকত্ব আইন রূপায়ণ করার সিদ্ধান্ত নেননি৷ সকলের মনে একটাই প্রশ্ন তা হলো কেবল পূর্ব বাংলার বাঙালীরাই কি বিজেপি সরকারের লক্ষ্য হলো তাড়াবার! সেখানে সব বাঙালীরাই তো আছে হিন্দু ও মুসলমান যাঁদের পূর্বপুরুষগণ অখণ্ড ভারতবর্ষেরই ভূমিপুত্র৷
হঠাৎ দেখা গেল মহারাষ্ট্রে ও বাংলাদেশী বিতাড়ণের (খেদানোর) পোস্টারে সেদিকে সমর্থনের বার্র্ত্ত দিয়েছে৷ এর মদৎ দিচ্ছে রাজঠাকরে ও অমিত ঠাকরে যিনি রাজঠাকরের পুত্র৷ তাঁদের দল হলো মহারাষ্ট্র নবনির্মান সেনা (এম.এন,এস)৷ বর্তমান মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী এর কঠোর সমালোচনা করেছেন৷ তিনি বলেন ধর্মকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখলের লড়াই আমার কাছে হিন্দুত্ব নয়৷ তাই দেখা যাচ্ছে সারা ভারত আজ খণ্ড খণ্ড রাজনৈতিক দলগুলোর নিছক অঞ্চলে অঞ্চলে রাজশক্তি কব্জায় উন্মত্ত হয়ে অতীতে ভারতবর্ষের ঐক্য ও সংহতিকে ধবংস করার আত্মঘাতী৷ বিজেপি এতে মদত দিচ্ছে৷
অত্যন্ত দুঃখের কথা দেশ ভাগ করে আমরা যে ভারত যুক্তরাষ্ট্র পাই, সেই গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক স্বাধীন ভারত দেশবাসীকে ৭৩ বছরে তিলমাত্র সেবা তো দেয়নি বরং দেশের বিভিন্ন দলের নেতৃত্বাধীন শাসকগণ সংবিধানকে প্রায় শতাধিকবার সংশোধন করে নিজেদের গদী সামলেছেন ও ধনীদের সেবাদাস হিসেবে কলঙ্কের বোঝা মাথায় নিয়েই ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছেন৷
তাই আর দেরী না করে জনগণ সজাগ হয়ে দেশকে রক্ষার কাজে সার্বিকসমাজ আন্দোলনের কাজে কিছুটা সময় দিন ঐসব স্বার্থান্ধ দলগুলির হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে৷ মোদ্দাকথা বাঙালী জনগণ হলেন অখণ্ড ভারতবর্ষেরই ভূমির সন্তান-সন্ততি৷ তাই বাঙালীদের দ্বারাই পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয় ভারত যুক্তরাষ্ট্রেরই মানবিক সহায়তায় এটা ঐতিহাসিক সত্য৷ বর্তমানে বাংলাদেশ ভারত যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র৷ বাংলাদেশী বিতাড়ণ এর মতো সংকীর্ণতা ও বিদ্বেষপূর্ণ শব্দটা বিজেপি দলের উচ্চারণ করাটাই অত্যন্ত বেমানান তাই পশ্চিমবঙ্গের জনগণ এই ধরণের জঘন্য সংকীর্ণতার তীব্র প্রতিবাদ করে৷ এদেশের বাঙালীদের মুখে অত্যন্ত বেমানান ও আত্মঘাতী উক্তি৷ দেশ ভাগটাই ছিল এক বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া কিছুই নয়৷
- Log in to post comments