সৎ নীতিবাদী নেতৃত্বের অভাবে স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে

লেখক
প্রভাত খাঁ

ভারতের দলতন্ত্র যার নাম দেওয়া হয়েছে গণতন্ত্র, বর্ত্তমানে সেটি খণ্ড ক্ষুদ্র স্বার্থের যূপকাষ্ঠে মহা সংকটের মধ্যে অবস্থান করছে৷ মনে পড়ে গত ১৯৭৫ সালের অভ্যন্তরীণ জরুরী অবস্থার পর কংগ্রেসী স্বৈরতন্ত্রের অবসান ঘটে৷ জনতাদলের শাসন কায়েম হয়৷ সেই সময় ছোট দলগুলো জনতা দলকে সমর্থন জানায়৷ সেই পরিস্থিতিতে দিল্লীর জুমা মসজিদের প্রধান ইমাম আবদুল্লা বুখারি সেই কেন্দ্রীয় মিলিজুলি সরকারকে সমর্থন জানিয়ে ঘোষণা করেন –‘গুলসান–ই–গুলসান’৷ অর্থাৎ পাঁচ ফুলের মিলিত সাজি৷ কিন্তু দলতন্ত্রের স্বার্থান্ধতায় সেই গুলসান শুকিয়ে মিলিয়ে যায়৷

আজ আবার কেন্দ্রের স্বৈরাচারী শাসন রুখতে বিরোধীরা জোটবদ্ধ হতে চাইছে৷ কিন্তু কংগ্রেস ছাড়া সেই জোটে আর সবাই আঞ্চলিক দল৷ প্রত্যেকেই নিজস্ব স্থানীয় ভাবাবেগ নিয়ে চলে৷ তাই কেন্দ্রে ব্যষ্টিতন্ত্র রুখতে জোটবদ্ধ হলেও জোটের সফলতা নিয়ে প্রশ্ণ থাকছেই৷ কংগ্রেস সর্বভারতীয় দল হলেও রাজ্যে রাজ্যে আঞ্চলিক দলের প্রভাবে তার গুরুত্ব অনেকটাই  হারিয়েছে৷ সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি আজ বেপরোয়া হয়ে গেছে৷ সাংসদ থেকে প্রায় ১৫০ জন সাংসদকেবহিস্কার বিশ্বের দরবারে ভারতীয় গণতন্ত্রকে কালিমালিপ্ত করেছে৷ তবে বিজেপি দলেও দলতন্ত্রকে ছাপিয়ে ব্যষ্টিতন্ত্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে৷ পশ্চিমবঙ্গ হাতছাড়া হওয়ায় সর্বভারতীয় রাজনীতিতে কম্যুনিষ্টদের  আর কোন গুরুত্ব নেই৷ এই অবস্থায় কেন্দ্রের শাসক দলের স্বৈরাচারী আগ্রাসন রোখা বিরোধী জোটের পক্ষে কতটা সম্ভব!

কিন্তু ভারতের রাজনীতিতে কেন্দ্রীয় শাসন পরিচালনায় নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে থাকে উত্তর ভারত৷ দক্ষিণ ভারত হাওয়া বুঝে সমর্থন জানায়৷ অদ্যাবধি সর্বভারতীয় দল হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে কংগ্রেস ও বিজেপি৷ সম্প্রতি দক্ষিণে কংগ্রেস কর্নাটকে শাসনে এসেছে বিজেপিকে সরিয়ে কিন্তু উত্তর ভারতে এই দল কায়দা করতে পারেনি সম্প্রতি নির্বাচনে তিন রাজ্যেই পর্যদস্তু হয়েছে৷

এটা বেশ বোঝা যায় যে পরিকাঠামোতে ভারতীয় সংসদীয় গণতন্ত্র চলছে তাতে ‘‘ট্রাডিশন’’ শব্দটাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷ দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলো একটি ট্রাডিশন নিয়ে চলেছে৷ আর উত্তর ভারতের রাজ্যগুলোও সেই তাদের মতোই প্রাচীন ধারাকে বহন করছে৷ এই ধারাটাকে কাটিয়ে উঠে এক নোতুন প্রগতিশীল চিন্তা ভাবনাকে নিয়ে এগুতে হলে যে মানসিক উন্নয়নের প্রয়োজন সেটা কিন্তু দলগুলোই নানা ফন্দি–ফিকির করে সেই পথ বন্ধ করে রেখেছে৷ আজও দেশের কোটি কোটি মানুষ নিরন্ন ও দিনযাপনের গ্লানি বহন করে চলেছে৷ প্রতিটি নাগরিকতো বাধ্যতামূলক হিসাবে ভোট দেয় না৷ তাই যেনতেন প্রকারে ভোট পর্ব সমাধা করে দলগুলো কৌশলে জিতে আসে৷ ভারতীয় সংবিধানের কিছু ত্রুটি দূর করা দরকার৷ নির্বাচনে ভোট দান করাটা আবশ্যিক হওয়া দরকার৷

কিন্তু প্রথম প্রয়োজন জনগণকে উপযুক্ত শিক্ষার দ্বারা সামাজিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সচেতন করে তোলা৷ জনগণ সজাগ সচেতন থাকলে শাসকদলের স্বৈরাচারী আগ্রাসন সম্ভব হবে না৷ কিন্তু  জনগণ সবদিক দিয়ে সচেতন হোক এটা কোন রাজনৈতিক দলই চায় না৷  কারণ প্রত্যেক  দলই জনগণকে  নিজদলের তাঁবেদার বানাতে চায় সজাগ সচেতন জনগণকে দিয়ে তা সম্ভব নয়৷ আসলে ভারতের রাজনীতিতে সৎ ও নীতিবাদী নেতৃত্বের অভাব৷ রাজনৈতিক দলগুলো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে৷ তাই রাজনীতি হতে দুর্নীতি উৎখাত করতে দরকার সৎ নীতিবাদী বিশ্বৈকতাবোধে উদ্বুদ্ধ একদল তরুণ ও তরুণী৷ যাঁরা দেশ ও দেশের স্বার্থে দলহীন গণতন্ত্রের আওয়াজ তুলেবেন ও সেই পথে এগুবেন৷ এ ব্যাপারে ‘প্রাউট’তথা প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্বের যে সদ্বিপ্র নেতৃত্বের কথা বলা হয়েছে তারাই নূতন পথ দেখাবে৷