গত রাতের ধর্মমহাচক্রে আমি বলেছি যে, কাল tempos eternal), স্বভাব nature) নিয়তি fate), যদৃচ্ছা accident), বা প্রপঞ্চ quinquelemental factors), কোনটাই জগতের মূলীভূত কারণ নয়৷ তাই এদের একটিও সাধনার লক্ষ্য হতে পারে না৷
যেমন দেখো, কালসত্তা যদি ‘স্বভাব’ বা ‘প্রকৃতি’রসঙ্গে মিলে যায় তাহলেও আমরা কোন বাস্তব বা শ্রদ্ধাস্পদ কিছু পাই না৷ আমরা তো জানি যে ‘স্বভাব’ কালের পরিধির মধ্যেই কাজ করে৷ তাতে তো নোতুন, প্রাণবন্ত বা শ্রদ্ধা করার মতো কোনো কিছুর উদ্ভব হ’ল না৷ আর যদৃচ্ছা (আসলেaccident বলে কোন জিনিসই নেই) সেও যদি ঘটে তা হয় কালের পরিধির মধ্যে৷ তাই যদৃচ্ছাতেও(কালবাহিত) নোতুনত্ব কিছু নেই৷ এটা অতিরিক্ত কোনো দার্শনিক প্রতীতিরও জন্ম দেয় না৷ আর নিয়তি আসলে অভুক্ত unquenched unsatisfied) প্রতিকর্ম ছাড়া কিছুই নয়৷ কর্ম যখন সংঘটিত হয় বা প্রতিকর্ম যখন তৈরী হয়, সে দু’টিও হয় কালের গণ্ডির মধ্যে৷ পাঞ্চভৌতিক তত্ত্ব হচ্ছে কালের আপাত কারণ apparent cause)৷ শুধু তাই নয়, যেখানেই কাল থাকবে, নিয়তি বা যদৃচ্ছা থাকবে, সেখানে প্রপঞ্চ থাকবে৷ তাই দেখা গেল এদের সম্মিলিত অবস্থাও কোনো মহত্তম কিছুর জন্ম দেয় না যাকে মানুষের জীবনের চরম লক্ষ্য বলা যায়৷
Desideratum বা পরমলক্ষ্য একটি একবচনাত্মক শব্দ৷ আমি আগেও বলেছি যে এক্ষেত্রে Desiderata এই বহুবচনাত্মক শব্দ কখনোই ব্যবহার করা যাবে না৷ Desideratum একেরই দ্যোতক৷ আর সেই এক হচ্ছেন পরমপুরুষ৷
এখন দেখা যাক পরমপুরুষ যদি প্রত্যক্ষভাবে বা জাগতিকভাবে উপরিউক্ত তত্ত্বগুলির সংস্পর্শে আসেন তাহলে কী হয়?
যদিও পরমপুরুষ কালের পরিধির বাইরে তবুও তিনি যদি কালের গণ্ডিতে আদ্ধ হন, তখন আমরা নোতুন কিছু পাই কি? পরমপুরুষ দেশ বা পাত্রেরও বাইরে কিন্তু এদের সংস্পর্শে তিনি যদি এসে গেলেন তাহলে কী হতে পারে? সেই অবস্থায় আমরা বলি যে পরমপুরুষ তারব্রহ্মরূপে এসেছেন৷ সেক্ষেত্রে তারকব্রহ্ম এক নির্দিষ্ট দিনে জন্ম নেন আর তেমনি নির্দিষ্ট দিনে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন তিনি পাঞ্চভৌতিক আধারের আশ্রয় নেন আবার তাঁর সেই পার্থিব দেহের মহাপ্রয়াণও হয়৷ এসব কোনোটাই অবাস্তব নয়৷ এখন আমরা জানি যে পরমপুরুষ বির্শ্ব্রহ্মাণ্ডের পরম নিয়ন্তা হিসেবে, পুরুষোত্তম হিসেবে নৈর্ব্যষ্টিক সত্তা৷ কিন্তু যখন তিনি দেশ-কাল-পাত্রের আপেক্ষিকতার মধ্যে এসে গেলেন তখন তিনি আর নৈর্ব্যষ্টিক সত্তা থাকলেন না৷ তখন তিনি হয়ে গেলেন বৈয়ষ্টিক সত্তা অত্যন্ত কাছের, অত্যন্ত নিকট সম্পর্কযুক্ত৷ আর তিনি হলেন আমাদের তারকব্রহ্ম৷
এখন প্রশ্ন ওঠে যে তিনি দেশ-কাল-পাত্রের সীমায়িত ন্ধনের মধ্যে ধরা দেন কেন? এর কারণ কী? এ ব্যাপারে দু’টো যুক্তি আছে--- (১) মানুষের মনীষা মানসিক স্তরে নৈর্ব্যষ্টিক সত্তার সংস্পর্শে এসে হয়তো বা তৃপ্ত , কিন্তু হৃদয় তাতে সন্তুষ্ট হয় না৷ মানুষ অন্তর থেকে চায় এমন একজনকে যিনি নিকটতর,ভাবসংবেগে পূর্ণ, মধুরতায় অভিপ্ত৷ তাই তিনি তাঁর প্রিয় সন্তানদের আনন্দ দিতে, জগৎকে প্রাপ্তির ঐশ্বর্যে ভরিয়ে দিতে আপেক্ষিক তত্ত্বের সংস্পর্শে আসেন৷ এইভাবে পরমপুরুষ তারকব্রহ্মের রূপ নেন৷ দ্বিতীয়তঃ, এই সৃষ্ট জগতে প্রতিটি স্তরে প্রগতি সম্ভব হয় সংঘর্ষ সমিতির মধ্যে দিয়ে৷ াধাবিপত্তির উপলখণ্ডের বিরুদ্ধে সংঘর্ষ করতে করতে এগিয়ে যেতে গেলে মানুষের প্রয়োজন ৌেদ্ধিক সামর্থ্যের৷ কিন্তু মানুষের দ্ধি যখন নোতুন কিছু করে’ সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অসমর্থ হয়, একমাত্র তখনই পরমপুরুষ উপায়ন্তর না দেখে বঞ্চিত ও অধঃপতিত মানব সমাজকে দিক্নির্দেশনা দেবার জন্যে দেশ-কাল-পাত্রের আপেক্ষিকতার মধ্যে আদ্ধ হন৷ এই হ’ল দু’টি কারণ৷
তাই সমাজ যখন শোষণ ও অবসাদের কবলে পড়ে, যখন সমাজে ভেদবিভেদ ও তামসিকতা প্রবল হয়ে ওঠে, তখন পরমপুরুষ মানুষের আকুলতা, তাদের ক্রন্দন, তাদের প্রাণঢালা আহ্বানে সাড়া না দিয়ে চুপচাপ থাকতে পারেন না৷ একমাত্র সেই অবস্থাতেই তিনি তারকব্রহ্ম রূপে আসেন৷ তারক মানে যিনি ত্রাণ করেন আর সেই তারর্ক্রহ্মই হলেন এই সৃষ্টজগতের াা৷ তাঁর জন্যেই ভক্তরা ‘‘াা নাম র্কেলম্’’ কীর্ত্তন করেন৷
(আনন্দবচনামৃতম দ্বাদশ খণ্ড)৷