মানুষ জাতের সংস্কৃতি একটাই৷ অনেক কালচারের কথা আমি মানতেই রাজী নই৷ হ্যাঁ, তবে এই মাত্র বলা যেতে পারে যে মানুষ জাতের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে নাচে-গানে উচ্চারণে তথা উৎসবাদি অনুষ্ঠানে স্থানীয় বৈচিত্র্য আছে, এই স্থানীয় বৈচিত্র্য বা আচার ব্যবহারের তারতম্যকে সংস্কৃতি গত ভেদ বলে মেনে নেওয়া চলে না ৷
মানুষের এই যে আচার ব্যবহারগত৷ স্থানীয় ভেদগুলো, এগুলো আইন কানুনের জোরে বা ডিক্টেটরী শাসন চালিয়ে দূর করা চলে না৷ আচার-ব্যবহার, ভাষা তথা অন্যান্য স্থানীয় রীতি-নীতিগুলিকে রাষ্ট্রিক ঐক্য, মানবিক ঐক্য বা জাতীয়তাবাদের নামে ধবংস করতে গেলে তার ফলে পারস্পরিক হিংসা ও অবিশ্বাসই দানা বাঁধতে থাকবে৷ যা সামূহিক জীবনকে অকল্যাণের পথেই নিয়ে যাবে৷ আমি সামাজিক সংশ্লেষণের পক্ষপাতী৷ আমার মতে মানুষ যত ঘনিষ্ঠভাবে অন্যান্য মানুষের সঙ্গে মিশবে, পৃথিবীর একটি কোণ অন্য কোণের কাছে যত বেশী এগিয়ে আসবে৷ আচার-ব্যবহারের স্থানীয় বৈশিষ্ট্যগুলি ততই পারস্পরিক মেলা-মেশার ফলে নূতনতর রূপ সৃষ্টি করতে থাকবে---বিভিন্ন বাগানের ফুল একত্রে এসে ফুলের তোড়ায় পরিণত হবে৷ তোড়ার সৌন্দর্য ফুলের সৌন্দর্যের চাইতে কিছু কম নয়, বরং বেশীই৷ ধ্রূপদ পরিণত হবে খেয়ালে, রাগসঙ্গীত পরিণত হবে কীর্তন, বাউল, ভাটিয়ালী, জারী আর দরবেশীতে বিভিন্ন দেশ বা তথাকথিত বিভিন্ন গোষ্ঠীভুক্ত মানুষেরা যদি সামাজিক মেলা-মেশা বা পারস্পরিক বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে উৎসাহ দেখায় তার ফলে অতি অল্পকালের মধ্যে এই সামাজিক সংশ্লেষণ সংসাধিত হতে পারে৷
আজকের সমস্যা বই থেকে