গুড়ুচি–গুলঞ্চ ঃ Tinospora cordifolia Miers.ঃ
পরিচয় ঃ যে আয়ুর্বেদীয় ওষুধটির নাম গুড়ুচি তাও মুথা বা কন্দের সাহায্যে চাষ করা হয়৷ তাই তাকে গুলঞ্চকন্দ বা গুড়ুচিকন্দ বলা হয়৷ কথ্য ৰাংলায় গুড়ুচি শব্দের ব্যবহার কম, গুলঞ্চ শব্দের ব্যবহার বেশী৷ হিন্দীতে গুড়ুচী বা গুরুচি দু’টি শব্দই চলে৷
গুড়ুচি–শর্করা তৈরীর পদ্ধতি ঃ এই গুলঞ্চ লতার গাঁটগুলো কেটে কেটে গরম জলে ভিজিয়ে রেখে তার পরের দিন গাঁটগুলোকে ওই জলে চট্কে নিলে জলটির রং শাদা হয়৷ তখন ওই গাঁটগুলি ফেলে দিয়ে শাদা জলকে থিতোতে দিতে হয়৷ তলানি অংশ জমে এলে ওপরের জলটাকে ধীরে ধীরে ফেলে দিতে হয়৷ ওই শাদা তলানি জমে গেলে যা হয় তাকে বলা হয় গুড়ুচি শর্করা (Sugar of guruci)৷
স্নায়ুতন্তু–স্নায়ুকোষ ও স্মরণশক্তি ৰৃদ্ধিতে গুড়ুচি শর্করা ঃ এই গুড়ুচি শর্করা আয়ুর্বেদের নানান রোগের ঔষধ৷ স্নায়ুরোগের ভাল ঔষধ এর থেকে তৈরী হয়৷ যে সব ছাত্রের স্নায়ুতন্তু ও স্নায়ুকোষ কিছুটা দুর্বল, পরীক্ষার সময় মাথা ঘোরে, রাত জেগে পড়তে গেলে অসুখ করে যায় অথবা যাদের পরীক্ষার সময় হঠাৎ স্মরণশক্তি কমে যায়, তাদের বিভিন্ন অনুপান সহ এই গুড়ুচি শর্করা উপকারে লাগে৷
অন্যান্য রোগে গুলঞ্চ ঃ ‘‘গুলঞ্চের ক্কাথ পান করার পরে ওই ক্কাথ জীর্ণ হয়ে গেলে ঘৃতসহ অন্ন গ্রহণ করলেও কুষ্ঠ রোগে সুফল পাওয়া যায়৷’’
‘‘গুলঞ্চের ক্কাথ মধুসহ পান করলে সর্ববিধ মেহরোগ ঙ্মপ্রমেহ বা গণোরিয়া–জননযন্ত্রের ব্যাধি বা যৌন ব্যাধিৰ দূরীভূত হয়৷’’২১
ঘৃতকুমারী– Aloe vera Linnঃ
পরিচয় ঃ ঘৃতকুমারীকে ইংরেজীতে বলে ট্টপ্তপ্সন্দ্ব, হিন্দীতে ‘ঘিউকুমার’, আরবীতে ‘মুসব্বর’৷ ঘৃতকুমারী ক্যাক্টাস বর্গীয় গাছ৷ পাতার আকৃতি নীরেট, আনারস পাতার মত, কিন্তু ফুটো ফুটো৷ এই ফুটো পাতার ভেতরে যে রস থাকে সেটিই ঔষধার্থে বিশেষভাবে ব্যবহার্য৷
স্নায়ুরোগে ও শিরোরোগে ঘৃতকুমারী ঃ ঘৃতকুমারী স্নায়ুরোগ ও শিরোরোগের ঔষধ৷ মিশরির সঙ্গে ঘৃতকুমারী (রস বা শাঁস) উন্মাদের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়৷ ঘৃতকুমারীর রস ছাগলের চামড়ায় বা উটের চামড়ায় রেখে রোদে শুকিয়ে যে শুকনো মুসব্বর তৈরী হয় তা হেকিমী চিকিৎসকরা কয়েকটি রোগেই ব্যবহার করে থাকেন৷ ঘৃতকুমারীর রস বা মুসব্বর থেকে এক ধরনের রসাঞ্জন তৈরী করা হত যা ঔষধার্থে ব্যবহূত হত–যা পিত্তোন্মাদ রোগে ও বায়ুরোগে (blood Pressure) ব্যবহার করা হত৷ এর পরিণামস্বরূপ শেষ পর্যন্ত ঘৃতকুমারীরই অপর একটি সংস্কৃত নাম হয়ে দাঁড়ায় রসাঞ্জন বা কপোতক৷ (পঞ্চাশ বছর পরে স্মৃতিভ্রংশ রোগে ঘৃতকুমারীর শাঁস চীনী সহ সকালে খালি পেটে সেব্য)
ভূমিকুষ্মাণ্ড বা ক্রোষ্ট্রী–Ipomoea paniculata R. Br.
পরিচয় ও প্রজাতি ঃ তোমরা ভূমি কুষ্মাণ্ড দেখেছ? এই লতানে প্রজাতির গাছটি বৃষ্টিবহুল জায়গাতে একটু বেশী জন্মায়৷ এ নিজে থেকে জন্মায়৷ এ ওলের মত দেখতে একটি বস্তু৷ কখনও কখনও তা ওলের চেয়ে অনেক বেশী ৰড় আকারের হয়৷ এই কন্দটিকে সংস্কৃতে বা ভাল ৰাংলায় বলে ভূমি কুষ্মাণ্ড, কথ্য ৰাংলায় ‘ভুই কুমড়ো’৷ ভূমি কুষ্মাণ্ড বিভিন্ন বর্ণের হয়ে থাকে৷ তবে শাদা ও কালো প্রজাতিই বেশী পাওয়া যায়৷ আয়ুর্বেদে এই কন্দটির কদর যথেষ্ট৷ আগেই বলেছি এটি জন্মায় সাধারণ বৃষ্টিবহুল জায়গায়৷ ৰাংলার সর্বত্র, উত্তর ৰাংলার জঙ্গলে, রাঢ়ের জঙ্গলে, ময়মনসিং জেলার উত্তরাংশে ও গারো পাহাড় জেলায় বন্য অবস্থায় এই কন্দ এককালে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত৷ স্নায়বিক ব্যাধি, শুক্রগত ব্যাধিতে ভূমিকুষ্মাণ্ড ঃ জিনিসটি অত্যন্ত ঝাঁঝাল৷ কাটবার সময় নাকে মুখে জ্বালা করে৷ এই ভূমি কুষ্মাণ্ড থেকে স্নায়ুগত, শুক্রগত ও স্নায়ুকোষগত অনেক ব্যাধির ঔষধ তৈরী হয়৷
ভূমি কুষ্মাণ্ডকে টুকরো টুকরো করে কেটে ছায়ায় শুকোতে দাও৷ দ্বিতীয় দিন পূর্বেকার খণ্ডগুলিতে আরও কিছু ভূমিকুষ্মাণ্ডের রস ঢ়েলে দিয়ে আবার শুকোতে দাও৷ এই ভাবে সাত দিন শুকিয়ে অতঃপর শুষ্ক ভূমিকুষ্মাণ্ডকে হামান দিস্তায় ভাল ভাবে চূর্ণ করে তা প্রত্যুষে খালি পেটে খেলে স্নায়বিক ব্যাধিতে ভাল ফল দেয়৷ এটি স্নায়ুতন্তু ও স্নায়ুকোষ উভয় রোগের ঔষধ৷
ভূমি কুষ্মাণ্ড থেকে স্মরণ শক্তির অভাব, তেজস্বিতা ও পৌরুষের অভাব, বিভিন্ন ধরণের পুরুষ ব্যাধিরও খুব ভাল ঔষধ তৈরী হয়৷
‘‘ধাতুদৌর্বল্য, যৌন অক্ষমতা ও ক্লীবতা ব্যাধির পক্ষে ভূমি কুষ্মাণ্ড–চূর্ণ একটি সুন্দর ঔষধ৷ ধাতুদৌর্বল্য, যৌন ক্ষমতা ও ক্লীবতা ব্যাধিতে ওই চূর্ণ চার আনা ( প্রায় এক চা চামচ) মাত্রায় নিয়ে তৎসহ এক তোলা (প্রায় ১২ গ্রাম) ঘৃত ও অর্দ্ধ ছটাক (প্রায় ২৮ গ্রাম*) দুগ্ধ মিশিয়ে প্রত্যহ প্রত্যুষে পান করতে হবে৷ সাধারণতঃ ২/৩ সপ্তাহের মধ্যে রোগ সেরে যায়৷’’
এটি মানুষের খাদ্য নয়, তবে এর থেকে নানান ধরনের ঔষধ প্রস্তুত করা হয়৷ স্নায়ু দৌর্বল্য, হাত–পা থরথর করে কাঁপা, বার্ধক্যজনিত দুর্বলতা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস ও শুক্রঘটিত ব্যাধিতে ভূমি কুষ্মাণ্ড মহৌষধ ঙ্মব্যবহার বিধি একইৰ৷
অন্যান্য রোগে ভূমি কুষ্মাণ্ড ঃ ‘‘রক্তচাপ রোগে ও হূদরোগে ভূমি কুষ্মাণ্ড চূর্ণ এক আনা (সিকি চামচ) কিঞ্চিৎ মধুসহ দুই বেলা সেব্য৷’’